জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং এ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নিজ এ্যাপার্টমেন্টে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে কয়েকটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘাড় ও কাঁধে ছুরির আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ফাহিম হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। যদিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য জানানো হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। খবর সিএনএন ও ওয়েবসাইটের।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক শহরের চীফ মেডিক্যাল এক্সামিনারের কার্যালয় থেকে দেয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। কার্যালয়টির এক মুখপাত্র বলেন, ‘যেভাবে ফাহিমের মৃত্যু হয়েছে তা হত্যাকাণ্ড’। মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার নিজ এ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং এ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এখনও হত্যার রহস্য জানা যায়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ফাহিমকে সর্বশেষ এ্যাপার্টমেন্টের লিফটে উঠতে দেখা গেছে। ওই লিফটে তার সঙ্গে সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরা একজনকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। লিফটটি সোজা তার এ্যাপার্টমেন্ট ইউনিটে গিয়ে থেমেছে। ওই ব্যক্তিকেই সম্ভাব্য খুনী হিসেবে ধারণা করছে পুলিশ। তারা বলছে, ‘অপরাধীর কাছে একটা স্যুটকেস ছিল। সে ছিল খুবই পেশাদার’। ওই ব্যক্তির পরনে ছিল স্যুট, হাতে গ্লাভস ও মাথায় হ্যাট। নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা সার্জেন্ট কার্লোস নিভস জানান, ওই এ্যাপার্টমেন্ট থেকেই ফাহিমের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ‘ঘটনাস্থলে আমরা খণ্ড দেহ, বিচ্ছিন্ন করা মাথা ও হাত-পা পেয়েছি’ বলেন তিনি।
ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ফাহিম। দীর্ঘ সময় ভাইয়ের কোন খোঁজ পাননি বলে মঙ্গলবার ৯১১ নম্বরে ফোন করেন তার বোন। এরপর পুলিশ এসে এ্যাপার্টমেন্টের ৭ম তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের পাশেই একটি ইলেকট্রিক করাত মেশিনের সন্ধান পায় পুলিশ। খণ্ডবিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো পাওয়া যায় পাশেই রাখা একটি প্লাস্টিক ব্যাগে। ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তার বাবা সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের, আর মা নোয়াখালীর মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম পড়াশোনা করতেন ফাহিম।
২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরে যৌথভাবে ‘পাঠাও এ্যাপ’ চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। নিহত ফাহিম সালেহ বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও ছাড়াও নাইজিরিয়ায় ‘গোকান্ডা’ নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম এ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।
ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে যে অপরাধের কথা উঠে আসছে তা আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না। হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা ছাড়া কোন কথা বা পদক্ষেপ আমাদের মনকে শান্ত করতে পারবে না’। এতে আরও বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে আমাদের আহ্বান তারা এই নৃশংস অপরাধের সবকিছু উন্মোচন করবেন এবং ফাহিমের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। ফাহিমের হত্যাকাণ্ডকে তার পরিবার অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।