পলিটেকনিকে ভর্তি নীতিমালা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তিতে বয়সের বার তুলে দেয়া ও ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় কারিগরি খাতে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) পর এবার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট পলিটেকনিক উদ্যোক্তা সমিতি (বিপিপিইএ) ও বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদ (বাকাছাপ)। গত বুধবার এক সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জানিয়েছিলেন, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধির লক্ষে এবং বিদেশ ফেরত দক্ষ কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে কোন রকমের বয়সের সীমাবদ্ধতা রাখা হবে না। মন্ত্রী বলেন, অনেক ব্যক্তির হয়ত প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা আছে কিন্তু তার প্রাতিষ্ঠানিক কোন সার্টিফিকেট নেই এবং সার্টিফিকেট না থাকার কারণে ভাল চাকরি পাচ্ছে না অথবা চাকরি পেলেও ভাল বেতন পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি যদি চায় এবং যদি তার প্রয়োজনীয় একাডেমিক যোগ্যতা থাকে তাহলে সে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারবে। মিটিংয়ে তিনি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ ৩.৫ থেকে কমিয়ে ২.৫, মেয়েদের ক্ষেত্রে জিপিএ ৩ থেকে কমিয়ে ২.২৫ করার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি ফি এক হাজার ৮২৫ টাকা থেকে এক হাজার ৯০ টাকা করার সিদ্ধান্ত দেন। রবিবার এক প্রতিবাদ লিপিতে বাংলাদেশ প্রাইভেট পলিটেকনিক উদ্যোক্তা সমিতি বলেছে, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য হটকারী ভর্তি নীতিমালা ২০২০ করা হয়েছে। এটা বাতিল করে ২০১৯ সালের ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেলী ইয়াসমিন সাক্ষরিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, সমিতি গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা তথা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থায় ভর্তির নীতিমালায় বয়স অবারিত করা ও গত বছরের ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থেকে হ্রাস করে জিপিএ ২.৫০ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে আত্মঘাতী ও হটকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তা কারিগিরি শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। টিএমইডি, ডিটিই, বিটিইবিসহ মাঠপর্যায়ের অংশজনদের সমন্বয়ে গঠিত ভর্তি কমিটির সুপারিশ ও নীতিমালা উপেক্ষা করে কোন প্রকার স্ট্যাডি না করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় একতরফাভাবে হটকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তিতে বয়সে বাধা তুলে দিলে সরকারী পলিটেকনিক এর শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে ও বয়সের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারসাম্য হাড়াবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই হটকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত শিক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনকে অশান্ত করে তুলেছে। দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক এবং সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যা বর্তমান পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে পারে। এদিকে নীতিমালা ২০২০ বাতিল করে ২০১৯ সালের ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদ (বাকাছাপ)। পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ মেহেদী হাসান ও সদস্য সচিব সাইফুল আলম মোল্লা এক প্রতিবাদ লিপিতে বলেছেন, মন্ত্রণালয় যে আত্মঘাতী ও হটকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তা এ শিক্ষাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থায় বয়সে বাধা তুলে দিলে শিক্ষার পরিবেশ কুলসিত হবে ও বয়সের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারসাম্য চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। সংগঠনটি মনে করে সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু কর্মকর্তা মন্ত্রী মহোদয়কে বিভ্রান্ত করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জাতির পিতার নির্দেশিত পথে গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে চাচ্ছে দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে, সেখানে এই সকল কর্মকর্তা তাকে ভেতর থেকে ছুরিকাঘাটত করে এ শিক্ষাকে ধ্বংস করতে তৎপর রয়েছে।