ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

কখন রুখে দাঁড়াবে স্বদেশ?

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ৭ জুলাই ২০২০

কখন রুখে দাঁড়াবে স্বদেশ?

একের পর এক উইকেট পতন। সত্যি আর ভাল লাগছে না। কামাল লোহানী অতীত। দেশবরেণ্য ক্রিকেটার অধিনায়ক মাশরাফি আক্রান্ত। চট্টগ্রামের মানুষ যুদ্ধাপরাধী বিচারের অন্যতম প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী করোনা আক্রান্ত। সাংবাদিক অগ্রজ অভিভাবক আবেদ খান সপরিবারে করোনা নিয়ে লড়াই করছেন। দেশজুড়ে এমন এক করুণ আবহ। আপনি নিশ্চয়ই জানেন তারা খ্যাতিমান বলে খবর হয়েছেন। বাদ বাকি যারা আমজনতা তাদের খবর নেই কারও কাছে। এ এক দুঃসহ করুণ বাস্তবতা। কাউকে দোষারোপ করে পার পাওয়া যাবে না। আপনি যত বলেন সরকারের দোষ বা উদাসীনতা বা সমন্বয়হীনতা, আসলে তাও ঠিক না। সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। মানুষ কথা শোনেনি। এমনকি মানুষকেও ঢালাওভাবে দোষারোপ করাও অন্যায়। কিভাবে তারা মানবে? কি মানবে? কতটা মানবে? আপনার সামনে যদি দুটো পছন্দ থাকে আর আপনাকে তার একটা নিতেই হয়, আপনি কি করতেন? না খৈয়ে মরা না করোনার জন্য সবুর করা? আমার মনে হয় নিরুপায় মানুষ পরেরটা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। সবার কথা বলছি না। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের কাছে আর কোন বিকল্প ছিল না। বাদ বাকি যারা ইচ্ছে করে মরার পথ খুলেছে, তাদের কথা কি বলব? এরা জন দুশমন। এদের বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। মানুষের এক অংশ এখনও মশকরা করছে। সবাই জানেন রাজাবাজারের একাংশ লকডাউনে। জীবন ও মানুষের প্রয়োজনে এই লকডাউন। অথচ আমরা খবরে দেখছি সেখানকার জনগণের একাংশ কি করছে। তারা মধ্যরাতে অকারণে ফোন করা চাচ্ছে কোক খেতে। কারও দরকার দামী পিজজা। কারও আবদার অন্যকিছু। যেখানে খাবার বা ওষুধ ছাড়া আর কিছুর আসলেই দরকার নেই, সেখানে এই ধরনের ইয়ার্কি কি প্রমাণ করে? আমরা কি একটি সভ্য জাতি, না আমাদের হাড় মজ্জাসহ সব পচে গেছে? মানুষ এই কঠিন সময়কালে যদি এর বাস্তবতা বুঝতে না পারে তো আর কখন বুঝবে? অন্যদিকে আমরা কিন্তু রাজনীতিতে আর সমাধান পাব না। সেটা কোন দেশ পারেনি। চাল চুরি বা ত্রাণ আত্মসাতের চাইতেও বড় বিষয় নেতারা আসলে নিজেরাই এখন বিপদে। ইতোমধ্যে মন্ত্রীসহ অনেক নেতা প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা খবরে দেখেছি ডাকসাইটে কঠিন বলে পরিচিত নেতাও নীরবে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। যারা বলতেন, আমরা করোনার চাইতে শক্তিশালী, তাদের কণ্ঠ এখন মিনমিনে। চেহারায় ভয়। কারণ তারা বুঝে গেছেন বললেই কোন দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যায় না। আর উন্নয়নের মানে এই না যে দৃশ্যমান কোন সেতু বা উড়ালপুল। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য আর চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর তার প্রমাণ বলে বোঝানোর জায়গা নেই। এ যাবত কতজন ডাক্তার-নার্স আর স্বাস্থ্যকর্মী জীবন দিয়েছেন তার খবর কি আসলেই জানি আমরা? সে সব কথা মিডিয়াও আসে না। মোদ্দা কথা এখন যার যার প্রাণ তার তার হাতে। মানুষকে বাঁচতে হলে সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- এরপর আমাদের অর্থনীতি আর সামাজিক বাস্তবতা কি হবে? কারা সামাল দেবে? কারণ আমরা যেমন শুরুতে বুঝিনি করোনা কি বা দুনিয়া দেখেও শিখিনি কতটা খারাপ অবস্থা, তেমনি এখনও কেউ বুঝতে পারছে না বা মানছে না ভবিষ্যত কতটা ভয়ঙ্কর। সারা পৃথিবী একমত যে, জীবন আর আগের মতো চলবে না। লেবাননে দেখুন। ইতোমধ্যে সত্তর শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় নেমে আসা কর্মজীবী মানুষ। যারা বাসা বাড়ি বা কোথাও কাজ করতেন, তাদের বিদায় করে দেয়া হয়েছে। এরপর? তারা নিজেরাও জানে না কি হবে। এই বাস্তবতা ক্রমেই আফ্রিকা, ব্রাজিলের দিকে ধাবমান। বাংলাদেশের যে যে খাত আয় রোজগারের উৎস, সেগুলো এখন তোপের মুখে। সামনে কি হবে, কিভাবে পোশাকসহ রফতানি বাণিজ্য চাঙ্গা করা যাবে, কেউ জানেন না। এর মাঝে চলছে লড়াই তথা যুদ্ধ। কদিন আগে দেখলাম, চীন আমাদের সাবমেরিন দিয়েছে। আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে ভাল খবর। কিন্তু ভারত কি নীরব দর্শক হয়ে তা হজম করবে? ভারতের রাজনীতি বা অতীত তা বলে না। যার মানে সমস্যা আছে, সমস্যা থাকবে। আমার মনে হয় করোনা যখন চলে যাবে তখন যেসব সমস্যা দেখা দেবে, তার মোকাবিলা করার কোন পরিকল্পনা এখনও নেই। যা থাকাটা জরুরী। বলা হচ্ছে আমরা নাকি করোনার আসল পিক আপ দেখিনি এখনও। লাখ পেরুনোর পরও বলা হচ্ছে আগামী মাসে এর ভয়াবহতা আরও বাড়বে। যার মানে আমাদের কপালে আরও দুঃখ ও মৃত্যু অনিবার্য। রোজ যদি সংক্রমণ এ হারে বাড়তে থাকে এক সময় তো টেস্ট করারও কেউ থাকবে না। বাংলাদেশে সংক্রমণ বেশি অথচ টেস্ট কম। জেলা শহরেও টেস্ট হচ্ছে না। ভাবুন এগুলো শুরু হলে কি ফল হতে পারে? করোনা যে এভাবে আঘাত করবে এটা বলা হয়েছে। এটা নিয়ে উদ্বেগ শঙ্কা জানিয়েছিল বিশ্ব। কেউ কথা শোনেনি। যে সব অন্ধ গুজব রটাতো, তারা এখন আত্মগোপনে। তাদেরও ছাড়েনি করোনা। অন্যদিকে একদল অন্ধ মানুষ এখনও গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিশিষ্ট গায়িকা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার করোনা হয়েছে এমন খবরের পর তারা যে সব কমেন্ট দিয়েছে, তা কোন সভ্য মানুষ ভাবতেও পারে না। কপালের টিপ আর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়াই নাকি করোনার কারণ। এই হলো আমাদের সমাজ! কবেই পচে গেছে সবকিছু। করোনা সে সব অপবোধ ও পাপের ফল কি না, সেটা কিন্তু কেউ ভাবছে না। যে যাই বলুক বা যাই করুক এখন সময় সাবধানতার। সরকার একা পারবে না। বড় দেশগুলোও পারেনি। বাঁচতে ও বাঁচাতে মানুষকে নিয়মে ফেরানোর কোন বিকল্প না। যত তাড়াতাড়ি তা সম্ভব হবে ততোই ঘুরে দাঁড়াতে শিখবে বাংলাদেশ। [email protected]
×