ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া রুটে ফেরি চলাচল এক তৃতীয়াংশের নিচে

নাব্য সঙ্কট ॥ নৌপথে দুর্ভোগ বাড়ছে

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাব্য সঙ্কট ॥ নৌপথে দুর্ভোগ বাড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৩১ আগস্ট ॥ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে রাতে ফেরি চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও পদ্মা সেতুর কাজ আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে নাব্য সঙ্কটে চ্যানেল দিয়ে চলাচল করতে না পেরে রো-রো ফেরিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি পারাপার নেমে এসেছে সংখ্যার চেয়ে তিন ভাগের নিচে। সোমবার থেকে চালু রয়েছে ৫টি। বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট দুপুরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে রাতে ফেরি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, পদ্মায় অতিরিক্ত ¯্রােতের মধ্যে সেতুর কাজ চলছে। ¯্রােতের কারণে পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসানো যাচ্ছে না। ফেরিগুলো চরে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। রাতে যদি ফেরি চালু থাকে তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। সরকার চায় না পদ্মা সেতুর কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হোক। যে কারণে সেতুর নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা এড়াতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। মন্ত্রীর এ ঘোষণার পর ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ‘বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতে তীব্র ¯্রােত সৃষ্টি হওয়া, ¯্রােতের তীব্রতায় শিমুলিয়ার দুটি ফেরিঘাট ভেঙ্গে পদ্মায় বিলীন হয়ে যাওয়া, উজানে নদী ভাঙ্গণের ফলে বন্যার পানির সঙ্গে পলি বয়ে আসায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ও বিকল্প চ্যানেলের মূল পদ্মার প্রবেশমুখে বিশাল ডুবোচর জেগে ওঠায় বিকল্প চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কবে নাগাদ এ অচলাবস্থা কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্য সঙ্কটের কারণে সোমবার থেকে রো-রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না। কে-টাইপ ৫টি ফেরি দিয়ে ধারণক্ষমতার কম যানবাহন নিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। ড্রেজিং করেও স্বাভাবিক নাব্য ফিরিয়ে আনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। উজান থেকে যে পরিমাণে চর ভেঙ্গে পলি-মাটি টার্নিং পয়েন্ট দিয়ে ভাটিতে নামছে, তাকে এ চ্যানেলটিও যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিআইডাব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া নানা প্রতিকূলতার কারণে এই নৌপথে গত প্রায় আড়াই মাস ধরে অর্ধেকেরও কম ফেরি চলাচল করছে। সোমবার (৩১ আগস্ট) তা তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে এই নৌপথে ১৭ ফেরি চলাচল করে থাকে। গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। আড়াই মাসে কোন দিন ১৭টি এক সঙ্গে চলাচল করতে পারেনি। কখনও ৮/১০টি, কখনও ৫/৬টি আবার কখনও ৭/৮ ফেরি চলাচল করে আসছে। রবিবার ও সোমবার চালু রয়েছে ৫টি ফেরি। এতে উভয় ঘাটের যানবাহনের সারি ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। ঢাকামুখী খুলনার পরিবহন শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই নৌপথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যা শুরু থেকে এখনও আমাদের দুর্ভোগ কমেনি। পদ্মা নদীর গতিবিধি বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনা এড়াতে গত দুই-আড়াই মাস রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। গত ৩ সপ্তাহ হলো রাতে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করে। তাতে যানজট বেশ কমে গিয়েছিল। আবার শনিবার (২৯ আগস্ট) থেকে রাতে ফেরি পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে। এতে এই নৌপথের দুর্ভোগ সহজেই কমছে না।’ বিআইডাব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘এই তো যতই দিন যাবে ততই খারাপের দিকে যাবে। ¯্রােতের পাশাপাশি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডুবোচর। আজ ৫টা ফেরি চলাচল করছে। নাব্য সঙ্কটের কারণে রো-রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না।’ বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন অফিসার আহমেদ আলী বলেন, ‘ইস্ট্যান্ড সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত পরশুদিন অর্থাৎ ২৯ তারিখ রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এটা বলবৎ থাকবে।’ ফেরিঘাট প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘাটের অবস্থা তো ভাল থাকার কথা না। আজ ৫টা ফেরি চলাচল করছে। নাব্য সঙ্কটের কারণে ওই চ্যানেল দিয়ে রো-রো ফেরি চলাচলে উপযুক্ত না। সমস্যা হয় তো কেটে যাবে, তবে সময় লাগবে। যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হচ্ছে, তার ২শ’ গুণ বেশি পড়ছে। উজানের ৩/৪ বছরের পুরনো ওয়াটার লেভেল থেকে প্রায় ২৫ মিটার উঁচু যে চরটা, তার পুরোটা ভেঙ্গে সম্পূর্ণ মাটি নেমে আসছে চ্যানেল দিয়ে।’
×