ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘অনুপ্রেরণায় প্রিয়জন’- ভার্চুয়ালি মোস্তফা কামাল সৈয়দ স্মরণ

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৪ জুন ২০২০

‘অনুপ্রেরণায় প্রিয়জন’- ভার্চুয়ালি মোস্তফা কামাল সৈয়দ স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতের অন্যতম পুরোধা মোস্তফা কামাল সৈয়দ। একাধারে যিনি স্বনামধন্য টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাপরিচালক হিসেবে। গণমাধ্যম, বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষকে কাঁদিয়ে এই বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর সম্প্রতি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩১ মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ৭৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। তার ৫২ বছরের কর্মজীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত শিল্পী-নির্মাতা-প্রযোজকরা স্মৃতিকাতর হচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। এমনই একটি আয়োজন ডিরেক্টর’স গিল্ডের ‘অনুপ্রেরণায় প্রিয়জন’। বুধবার রাতে মোস্তফা কামাল সৈয়দ স্মরণে ডিরেক্টর’স গিল্ডের ‘অনুপ্রেরণায় প্রিয়জন’ লাইভ আয়োজনে অংশ নেন অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, আবুল হায়াত, আফজাল হোসেন, সঙ্গীতশিল্পী এস আই টুটুল ও সামিনা চৌধুরী। ডাঃ আব্দুর নূর তুষারের উপস্থাপনায় এই লাইভ আয়োজনটি প্রচার হয় ডিরেক্টর’স গিল্ডের ফেসবুক পেইজ-যঃঃঢ়ং://নরঃ.ষু/৩বগউঢ়ঝঃ এবং ইউটিউব চ্যানেল- যঃঃঢ়ং://নরঃ.ষু/২ঢঢ়গধগঢ় -এ। আলোচনায় বক্তারা বলেন, পর্দার পেছনের মানুষ হলেও মিডিয়া জগতে সজ্জন ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ বাংলাদেশের দর্শকের কাছে খুব চেনা। আশি দশকের প্রথমদিকে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সঙ্গীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সূচনাপর্বে নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসত। অনেক সময় নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময়ের বেশিরভাগ নাটকের ভূমিকায় কিংবা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ। তাকে কখনও মুখভার করে থাকতে দেখা যায়নি। মুখে হাসি লেগেই থাকত। ঘটনা যাই ঘটুক, পরিস্থিতি যেমনই হোক, নিজের কাজটা ঠিকভাবে শেষ না করে থামতেন না। হার মানতে চাইতেন না বিরূপ পরিস্থিতিতে। একইভাবে নিজের সৃষ্টিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার বিষয়েও জেদ ছিল। তার সবকিছু ছিল যেন গোছানো, ছক বাঁধা। প্রতিটি আয়োজন করতেন পরিকল্পিতভাবে। হয়তো সে কারণেই তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে অন্য সবার চেয়ে আলাদা হয়ে উঠেছিলেন। টেলিভিশন পর্দার পেছনের লোক হয়েও তিনি হয়ে উঠেছিলেন তারকা। পেছনের কিংবদন্তি একজন শিল্পী ছিলেন তিনি। কাজের প্রতি তার ছিল চরম ভালবাসা। তিনি যতদিন বিটিভিতে ছিলেন সবসময় চেষ্টা করেছেন ভাল কাজ করার। বিটিভি ছেড়ে যখন তিনি এনটিভিতে যোগদান করেন সেখানেও একই চেষ্টা ছিল। তার পরিচালনায় ৮০’র দশকে বিটিভিতে প্রচারিত ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘অযাত্রা’সহ অজস্র নাটক কালজয়ী হয়েছে। তার প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে তার প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদ লেখা ‘প্রজাপতি মন’, আশি দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কূল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। আজ তিনি নেই কিন্তু তার স্মৃতি রয়েছে। তিনি তার কাজের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন।
×