ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটে সাহসের প্রেরণায় নজরুলজয়ন্তী উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৯ মে ২০২০

সঙ্কটে সাহসের প্রেরণায় নজরুলজয়ন্তী উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৃষ্টির আলোয় একইসঙ্গে মানবতা ও প্রেমকে ধারণ করেছিলেন তিনি। কবিতা কিংবা গানে ছড়িয়েছেন সাম্যের বাণী। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র সৃষ্ট শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছিলেন- ‘সকল কালের সকল দেশের/সকল মানুষ/এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো/এক মিলনের বাঁশী’। অন্যদিকে অন্যায় কিংবা শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তাঁর কলম। মানবতার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মানেননি জাত-পাত বা ধর্মের সীমারেখা। ব্রিটিশ শাসনামলে বিদ্রোহী কবিতা লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তাইতো বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস হয়েছিল তাঁর গান কিংবা কবিতা। এভাবেই দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও বিপ্লবের কবি হিসেবে ঠাঁই নিয়েছিলেন বাংলা শিল্প-সাহিত্যের অনুরাগীদের মনের কোঠায়। সঙ্কট বা দুঃসময়ে আজো তিনি বাঙালীর অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এগারোই জ্যৈষ্ঠ সোমবার ছিল গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই লড়াকু কবির ১২১তম জন্মবার্ষিকী। এবার বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের নতুন পথের দিশারী এই কবির জন্মদিনটি এসেছে ভিন্ন বাস্তবতায়। মহামারীর কারণে ছিল না কোনো জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান। করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে ছিল না উন্মুক্ত আনুষ্ঠানিকতা বা আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। সাম্যের বারতার সঙ্গে সঙ্কট উত্তরণের প্রত্যাশায় সীমিত পরিসরে উদ্্যাপিত হয়েছে নজরুলজয়ন্তী। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে অর্পণ করা হয়েছে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি। কবির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ডিজিটাল মাধ্যমের সে আয়োজনে ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন মহামারীর সঙ্কটকালে নজরুলের সৃষ্টি থেকে সাহস নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ছায়ানট পরিবেশিত গান-কবিতার মাঝেও ছিল অভয় বাণীর উচ্চারণ। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন নজরুলের সমাধিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা প্রমুুখ। এ সময় কবির আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করাা হয়। নজরুলের চেতনাকে ধারণ করে মহাদুর্যোগের অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ পাড়ি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ছায়ানট। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে ‘নব যুগ ঐ এল ঐ,’ শীর্ষক আয়োজনে এ আহ্বান জানানো হয়। করোনা পরিস্থিতি কারণে নিজস্ব মিলনায়তনের বদলে ইউটিউব চ্যানেলে এ আয়োজন প্রচারিত হয় । অনুষ্ঠানের শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ শিরোনামের গান। কথনে অংশ নেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন। তিনি বলেন, নজরুলের গানের বিষয়বস্তু ও সুরে যে বৈচিত্র্য, তা বাংলার শিল্প-সাহিত্যের জগতে উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছে। তার রচনা বাঙালীর বিপদের দিনে সাথে ছিল। আজ মহামারীপীড়িত বিশ্বে যখন অসহায়ত্ব সকলকে গ্রাস করতে বসেছে, তখন নজরুলের সৃষ্টি আমাদের প্রাণে সাহস যোগাবে। মানবিকতার উন্মোচন ঘটাবে। জাগিয়ে তুলবে সেই প্রত্যয়-মানবসভ্যতার জয় সুনিশ্চিত। সন্জীদা খাতুনের কথনের পরে শিল্পী শাহীন সামাদ গেয়ে শোনান ‘থৈ থৈ জলে ডুবে গেছে পথ’। সুমন মজুমদার শুনিয়েছেন ‘আজ বাদল ঝরে’। নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি গেয়েছেন ‘দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে জেগে আছে মোর আঁখি’। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রির কণ্ঠে গীত হয় ‘ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা’। সুস্মিতা দেবনাথ শুচি শুনিয়েছেন ‘রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে’। বাচিকশিল্পী জহিরুল হক খান পাঠ করেন ‘রুদ্র মঙ্গল’ প্রবন্ধের নির্বাচিত অংশ। এরপর আবার একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজাউল করিম, শারমিন সাথী ইসলাম, মোহিত খান ও খায়রুল আনাম শাকিল। তারা গেয়ে শোনান ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’, ‘সজল-কাজল-শ্যামল এসো’, ‘শাওন আসিল ফিরে’ ও ‘সোনার হিন্দোলে কিশোর কিশোরী দোলে’। সম্মেলক কণ্ঠে ‘বল ভাই মাভৈঃ মাভৈঃ’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজন। অনুষ্ঠানে সম্মেলক পরিবেশনায় অংশ নেন অমিত আচার্য্য হিমেল, কানিজ হুসনা আহ্ম্মাদী সিমপী, তানভীর আহমেদ, নাহিয়ান দুরদানা শুচি, মনীষ সরকার, সুপ্তিকা ম-ল, সৈয়দা সনজিদা জোহরা বীথিকা ও হারাধন চন্দ্র সাহা।
×