ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডেড সি গুহায় প্রাচীন গুপ্তধন

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৮ জুন ২০২০

ডেড সি গুহায় প্রাচীন গুপ্তধন

অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও প্রাণের স্পন্দনহীন ‘ডেড সি’ বা মৃত সাগর ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। শুধু ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যই নয় বরং জর্দান ও ইসরাইলের মাঝে বিস্তৃত সাগরের চারপাশে থাকা পাহাড়ের গুহাগুলো রহস্যের আধার। উত্তর-পশ্চিম দিকের কুমরান গুহায় ১৯৪৬-’৪৭ সালে কিছু স্থানীয় রাখাল খেলার ছলেই ঢুকেছিল। গুহা থেকে তারা উদ্ধার করে লম্বা বড় বড় মাটির প্রাচীন পাত্র। তার ভেতরে সযত্নে রাখা ছিল চামড়ার ওপরে লেখা প্রাচীন লিপি। যেগুলো পশুর চামড়া দিয়ে মুড়ে রাখা ছিল পাত্রে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘স্ক্রোল’। সাতটি পাত্র থেকে স্ক্রোল উদ্ধার করে বেদুইন জনগোষ্ঠীর ওই রাখাল ছেলেরা। এরপর বেদুইনরা দলবেঁধে গুহায় হানা দিয়ে লিপি উদ্ধার করতে থাকে। ক্রমশ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে রহস্য-আবিষ্কারের কথা। ১৯৪৬ সালের শেষ থেকে শুরু করে প্রায় ১০ বছর ধরে ডেড সির চারপাশের গুহা থেকে উদ্ধার করা হয় এক হাজারের বেশি স্ক্রোল। মূলত প্যাপিরাস, পার্চমেন্ট, শূকর বা অন্য পশুর চামড়ার ওপরে লেখা হত রিড পেন দিয়ে। পাতলা বাঁশের পাতের এক প্রান্ত তীক্ষè করে নেয়া হত। তারপর তা কালিতে ডুবিয়ে লেখা হত। প্রাচীন সুমেরীয় ও মিসরীয় সভ্যতাতেও ওই কলমের প্রচলন ছিল। রেডিও কার্বন পরীক্ষায় জানা গেছে, অলিভ অয়েলে (জলপাইয়ের তেলে) কয়লা পুড়িয়ে সেই কালি ব্যবহার করা হয়েছে। লাল কালি তৈরি করা হয়েছিল পারদ দিয়ে। মধু, পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে পাতলা করে নেয়া হয়েছিল কালি। যতগুলো স্ক্রোল আবিষ্কৃত হয়েছে তারমধ্যে মাত্র চার জায়গায় লাল কালি ব্যবহার করা হয়েছে। কয়েক দশকের গবেষণার পর জানা যায়, স্ক্রোলগুলো হিব্রু, এ্যারামাইক ও গ্রীক ভাষায় লেখা। বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন পাঠযোগ্য পাণ্ডুলিপির ধর্মীয় অংশকে পরে হিব্রু বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইতিহাসবিদদের ধারণা, খ্রিস্টের জন্মের তিন শ’ বছর আগে থেকে শুরু করে প্রথম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওই লিপিগুলো লেখা হয়েছিল। যুগের পর যুগ মধ্য এশিয়ার ওই অংশে বিভিন্ন সভ্যতাবাসী গুহাগুলোকে ব্যবহার করেছে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত সংগ্রহশালা হিসেবে। স্ক্রোলগুলো আসলে বিশাল গুপ্তধন ভাণ্ডারের মানচিত্র। সেখানে মোট ৬৩ স্থানের কথা বলা হয়েছে যেখানে আছে সোনা-রূপা ভর্তি কুঠুরি রয়েছে। যার পরিমাণ কয়েক শ’ টন। যদিও সেই গুপ্তধন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। কেননা আজ থেকে ২৩০০ বছর আগের সঙ্কেত এখনও অনেকটাই দুর্বোধ্য। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের মতে, গুপ্তধন আর নেই। গুহায় যা ছিল, তার সবই দুই হাজার বছর আগেই লুট করে নিয়েছে রোমান সৈন্যরা। -লাইভ সাইন্স
×