ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ২২:৫২, ২২ মে ২০২০

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জু’মাতুল বিদা’ বা পবিত্র রমজান মাসের বিদায়ের বার্তাবাহী জুমা। মু’মিন মুসলমানগণ পরম আহলাদ ও বিশেষ মর্যাদায় পালন করে থাকেন এ দিবসটি। রমজানুল মুবারক ক্রমাগত শেষ হয়ে আসলে এ দিবসের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। এমনিতেই ইসলাম ধর্মে জুমা বা জুমা দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। দুনিয়ার অনেক উত্তান পতন ও ঘটনার কালসাক্ষী এটি। পৃথিবী সৃষ্টি হয় এ দিনে। কিয়ামত ও এ’দিনে সংঘটিত হবে বলে বিখ্যাত তাফসীর ‘ইবনে কাসীর’ থেকে জানা যায়। এ দিনের জুমার সালাত ও খুৎবাকে গরিবের হজ্ব বলা হয়ে থাকে। হাদীস শরীফে এসেছে, এদিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে কবুল হয়’। আমরা সারাদিন পুতর্পবিত্র থেকে ইবাদত-বন্দেগী আন্জাম দেয়ার মাধ্যমে সে মুহূর্তটি লাভ করতে পারি। কুরআনুল করীমের সূরাতুল জুমাআয় আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন : হে ঈমানদারগণ, জুমার দিনে যখন আজান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহর স্মরণে ত্বরা করো এবং বেচাকেনা বন্ধ রাখ। এ’টা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।’ উল্লেখ্য, আয়াতে বর্ণিত ‘ত্বরা করো’ অর্থ দৌঁড়ানো উদ্দেশ্য নয়। গুরুত্ব দেয়া উদ্দেশ্য। কারণ নামাজের জন্য দৌড়াদৌড়ি ও ছুটাছুটি করে গমন করতে আঁ-হযরত (স.) হাদীসে নিষেধ করেছেন। যেহেতু এর দ্বারা কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এখানে ‘ত্বরা করো’ এর মর্ম হল শান্তি ও গাম্ভীর্য সহকারে নামাজের জন্য গমন করে। রহমত বরকত মাগফিরাতের মাস রমজানে জুমা’র দিবসের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ, এ মাসের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব অন্য এগারো মাসের তুলনায় অত্যধিক। বিশেষ করে এ মাসের সমাপনী জুমা’র আবেদন যে কোন জুমা’র তুলনায় মু’মিন মনে দাগ কাটে বেশি। এ জন্য দেখা যায়, এ’দিন জুমা’র সালাতে প্রধান প্রধান মসজিদ সমূহে মুসল্লিদের ঢল নামে; রাজপথ হয় লাখো মু’মিনের জায়নামাজ। মাহে রমজানের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এ এক মনোমুগ্ধকর সংস্কৃতি। পবিত্র জুমা’তুল বিদা’র মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণ মূখ্য বলে ওলামাগণ মনে করেন। প্রথমত ঃ এ’দিন পবিত্র রমজানুল মুবারককে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর একটি হৃদয় কাড়া ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত ঃ এ’দিন বিভিন্ন স্থান ও পরিস্থিতিভেদে সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণা করা হয় এবং তৃতীয়ত ঃ এ’দিন মসজিদে মসজিদে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের করণীয় ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াজ-নসীহত করা হয় আর এ দিবসের আমল, তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। তাই জুমাতুল বিদা বস্তুতই ঃ ইবাদত বন্দেগীর, তাওবা, ইস্তিগফারের, মাহে রমজানের বিদায় বেলায় আনুষ্ঠানিক আত্মোপলব্ধির ও বিশেষ মোনাজাতের। আমরা যেন পূর্ণ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে তা উদযাপন করি। মাহে রমজানের এ বিদায়ী সময়গুলো ইহতিসাব ও আত্মসমালোচনার। রমজানের সিয়াম সাধনায় বহুবিধ নিয়ম কানুন আমাদের মধ্যে কতটুকু জীবনবোধ সৃষ্টি করতে পেরেছে। মাহে রমজান আমাদের শুধু উপবাসের শিক্ষা দেয় না এটি আনে আত্মার পরিগঠন। একজন মানুষকে সঠিকভাবে নিষ্পাপ ও নির্মল জীবনের সন্ধান দেয় এ মাস। আর যদি তা রোজাদারের তনুমনে উপলব্ধি সৃষ্টি করতে না পারল তাহলে হাদীস মতে নিছক উপোস থাকাই সার হয়। হুজুরে আকরাম (স.) ইরশাদ করেছেন ঃ এমন অনেক রোজাদার আছে যাদের রোজা নিছক ক্ষুধা পিপাসার নামান্তর। এদের ভুখা রাখা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নাই।’ রোজা অন্যান্য চরিত্র সৃষ্টির পাশাপাশি আামাদের জন্য নিয়ে এসেছে সহনশীলতার বার্তা। রমজান মাসের গোটা দর্শন জুড়েই ত্যাগ ও সহনশীলতার প্রাধান্য রয়েছে। রোজার এক অর্থ হলো মৌনতা অবলম্বন করা। আর এ মৌনতার মাঝেই সহনশীলতা, সমাজশান্তি ও স্থিতিশীলতার বাণী নিহিত। হযরত আবু বকর (রাদিঃ) একদিন নিজের জিহ্বাকে টেনে ধরে বলেছেন ঃ এটি থেকে নিজেকে সংবরণ কর। অর্থাৎ জিহ্বা বা মুখ গুণে মানুষ দুনিয়া আখিরাতে সম্মানিত হয় অথবা অপমানিত হয়। রমজান শেষ আর ক’দিন পরে ঈদ-উল-ফিতর আসবে এবং এ দিন পরস্পর পরস্পরকে আপন করে নেয়ার, ভেদাভেদ ও শত্রুতা ভুলে সবাইকে আলিঙ্গন করার যে শিক্ষা তাও মাহে রমজান থেকে নির্গত। ঈদের খুশি তো রোজাদারের জন্য। যারা রমজানকে সদ্ব্যবহার করেছে তাদের জন্য।
×