ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বস্তিবাসীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১১ জুন ২০২০

বস্তিবাসীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আশা করছি, এবারের বাজেটে বস্তিবাসীদের বিষয়টি স্পষ্টভাবেই আসবে। এমনকি সরকারের তরফ থেকে বস্তিবাসীদের জন্য অবশ্যই কিছু করা হবে বলে আশা করছি। শুধু আমি নই, আমার মতো লাখ লাখ বস্তিবাসীই তাই মনে করছে। তারা আশায় বুক বেঁধে আছে। আমরা সরকারী জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে বসবাস করছি। এতে সরকারের ও দেশের ক্ষতি হচ্ছে। এসব জায়গা এক ধরনের অসাধু ব্যক্তিরা দখল করে আছে। তারা ঘর তুলে আমাদের মতো গরিবের কাছ থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের পুনর্বাসন করা হলে খালি জায়গায় সরকার শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে পারবে। আমার মতো বহু মানুষ সেখানে কাজ করতে পারবেন। বিশেষ করে এবারের বাজেটের আগে পুনর্বাসনের পর বস্তি উচ্ছেদ করার সরকারী ঘোষণা বস্তিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আশা জাগিয়েছে। আশায় বুক বেঁধে আছেন বস্তিবাসীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। যা সত্যিই খুবই আশার কথা। একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার কল্যাণপুর বাজার সংলগ্ন বহু পুরনো পোড়া বস্তির বাসিন্দা রিনা বেগম (৩৫)। ৩৪ বছর ধরে বস্তিটিতে বসবাস করছি। বাড়ি ভোলায়। নদী ভাঙ্গনে বাড়ি হারানোর পর মা-বাবা মোহাম্মদপুরের একটি বস্তিতে আশ্রয় নেয়। আমার জন্মও মোহাম্মদপুরের সেই ঢাল বস্তিতে। এক বছর বয়সে মায়ের কোলে চড়ে এই বস্তিতে আসি। এই বস্তিতেই বিয়ে হয়। মা হয়েছি বস্তিতেই। ত্রিশ পেরুনো এই নারী বলছিলেন, জীবনের দুঃখ গাথার গল্প। স্বামী আছে। সন্তান আছে। যতসামান্য যা রোজগার করি, তা বাসা ভাড়া আর খাওয়া খরচেই চলে যায়। বস্তিতে প্রতিটি ঘর দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। আবার ঘর ভেদে চার হাজার টাকাও ভাড়া আছে। মাস শেষে হাতে তেমন কোন টাকাই থাকে না। তারপর গত তিন মাসে করোনার কারণে আয় রোজগার বন্ধ। কোনমতে প্রাণে বেঁচে আছি। করোনার মধ্যে সরকারের তরফ থেকে একবার, স্থানীয় এমপির তরফ থেকে একবার আর সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে একবার মোট তিনবার ত্রাণ পেয়েছি। তাও যতসামান্য। প্রতিবাবের ত্রাণে কোনমতে এক সপ্তাহ করে চলতে পেরেছি। এরপরই সব শেষ। এভাবেই হয়ত একদিন জীবন কেটে যাবে। বৃদ্ধ হব। মারা যাব। কেউ মনে রাখবে না। সম্প্রতি শুনলাম সরকার বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করার ঘোষণা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করেছে। এমন শোনার পর সত্যিই খুবই আশা জেগেছে মনে। জীবনের শেষ বেলায় একটি নিজের ছোট রুম হলেও পাব। তাতেই জীবন ধন্য। নিজের ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকব। মাস শেষে আর কারও ভাড়ার জন্য গালিগালাজ শুনতে হবে না। আমার মতো লাখ লাশ বস্তিবাসী সরকারের এমন ঘোষণার পর আশায় বুক বেঁধেছেন। বস্তিতে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার যেহেতু বাজেট দেয়ার আগে এমন কমিটি করেছে, তাহলে বোঝা যাচ্ছে বাজেটে বস্তিবাসীদের কথা থাকবে। তাদের নিয়ে বাজেটে বরাদ্দ থাকবে। দীর্ঘ জীবনের শেষে হয়ত সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। সন্ধ্যার পর বস্তিতে আর মাদকের আসর দেখতে হবে না। সর্বক্ষণ লেগে থাকা মারামারি, হানাহানি, ঝগড়া বিবাদ দেখতে হবে না। কি শান্তি! পরিশেষে মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের সুরে বললেন, বাজেটে বস্তিবাসীদের কথা থাকবে তো? বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন হবে তো? কোন উত্তর দিতে পারিনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১৯৯৭ সালে প্রথম বস্তি জরিপ করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সারাদেশের বস্তি জরিপ মোতাবেক সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার বস্তি ছিল। আর বস্তিতে বাস করত প্রায় সাড়ে ২২ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ। সূত্রটি বলছে, বস্তির অধিকাংশ পরিবারই পরিবার পরিকল্পনার আওতার বাইরে থাকেন। ফলে বস্তির এখন বাসিন্দার পরিমাণ তুলনামূলক অনেক বেশি। বস্তিতে ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও বেকার মানুষ জীবিকার সন্ধানে প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে সরে এসে বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। এদের অধিকাংশ বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করেন, রিক্সাচালান, হোটেল বয়, গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এক কথায় সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বস্তিতে। পরিসংখ্যান মোতাবেক সারাদেশে বস্তির সংখ্যা বেড়ে প্রায় চার শ’ গুণ।
×