ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিডিয়াতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে করোনার প্রভাব ॥ তারিক আনাম

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৪ মে ২০২০

মিডিয়াতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে করোনার প্রভাব ॥ তারিক আনাম

মনোয়ার হোসেন ॥ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের চাহিদার শেষ নেই। পুঁজিপতিদের আরও বেশি বিত্ত চাই। আরও বেশি আরাম-আয়েশ চাই। ভোগ-বিলাসিতার জন্য প্রকৃতির ওপর সহনশীলতার তোয়াক্কা করা হয় না। নিষ্ঠুরভাবে আগ্রাসন চালানো হয়। নিজেদের ভোগলিপ্সায় গাছপালা-নদীনালা, বনাঞ্চল-কোন কিছুকেই রেহাই দেয়া হয় না। বিশ্ব নিয়ন্ত্রকরা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই চিন্তা করেছেন। একবারও তারা ভাবেনি, প্রকৃতি বিরূপ হলে কত বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাদের এই ভোগবাদিতাই পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছে দুর্যোগে। সারা বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসে ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এভাবেই মানুষের অসহনশীল আচরণে প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে মহামারীর আবির্ভাবের কথা বললেন তারিক আনাম খান। চলচ্চিত্র, টিভি ও মঞ্চনাটকের এই খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী সমকালীন নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জনকণ্ঠের সঙ্গে। শিল্পাঙ্গনে করোনার প্রভাব প্রসঙ্গে তারিক আনাম বলেন, আমরা সমাজের প্রিভিলেজ বা অগ্রসর শ্রেণী হওয়ায় কিছুটা সুবিধা পাচ্ছি। কিন্তু অসংখ্য মানুষ অনেকে কষ্টে আছে। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায় তারা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। শিল্পাঙ্গন বা মিডিয়াতেও স্বল্প আয়ের মানুষরা দুর্দিন পার করছে। স্বল্প মজুরিতে কাজ করা অভিনয় শিল্পী থেকে ক্যামেরার ক্রু, প্রডাকশন বয় কিংবা ট্রলি ম্যান-তারা চরম দৈন্যদশায় ভুগছেন। এই মানুষগুলো এখন কর্মহীন। আর এসব মানুষের জমানো অর্থ বলতে কিছু থাকে না বিধায় তাদের অনেকের এখন তিন বেলার খাবার জোটানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই সময়ে টেলিভিশনে অনেক কাজ থাকার ছিল। ঈদের সময় অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় নাটকের কাজ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বন্ধ হয়ে গেছে শূটিং থেকে টিভি নাটক নির্মাণের সকল কার্যক্রম। এ অবস্থায় টিভি নাটকের ওপর যারা নির্ভরশীল তাদের জন্য বিশাল ক্ষতি হলো। এই মানুষগুলো এখন ভুগছে। বিভিন্ন সংগঠন মাধ্যমে অসচ্ছল শিল্পী ও কুশলীদের যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও সীমিত সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করেছি। কিন্তু এই সামান্য সহযোগিতায় তারাই বা কতটুকু নিশ্চিন্ত হবে? পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হবে না। তাই মিডিয়াতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে করোনার প্রভাব। এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জীবন-জীবিকায় বিরাজ করবে সেই প্রভাব। তাই প্রতিদিনই প্রার্থনা করি, স্বাভাবিক হয়ে যাক পৃথিবী। সবকিছুই যেন আগের মতো সুন্দর হয় । করোনাকালে মঞ্চনাটকের স্থবিরতা প্রসঙ্গে বলেন, এমনিতেই দেশের মঞ্চনাটক সাফার করছিল। কারণ আমাদের এখানে এই শিল্প মাধ্যমটি ঘিরে পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি। এই মাধ্যমে অর্থপ্রবাহও কম। পাশাপাশি এ মাধ্যমে যারা কাজ করে তাদেরকে রুটি-রুজির জন্য অন্য কাজের ওপর নির্ভর করতে হয়। সব মিলিয়ে মঞ্চনাটকে করোনার অভিঘাত যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক থিয়েটার কর্মী। তাই এই শিল্প মাধ্যমটিরও ঘুরে দাঁড়াতে বেগ পেতে হবে। মহামারীর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নতুন উপলব্ধির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এই শিল্পী বলেন, আমরা অনেকেই ভাবছি এমন ঘটনার পর পৃৃথিবী শুধরে যাবে। সবাই নতুন করে ভাববে। কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রক তারা কতটা বদলাবেন নিজেদের? সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিচালনাকারী থেকে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান- তারা কতটা সদয় হবেন প্রকৃতির ওপর? আদৌ কি তারা সচেতন হবেন না ভোগবাদেই আচ্ছন্ন থাকবেন? নির্বিকার ভোগবাদিতায় আচ্ছন্ন সমাজে প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। বিত্তবানরা বাড়িতে সকল আয়েশী ব্যবস্থা গ্রহণে পিছিয়ে না থাকলেও একটা লাইব্রেরি গড়া বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরিতে তারা কখনও এগিয়ে আসেন না। টাকা কামানো ছাড়া সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি তাদের যেন কোন দায়বোধ নেই। তাই পৃথিবী নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে সবাইকে- এই বার্তাই দিচ্ছে কোভিড-১৯। কারণ, কোটি টাকা আছে কিন্তু সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না ধনীরা। তাদের এখন উপলব্ধির সময় এসেছে। মানবিকতাকে না হারিয়ে মানুষের সংবেদনশীল হওয়া উচিত। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে কী করতে হবে- এই উপলব্ধিটা আসতে হবে। নইলে শুধু ভোগবাদিতায় আচ্ছন্ন প্রকৃতির বৈরী রূপ দেখতে হবে বার বার।
×