ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মহামারী-১ লাখ ১০ হাজার ডিজিটাল লোকেশন ম্যাপিং চিহ্নিত

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৪ জুন ২০২০

করোনা মহামারী-১ লাখ ১০ হাজার ডিজিটাল লোকেশন ম্যাপিং চিহ্নিত

ফিরোজ মান্না \ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী শুরুর দিকে সারাদেশে এক লাখ ১০ হাজার ডিজিটাল লোকেশন ম্যাপিং চিহ্নিত করা হয়েছে। ম্যাপিং কার্যক্রমে তরুণ তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা লোকেশন গুগল ম্যাপ ও ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো যুক্ত করেছেন। ‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ’ নামক ক্যাম্পেনের মাধ্যমে এই ম্যাপিং কার্যক্রম চলছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ম্যাপিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এটুআই (এ্যাক্সেস টু ইনফর্মেশন) ও গুগলের সমন্বয়ে বেসরকারী টেলিকম অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ম্যাপিং কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে ৫ হাজার হাসপাতাল, ১৬ হাজার ফার্মেসি, ২০ হাজার গ্রোসারি স্টোর ম্যাপে সংযুক্ত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ’ উদ্যোগের মাধ্যমে সারাদেশের তরুণরা ঘরে বসে গুগল ম্যাপ এবং ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে তাদের আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পিনপয়েন্ট করার সুযোগ পেয়েছে। বর্তমান করোনা সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিটি দেশের ভৌগোলিক ম্যাপিং হালনাগাদ করা খুবই জরুরী। কারণ হাসপাতাল, স্থানীয় পণ্যের বাজার, রিচার্জ পয়েন্ট, নগদ বিকাশ পয়েন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান ম্যাপে পয়েন্ট করা হযেছে। ঢাকার বাইরে যারা জরুরী সেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে শহর অঞ্চলের বাইরের গুগল ম্যাপে পয়েন্ট করা ছিল না বলে নাগরিকদের বিভিন্ন স্থান শনাক্ত করতে সমস্যার সৃষ্টি হতো। ডিজিটাল ম্যাপ হালনাগাদ করার কারণে এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে। এখন দেশের সব লোকেশন সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। আগে গ্রামের লোকেশন গুগল ম্যাপে ছিল না। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, আমাদের ম্যাপিংয়ের ধারণায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে গুগল ম্যাপ। স্মার্টফোন দিয়ে জিপিএস ব্যবহার পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। তবে, এর সঙ্গে আমাদের ভাবতে হবে, যেন প্রযুক্তি আমাদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি না করে। বিশেষ করে, বর্তমানের করোনা প্রতিকূল সময়ে যখন জরুরী সেবা ঘরে পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে পাঁচটি কন্টিনিউইটি পরিকল্পনা করেছিলাম এ সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। সেখানে আমাদের অন্যতম কৌশল ছিল সরকারের সঙ্গে সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা লক্ষ্য করেছি, শহরের ক্ষেত্রে হাসপাতালসহ নানা জরুরী স্থাপনা গুগুল ম্যাপে রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় গ্রামে জরুরী স্থাপনা চিহ্নিত করা নেই। আর এ সমস্যা সমাধানে এটুআই, গ্রামীণফোন, বাংলাদেশ স্কাউটস ও প্রেনিউর ল্যাবসহ সবাই মিলে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ উদ্যোগ নিয়ে এসেছে। যেখানে দেশের তরুণরাই ঘরে বসেই পথ দেখাতে পারে। আমরা আনন্দিত যে, এ চ্যালেঞ্জ সবাইকে আলোড়িত করেছে। এখন পর্যন্ত এ কার্যক্রমে ৩১ তরুণ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এক লাখ ১০ হাজার ম্যাপ পোস্ট হয়েছে। অন্যদিকে ফেসবুকে ৮ দশমিক ৫ মিলিয়নের বেশি রিচ এবং ৯৬ দশমিক ৭ মিলিয়নের বেশি ইমপ্রেশন পাওয়া গেছে। তরুণরা তাদের বাড়িতে অবস্থান করে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনেই পুরো ম্যাপিং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। ম্যাপিং কার্যক্রমে অবদানকারী শীর্ষ একশ তরুণকে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ২ মাসের জন্য ১০ জিবি (৫জিবি ৩০ দিন+ ৫জিবি ৩০ দিন) ইন্টারনেট ফ্রি দিয়েছে। তরুণরা সুপার স্টোর, মুদি দোকান, ফার্মেসি, কুরিয়ার সার্ভিস, পাবলিক টয়লেট এবং দেশের পর্যটন স্থানের ভৌগলিক ম্যাপিং করার কাজে সহযোগিতা করছে। জেলা পর্যায়ে ব্রান্ডিং কার্যক্রমকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ৩১ হাজার রেজিস্টার্ড ম্যাপারের প্রত্যেককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ই-সার্টিফিকেট দেয়া হবে। এই সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে তাদের বড় ধরনের কাজে লাগবে। এদিকে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, কোভিড-১৯’র বৈশ্বিক মহামারী আমাদের নতুন স্বাভাবিকতায় অভ্যস্থ করে তুলছে। কানেক্টিভিটির কারণেই এ অভূতপূর্ব সময়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জরুরী সেবাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। এটুআই, আইসিটি বিভাগ ও প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ ম্যাপারদের সঙ্গে এ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমার বিশ্বাস, দেশজুড়ে গুগল ও ওপেন স্ট্রিট ম্যাপ ব্যবহার করে ফার্মেসি, রিচার্জ পয়েন্ট, হাসপাতাল, স্কুলসহ জরুরী স্থান ও স্থাপনা চিহ্নিতে আমাদের এই প্রচেষ্টা সহায়তা করেছে। যেসব অংশগ্রহণকারী ম্যাপ অন্তর্ভুক্তিকরণে কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। আপনাদের এ সহায়তা যে কোন সময় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ধারাবাহিকভাবে এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এটুআইর পলিসি এ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, আমাদের বর্তমান সঙ্কটে হাসপাতাল, ফার্মেসি, মুদি দোকানসহ জরুরী স্থাপনা সহজে খুঁজে বের করতে তরুণ প্রজন্ম কিভাবে সহায়তা করতে পারে সে ধারণা থেকেই বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ উদ্যোগের যাত্রা শুরু। এক্ষেত্রে গ্রামীণফোন, প্রেনিউর ল্যাব, গুগল এগিয়ে এসেছে। এ উদ্যোগে গ্রামীণফোন টেকনোলজি পার্টনার হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে ৫ হাজার হাসপাতাল, ১৬ হাজার ফার্মেসি, ২০ হাজার গ্রোসারি স্টোর ম্যাপে সন্নিবেশিত হয়েছে। বর্তমানের সঙ্কটে এ ম্যাপিং কার্যক্রম দেশজড়ে মানুষকে দারুণভাবে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এ ম্যাপিং প্রক্রিয়া ই-কমার্স ও ডেলিভারি সেবাসহ জরুরী নানা সেবা গ্রহণ ও প্রদানে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।
×