ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাত্র পৌনে এক ঘণ্টায় বাজেট পেশ, নতুন ইতিহাস

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১২ জুন ২০২০

মাত্র পৌনে এক ঘণ্টায় বাজেট পেশ, নতুন ইতিহাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংক্ষিপ্ততম সময়ে বাজেট পেশ করার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় সংসদে। মাত্র পৌনে এক ঘণ্টায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অতীতে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো বাজেট বক্তব্য দেয়া হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাজেট উপস্থাপন করা হয়। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করেই এই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়। অধিবেশনে চির চেনা উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। বরং সর্বত্র ছিল কঠোর সতর্কতা। অধিবেশনের দ্বিতীয়দিনে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এর আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী একটি কালো ব্যাগে করে তার বাজেট বক্তৃতাসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঙ্গে আনেন। অধিবেশন শুরুর সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার ও বিরোধী দলের মাত্র ৭৮ জন আইন প্রণেতা উপস্থিত ছিলেন। স্বল্প সংখ্যক সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বাজেট পেশের পর বৈঠক শেষ হয় ৩টা ৫২ মিনিটে। বাজেট পেশের দিন বৈঠক সবমিলিয়ে ৫০ মিনিট চলে। বাজেট পেশ ছাড়াও অর্থমন্ত্রী এ সময় অর্থবিল ২০২০ পেশ করেন। এদিকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উত্থাপন হলেও বাজেট বক্তৃতা বিগত বছরের চেয়ে ছোট ছিল না। এবারের বাজেট বক্তৃতা ছিল ১৩০ পৃষ্ঠার। যেটা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরেরই সমান। অর্থমন্ত্রী ৪৭ মিনিটের মতো বাজেট বক্তব্য দিলেও নিজে পাঠ করেছেন সবমিলিয়ে ৬ থেকে ৭ মিনিটের মতো। বাকি পুরোটাই তিনি ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেট উপস্থাপন করেন। প্রসঙ্গত বিগত অর্থবছরে বাজেট পেশের পাশাপাশি তার চুম্বক অংশ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখানো হলেও এবারই প্রথম অর্থমন্ত্রী পাঠ না করে প্রায় পুরো অংশই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন। আগামী ২৯ জুন এই বিল পাস হবে। আর বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এর আগে আগামী রবিবার থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিবছর বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবনজুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবার ছিল ভিন্ন চিত্র। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। আর মূল ভবনে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে সকলকেই জীবাণু নাশক স্প্রে করা হয়। এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়। অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা বিগত দিনের আসন বন্টন এড়িয়ে করোনা সতর্কতা মেনে আসন গ্রহণ করেন। অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দু’টি আসন পরপর তারা বসেছিলেন। অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় ক্যাপ ছিল। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রতিবছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আগেই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছাড়া বাজেট পেশের ঘটনাও এই প্রথম। তবে বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন। তবে সংসদ ভবনে তার প্রবেশের সময় ছিল না কোন আনুষ্ঠানিকতা। বিউগল বাজিয়ে বরাবরই রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানো হয়। তবে লোক সমাগম এড়াতে এবার তা বাদ দেয়া হয়। এর আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভবনে পৌঁছালে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। অধিবেশন শুরুর আগে রাষ্ট্রপতি ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরের জাতীয় বাজেট এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেন। অনুমোদিত এই বাজেট সংসদে পেশ করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাক্ষর করেন তিনি। এ সময় অর্থ বিভাগের সচিব আবদুল রউফ তালুকদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া এবং প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ওই বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও স্বল্পসংখ্যক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সচিবালয় থেকে জানা গেছে, একই সতর্কতা মেনে আগামী রবিবার থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আলোচনা চলবে। সংসদ সদস্যরা কে, কবে অংশ নিবেন তা ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। রীতিমতো রোস্টারের মতো করে বাজেট অধিবেশনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা যোগ দিয়ে বাজেট আলোচনায় অংশ নেবেন। বয়স্ক ও অসুস্থ সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলেও সূত্রটি জানায়। বাজেট বক্তব্য উপস্থাপনকালেও অর্থমন্ত্রী আলোকিত বাংলাদেশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় রচিত এ বাজেটের হাত ধরেই ইনশাল্লাহ আমরা শীঘ্রই পূর্বের উন্নয়নের ধারায় ফিরে যাব। যে অমানিশার অন্ধকার আজ আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, মহান আল্লাহর কৃপায় সেটি কেটে যাবে। আমরা মহান আল্লাহ’র রহমতে ফিরে পাব স্বাভাবিক জীবন; ফিরে পাব একটি আলোকিত সকাল।
×