ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করছে

বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্তদের ঢাকায় আনছে বিমানবাহিনী

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ১০ জুন ২০২০

বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্তদের ঢাকায় আনছে বিমানবাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাকালে অন্যান্য বাহিনীর মতো বিমানবাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসার মতো কঠিন কাজটি করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে গুরুতর অসুস্থ পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী, সিলেটের সাবেক মেয়র, খুলনা থেকে একজন ডাক্তার, ঝিকরগাছার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ফরিদপুর থেকে ঢাকায় সিএমএইচে নিয়ে এসেছে। একজন করোনা রোগীকে হেলিকপ্টারে আনার বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। কিন্তু বিমানবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন করোনা রোগীকে ঢাকায় আনার সাহসিকতা দেখিয়েছেন। বিমানবাহিনী দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ কাজেও অংশ নিচ্ছে। বিমানবাহিনীর বাশার ঘাঁটির পরিচালন শাখার অধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, জনগণের সেবার জন্য আমাদের তিনটি হেলিকপ্টার স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। ৪০ মিনিটের মধ্যে খবর পেলেই আমরা যাত্রা করতে পারি। আগে দিনের আলো ছাড়া হেলিকপ্টার চালানো যেত না। এখন তিনটি আধুনিক হেলিকপ্টার রয়েছে যেগুলো রাতেও আমরা চালাতে পারি। আমরা যখন এই কাজটি শুরু করেছি তখন যেসব এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা নেই ওইসব এলাকার জন্য। কিন্তু এখন আমরা সব জায়গায় কাজ করে যাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের সেবা চলমান থাকবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত রবিবার বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট থেকে মন্ত্রীকে নিয়ে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারটি ঢাকায় আসে। পরে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে বলেও বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ্একইদিন করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত কামরানের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তার পরিস্থিতি গুরুতর অবস্থায় চলে যায়। পরে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে কামরানকে হেলিকপ্টারযোগে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। মেয়র কামরানের স্বজনেরা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কামরানের চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে প্রচারাভিযান পরিচালনাকালে করোনায় আক্রান্ত যশোরের ঝিকরগাছা থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডাঃ কাজী নাজিব হাসানকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমএইচে আনা হয়। জাতীয় যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সর্বদা সহায়তা প্রদান করে আসছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আওতায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জরুরী বিমান পরিবহন এবং মেডিক্যাল ইভাকোয়েশন সহায়তা প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এই মেডিক্যাল ইভাকোয়েশন মিশনের মাধ্যমে যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডাঃ কাজী নাজিব হাসানকে বিমানবাহিনীর একটি বেল-২১২ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। আইএসপিআর জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে করোনা মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সারাদেশে চলছে সশস্ত্র বাহিনীর এই কার্যক্রম। তারা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান করে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে সবচাইতে কার্যকর পদ্ধতি ‘সামাজিক দূরত্ব’ সৃষ্টিতে সহায়তা করে আসছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় জীবাণুনাশক পানি স্প্রে, বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাপনা তৈরি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে আরও বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে সশস্ত্র বাহিনী। এ কাজে সারাদেশে নিয়োজিত ছিল ৩ হাজারের বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। করোনা মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় টহল জোরদার, জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার ও দুস্থদের ত্রাণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। একইভাবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তাদের ঘাঁটির নিকটবর্তী স্থানগুলোতে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে। ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় ২৪ মার্চ থেকে দেশের সকল বিভাগ এবং জেলায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে সেনা মোতায়েনের অংশ হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে কাজ করছে।
×