ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে

৪ থেকে ৭৩ ডলারে মিলতে পারে করোনা ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৩০ আগস্ট ২০২০

৪ থেকে ৭৩ ডলারে মিলতে পারে করোনা ভ্যাকসিন

রশিদ মামুন ॥ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের কোন বিকল্প নেই। বলা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন প্রস্তুত হয়ে যাবে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং মানবদেহের জন্য উপযুক্ত কিনা তা যাচাই করতে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে। তবে এখন সব থেকে বড় আলোচনা চলছে, কত দাম হতে পারে করোনা ভ্যাকসিনের। একেবারে চূড়ান্ত দাম নির্ধারণ এখনও না হলেও উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যে আভাস দিয়েছে তাতে দেখা যায় চার থেকে ৭৩ ডলার পড়তে পারে ভ্যাকসিনের দাম। ভ্যাকসিনের চাহিদা, কাঁচামালের দাম, সরকারের ভর্তুকি মিলিয়ে ভ্যাকসিনের দাম একেক দেশে একেক রকম হতে পারে। বিশে^ বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯’র ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। উৎপাদনকারীরা তাদের নিজেদের মতো করে ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করছে। ভ্যাকসিন পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার আগেই দামের বিষয়ে একটি সুরাহা করার চেষ্টা করছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভ্যাকসিন বাণিজ্যের বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভ্যাকসিনের দামের কিছু পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেখানে উৎপাদনকারীদের উদ্ধৃত করে ভ্যাকসিনের দাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই দাম কতটা ঠিক থাকবে তা নির্ভর করছে আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর। সাধারণত এ ধরনের সঙ্কটে সব দেশই কমবেশি ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশও করোনা সামগ্রী আমদানিতে সব ধরনের কর অব্যাহতি দিয়েছে। বলা হচ্ছে, কোন দেশ যদি সরকারী পর্যায়ে কোন কোম্পানির কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনে সেখানে দর নির্ধারণ করবে সেই দেশের সরকার। চাইলে সরকার বিনামূল্যেও এই ভ্যাকসিন দিতে পারে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন এ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। ইতোমধ্যে এই ভ্যাকসিন কেনার জন্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে। বিশে^র এমন ৯২ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ ভাগের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে ডব্লিউএইচও এবং গ্যাভি। এই হিসেবে দেখা যায় দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি হলে এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া ভ্যাকসিন দেয়া যাবে তিন কোটি ২০ লাখ মানুষকে। বাকি ১২ কোট ৮০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এরমধ্যে একশ্রেণীর মানুষের সামর্থ্য রয়েছে ভ্যাকসিন নিজে কিনে দেয়ার। ফলে তাদের বিনামূল্যে সরবরাহের কোন প্রয়োজন নেই। আর একশ্রেণীর মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে তাদের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেয়া জরুরী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশে^ করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনে যারা তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে তাদের মধ্যে ব্রিটেনভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি এ্যাস্ট্রেজেনেকা ইতোমধ্যে তাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দাম তিন থেকে চার ডলার হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে। বিশ^খ্যাত অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিনটি আবিষ্কার করেছে। এটিই পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে সস্তা ভ্যাকসিন। দেশীয় মুদ্রায় সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৩৪০ টাকা। চীনের সিনোভ্যাক তাদের ভ্যাকসিনের দাম হাঁকছে ৭৩ ডলার। সম্প্রতি চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই ভ্যাকসিন দেশীয় মুদ্রায় দাম দাঁড়াবে ছয় হাজার ২০৫ টাকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা বলছে তাদের ভ্যাকসিনটির দাম হবে ৩২ থেকে ৩৭ ডলারের মধ্যে। এলাকাভেদে এই ভ্যাকসিনের দাম বিভিন্ন হবে। দেশীয় মুদ্রায় যা দাঁড়াবে তিন হাজার ১৪৫ টাকা। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে থাকা রাশিয়া এখনও তাদের ভ্যাকসিনের দাম প্রকাশ করেনি। রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এই ভ্যাকসিন উৎপাদনে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০টি দেশ ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। ফলে সরকারী পর্যায়ে এক ধরনের আলোচনার মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ হতে পারে। দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আমদানি করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে। ভ্যাকসিন আমদানি করা হলে কি দামে বিক্রি করা হবে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অর্থ বিভাগের আলোচনাও হয়েছে। অর্থ বিভাগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি চিঠিও পাঠিয়েছে। তবে এখনও ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। দেশের প্রসিদ্ধ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে বাজারজাত করবে বেক্সিমকো।
×