ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোসলেমকে জিজ্ঞাসাবাদ

দুই খুনী রশীদ ও ডালিমের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১ মে ২০২০

দুই খুনী রশীদ ও ডালিমের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে

শংকর কুমার দে ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিন কলকাতায় ধরা পড়ার পরও ঘোষণা যে কারণে দেয়া হচ্ছে না তার নেপথ্য কাহিনী বলেছে গোয়েন্দা সংস্থা। মোসলেম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম- পলাতক এই দুই খুনী কোন্ দেশে আত্মগোপন করে আছে তার সন্ধান লাভের চেষ্টা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত রশীদ ও ডালিম এই দুই খুনী কোন্ দেশে আছে এখনও তার খবর জানে না সরকার। এই দুই খুনীর আত্মগোপনের দেশের নাম জানার জন্য মোসলেম উদ্দিনকে আটক করার খবরটি ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মধ্যে মোসলেম উদ্দিনকে আটক করার পর এখনও আর চার খুনী রয়েছে অধরা। এর মধ্যে দুই খুনী রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ও নূর চৌধুরী কানাডায় আছে তা সরকারের জানা। বাংলাদেশ এই দুই খুনীকে ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে কিন্তু রশীদ ও ডালিমÑ এই দুই খুনী কোন্ দেশে আত্মগোপন করে আছে তা অদ্যাবধি জানতেই পারেনি সরকার। এর আগে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার পর মিরপুরে গ্রেফতার হয়ে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝোলানোর আগে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকেও রশীদ ও ডালিম কোথায় আছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু আবদুল মাজেদ ওই দুই খুনীর কোন্ দেশে অবস্থান তার সন্ধান দিতে পারেনি। আবদুল মাজেদকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখন রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিন যে কলকাতায় নাম পরিচয় পাল্টিয়ে আত্মগোপন করে আছে সেই তথ্যটি দিয়েছিল এবং মোসলেম উদ্দিনই খুব সম্ভবত রশীদ ও ডালিমের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু আবদুল মাজেদের দেয়া তথ্যানুযায়ী মোসলেম উদ্দিনের আত্মগোপনের আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর আটক করা গেছে, সে কারণে মোসলেম উদ্দিনের পক্ষে ওই দুই খুনী রশীদ ও ডালিম কোথায় আছে তা জানার কথা। আর এ কারণেই মোসলেম উদ্দিনের আটকের কথাটি ঘোষণা না দিয়ে তার কাছ থেকে ওই দুই খুনীর সর্বশেষ আত্মগোপনের দেশ সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুই খুনী রশীদ ও ডালিমের আত্মগোপনের দেশের নামের তথ্য পেতে যত বিলম্ব হবে ততই মোসলেম উদ্দিনের আটক করার বিষয়ের ঘোষণাটিও বিলম্ব হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনাসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুলিশের ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিস জারি করা আছে। ২০০৯ সালে এই নোটিস জারির পর প্রতি পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে কিন্তু সরকারের টাস্ক ফোর্স বা আন্তর্জাতিক ইন্টারপোলের পুলিশ- দুই খুনী রশীদ ও ডালিম সম্পর্কে কিছুই জানে না। কয়েক বছর আগে খন্দকার আবদুর রশীদ ও শরিফুল হক ডালিমকে কখনও স্পেন ও কখনও পাকিস্তান, অসমর্থিত সূত্রে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালে জার্মানি, স্পেন ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ মিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ওই তিন দেশে অবস্থান করছে না। ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের আগ পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই লিবিয়ায় অবস্থান করত খন্দকার আবদুর রশীদ। উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ওই খুনী গৃহনির্মাণ ও অন্যান্য ব্যবসা করত। এখন লিবিয়ায়ও অবস্থান করার খবর পাওয়া যাচ্ছে রশীদের। আর শরীফুল হক ডালিম কোন্ দেশে আত্মগোপন করে আছে তার কোন হদিসই করতে পারেনি।
×