ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম’

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ২৯ মে ২০২০

‘বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম’

মিথুন আশরাফ ॥ অবশেষে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর কেন নিচ্ছেন না তা নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন। তখন নেয়া হয়নি। এরপর দিন যত গড়িয়েছে, অবসরের সিদ্ধান্ত ততই পরিবর্তন হয়েছে। এক লাইভ আড্ডায় শুধু নিজের অবসরই নয়, সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল, বর্তমান ওপেনার তামিম ইকবাল, বাংলাদেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা বলার সঙ্গে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে না থাকায় কষ্ট পাওয়া; এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন। মাশরাফি অবসর নিয়ে বলেছেন, ‘দেখেন আমার অবসরের ঘটনা আগেও একটা ঘটেছে টি২০তে। আপনাদের (মিডিয়া) সামনে এসে আমি কারও কথা বলিনি। তখন তো সবকিছু আমার পক্ষেই ছিল, তাও আমি কিছু বলিনি। এখন তো কিছুই আমার পক্ষে নেই, তাই এতকিছু বলার নেই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তবে একটা কথা বলব, বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে আমি অবসর নিতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ! চেয়েছিলাম। এটা যদি কেউ অস্বীকার করতে পারে, এমনকি ক্রিকেট বোর্ডের কেউ অস্বীকার করতে পারে, তাহলে আমার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে হবে, আলাদা নয়। একসঙ্গে বসে কথা বলতে হবে।’ এগারো বছর আগে থেকে, ২০০৯ সাল থেকেই ইনজুরিতে পড়ার পর থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেন না মাশরাফি। ২০১৭ সালে টি২০ থেকে অবসর নিয়েছেন। গত বছর বিশ্বকাপ শেষেই মাশরাফির ওয়ানডে থেকে অবসরের কথাও অনেক শোনা গেছে। কিন্তু তিনি অবসর নেননি। বিশ্বকাপের পরেও অবসরের ইঙ্গিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নেয়া হয়নি। কেন? মাশরাফি এক লাইভ আড্ডায় জানান, ‘আমি শেষ ম্যাচেই করতে চেয়েছিলাম। তখন এমন একটা কথা এসেছিল যে, এভাবে না হোক, সুন্দরভাবে হোক (অবসর)। দেশে আসার পর যেটা হয়েছে, জিম্বাবুইয়েকে কত টাকা (২ কোটি) খরচ করে একটা ম্যাচ আয়োজন করা... তখন আমার মনে হয়েছে, মাশরাফি হয়তো মাঠ থেকে অবসর নেয়া ডিজার্ভ করে। কিন্তু একটা ম্যাচের জন্য ২ কোটি টাকা মাশরাফি ডিজার্ভ করে না। যেখানে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের এই অবস্থা, সেখানে একটা ম্যাচের জন্য এত টাকা তার প্রাপ্য নয়। তাই আমি তখন অবসর নেইনি। এরপর হয়তো আস্তে আস্তে চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি অবসর নিতে চাইনি বা নিব না... এমনটা যদি কেউ দাবি করে তাহলে সামনাসামনি বসতে হবে। আর ঐসময় জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের প্রস্তাব কেন নেইনি, সেটাও বললাম। যেখানে আমার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের মনে কষ্ট আছে, সেখানে আমার একটা ম্যাচের জন্য ২ কোটি টাকা খরচ করাটা ভাল মনে হচ্ছিল না। একইভাবে আমার কাছে মনে হচ্ছিল, এই ২ কোটি টাকা আমার ওপর ভারি হয়ে যাচ্ছে কি না। এতই ব্যস্ততা যে, দুই কোটি টাকা দিয়ে আমাকে অবসর নেয়াতে হবে। তো এসব জিনিসও আমার মাথায় এসেছে। জেদ বিষয়টা ঠিক না। তবে এসব জিনিস মাথায় কাজ করেছে। আর আমাকে যে মাঠ থেকেই অবসর নিতে হবে, এমন কোন প্রয়োজনীয়তাও দেখছি না।’ ক্রিকেট বোর্ড যে কখনই মাশরাফিকে অসম্মান করেনি, তাও জানান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। বলেন, ‘বোর্ডের সঙ্গে যেটা হয়েছে আসলে ভুল বোঝাবুঝি। আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আবার বোর্ডেও জিজ্ঞেস করেছেন, মাঝে একটা গ্যাপ চলে এসেছিল। তবে পাপন ভাই (বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন) কিন্তু সবসময় আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, আমার চিন্তার কথা জানতে চেয়েছেন। তাই বলতে পারি বোর্ডের পক্ষ থেকে আমাকে যথেষ্ট সম্মান দেয়া হয়েছে।’ আশরাফুলকে নিয়ে মাশরাফি বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, ওর (আশরাফুলের) জন্মই হয়েছে ক্রিকেট খেলার জন্য।’ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে বলেন, ‘সাকিব ঘরের রাগী কর্তা, লিটন ঘরের সবচেয়ে চুপচাপ ছেলে এবং তাসকিন নায়ক হতে পারতো।’ তামিম? দুষ্টুমির ছলে দেশের সেরা অধিনায়ক বলেন, ‘চাপাবাজ। তামিমের ব্যাপারে যেটা (চাপাবাজ) বলছিলাম, পরিষ্কার করি। তামিমকে চাপাবাজ বলছি এই অর্থে যে, ও তো আমাদের খাবার খেতে নিয়ে যায়। অনেক চাপা-টাপা মেরে খাবার খেতে নিয়ে যায়। কিন্তু ওর খাবার বাছাই এত খারাপ! একদিন সকালে সবার একসঙ্গে পেটে সমস্যা হয়েছিল। চল্লিশ পদের ভেজিটেবল খাইতে নিয়ে গেছিল। তবু আমরা নিয়মিত ওর ফাঁদে পড়ি। প্রতিদিনই ওরে বলা হয়, খাবার খাইতে নিয়ে চল। ও ভাবে যে অনেক ভাল খাবার। আর এরকম অনেক রেকর্ড আছে যে, ছেলেপেলেদের অনেক ডলার চলে গেছে (তামিমের বাছাই করা) খুব দারুণ খাবার খেতে গিয়ে।’ গত বছর অক্টোবরে ক্রিকেটাররা যে আন্দোলনে নেমেছিলেন, সেখানে মাশরাফিকে রাখা হয়নি। তাকে কিছু বলাও হয়নি। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ, কষ্ট প্রকাশ করেছেন মাশরাফি। তিনি বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি অস্বীকার করতে পারব না যে, সেটা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর এক ব্যাপার ছিল।’ আর নিজের বায়োপিকে কাকে দেখতে চান, তাও বলেছেন, ‘স্মার্ট খুব, হয়তো বা আরেফিন শুভ...।’
×