স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোভিড-১৯-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং ও মানবদেহের ভিন্নমাত্রার প্রভাব নিয়ে অন্তত ১০০ ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জীববিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটি ও জীববিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে একথা জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার প্রথমবার বাংলাদেশী বাবা-মেয়ে ডাক্তার যুগল সফলভাবে করোনাভাইরাস জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটন করেছেন। এর ফলে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি নির্ণয় করতে পারবেন গবেষকরা এবং যা দেশের জনগণের জন্য প্রতিষেধক তৈরির সম্ভাবনাকে সহায়তা করবে। ডাঃ সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) আট সদস্যের একটি গবেষক দল জিনোম সিকোয়েন্সের ম্যাপিংয়ের কাজ করে।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ সমীর কুমার সাহা ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক ডাঃ সেঁজুতি সাহা যৌথভাবে তাদের কৃতিত্বের কথা ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটি ও জীববিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা তাদেনরর উদ্যোগের কথা জানালেন।
বৃহস্পতিবার ঢাবির সেন্টার ফর এ্যাডভান্স রিসার্চ ইন সায়েন্স (কার্স) ভবনে মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান ঢাবির করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান।
জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রই প্রকল্পে জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইউজিসি অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সিরাজ, অধ্যাপক ড. হাসিনা খান, অধ্যাপক ড. মামুন আাহমেদ, জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান ও ড. এবিএম খামেদুল ইসলাম এবং অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান ও কার্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ মালেক গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত থাকবেন।
গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেবেন রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান। ড. শরীফ আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, জিনোম সিকোয়েন্স করা এখন রোগের মূল অনুসন্ধানের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। একে বলা হয় ‘জিনোমিক প্রেডিকশন’।
যেহেতু ভাইরাসটি ক্রমাগত মিউটেশনের মাধ্যমে তার জিনগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে সেহেতু অধিকসংখ্যক ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমেই একমাত্র এর আচরণগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, একটি ভাইরাস সংক্রমণ যখন জনসংখ্যার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তখন সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষকদের ভাইরাসটির জেনেটিক পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করতে সহায়তা করবে। বেশ কয়েকজন রোগীর কাছ থেকে সংগৃহীত ভাইরাল জিনোমের জিনগত অনুক্রমের পরিবর্তনগুলো দেশে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে এ রোগের বিস্তারকে পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে ভাইরাল জিনোম সিকোয়েন্স থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো আমাদের দেশে প্রচলিত নির্দিষ্ট ভাইরাল স্ট্রেনগুলো শনাক্ত করা, সংক্রমণের হটস্পট বা সুপার-স্প্রেডের শনাক্ত করা এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য কৌশল প্রণয়ন করা।
এটি আমাদের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে সহায়তা করবে। এর ফলে বাংলাদেশে কোন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি কী ছিল, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমণের যে হটস্পটগুলো তা কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, আরএনএ সিকোয়েন্সে কী ধরনের পরিবর্তন হলে এটি অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়বে অথবা আমাদের দেশের আবহাওয়া এই ভাইরাসটি উপর আদৌ কোন প্রভাব ফেলেছে কি না ইত্যাদি জানা অনেক সহজ হবে।
ঢাবির এ বিশেষজ্ঞরা জানান, ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স আমাদের আরও অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর দেবে। যেমন, কেন এই ভাইরাস কোন কোন দেশে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায়? কেন প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আপাতদৃষ্টিতে কম সংবেদনশীল মনে হচ্ছে? এই ভাইরাস কি ভবিষ্যতে আবারও আঘাত হানতে পারে? যদি তাই হয় তার তীব্রতা কেমন হবে? এই ভাইরাসের মিউটেশনের হার কেমন? অথবা ভাইরাসটির প্রকৃত উৎস কী?
সরকারী-বেসরকারী সংস্থাকে এই প্রকল্পে অর্থায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজটি শুরু করার জন্য আংশিক ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এ্যালামনাইবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য আরও আর্থিক সংস্থানের প্রয়োজন হবে। এজন্য সরকারী, বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।