ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক সুপ্রীমকোর্টে

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ১৭ আগস্ট ২০২০

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক সুপ্রীমকোর্টে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত বর্বরোচিত ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক এখন সুপ্রীমকোর্টে। সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রবিবার জনকণ্ঠকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক রবিবার বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে পৌঁছেছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারিক আদালতে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আনা আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য রয়েছে। এ শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা আবশ্যিক বিষয়। ইতিহাসের জঘন্যতম ও বর্বরোচিত এ হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়সহ ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথিপত্র ২৭ নবেম্বর ২০১৮ সালে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে এ নথি হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। নথির মধ্যে এই হত্যা মামলার রায় ৩৬৯ পাতা এবং বিস্ফোরক আইনের মামলার রায় ৩৫৬ পাতা। আর অন্যান্য নথির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা, তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষীদের জবানবন্দী, যুক্তিতর্ক, আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, আদালতে দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তি, ট্রাইব্যুনালে দেয়া আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের হাজিরা ও দরখাস্ত। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দুটিতে রায় ঘোষণা করেন। সে হিসেবে রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হলো। ১০ অক্টোরব একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করে। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। আদালত ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন (পলাতক), হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরী জঙ্গী আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল, মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, মোঃ উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (উপস্থিত), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ। এই আসামিদের দণ্ডবিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৬ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সব মিলিয়ে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিই কার্যকর হবে। মৃত্যু পযন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের দণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে। এ মামলায় ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তারা হলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পলাতক), খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী (পলাতক), বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, আবুবকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মোঃ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মোঃ ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। তাদেরকে দণ্ডবিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডবিধি ৩০৭, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জনিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় ২০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সব সাজা একযোগে কার্যকর হবে বলে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কার্যকর হবে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ’ নেতাকর্মী। তাদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন।
×