ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খোঁড়া অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন

একের পর এক ছুটি বাড়ালেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৪ মে ২০২০

একের পর এক ছুটি বাড়ালেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না

তপন বিশ্বাস ॥ একের পর এক ছুটি বাড়ালেও কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নানা খোড়া অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। ভিড় জমাচ্ছে রাস্তাঘাটে। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এরই মধ্যে সীমিত আকারে শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় মানুষ মনে করছে লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করা হচ্ছে। তালিকা করে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত। তা না হলে যে কোন মুহূর্তে দেশে করোনার প্রভাব বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. বে নজির আহমেদ। তিনি বলেন, দেশবাসীর সুরক্ষার স্বার্থে সরকার একের পর এক সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছে। কিন্তু সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ পুরোপুরি লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। মানুষ বিনাপ্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। মানা হচ্ছে না সরকারের নির্দেশ। বজায় থাকছে না সামাজিক দূরত্ব। সীমিত আকারে গার্মেন্টস, রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়া হচ্ছে। এতে মানুষ মনে করছে লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে কর্মীরা আসছেন কর্র্মক্ষেত্রে। সতর্ক না হলে এতে আক্রান্তের সংখ্য বেড়ে যেতে পারে। আক্রান্ত অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে গ্রামে ফিরে যাবে। এতে আক্রান্ত গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিল্প, কলকারখানা সীমিত আকারে খোলা যেমন দরকার। তেমনি জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রতিকারের ব্যবস্থাও নিতে হবে। শিল্প কারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে-শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে তাদের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। সুস্থ শ্রমিক দিয়ে কারখানা চালাতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে আছে। তাদের ঘরের বাইরে আনা দরকার। তাদের মতে, মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে বাইরে বের হলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কম। এছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের হলে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কি-না তা বোঝা সম্ভব হবে। এরই প্রেক্ষিতে সীমিত আকারের শিল্প, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াসহ সরকার ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে। রোগতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বাংলাদেশে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে তার তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম মনে হয়েছে। তা না হলে প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও হতো। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় ব্যাপক হারে সংক্রমণ দেখা দিত। কারণ বস্তি এলাকার ঘরগুলোতে চাইলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসবাস করা সম্ভব না। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন হেলথ বুলেটিন প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২ মে পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৭৯০। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৭৫ জনের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭৭ ব্যক্তি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই বয়স্ক এবং অন্যান্য বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ভুগছেন। যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই বেশি বয়স্ক। তারা আরও বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম হলেও উপস্থিত এলাকার বাসিন্দাদের কারও শরীরে করোনার উপসর্গ মেলেনি। ওই ঘটনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শশেষ হয়েছে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, লাখো মানুষের সমাগমের কারণে সেখানে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে কিন্তু এমনটা ঘটেনি। এদিকে সীমিত আকারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা দলে দলে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছিলেন। সেখানেও ধারণা করা হয়েছিল, এ কারণে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটবে। কিন্তু আশঙ্কা অনুপাতে ভাইরাসের তেমন ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি।
×