ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ বিতরণ ॥ প্রতিজন সুবিধা ভোগীর জন্য কিউকার্ড দেয়া হবে

প্রকাশিত: ২২:১২, ২৭ এপ্রিল ২০২০

ত্রাণ বিতরণ ॥ প্রতিজন সুবিধা ভোগীর জন্য কিউকার্ড দেয়া হবে

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণে এবার প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিজন সুবিধা ভোগীর জন্য একটি করে কিউআর কার্ড দেয়া হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে গড়ে তোলা হবে ডেটাবেজ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে দ্রুততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। সম্প্রতি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মধ্যে জুম অনলাইনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাভাইরাস চলমান পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের জনগণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণে দ্রুততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মধ্যে জুম অনলাইনে আন্তঃমন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমানের সঙ্গে জুম অনলাইনে বৈঠক করেছেন। গত ১৯ এপ্রিল এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক, এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তাগণ অনলাইন বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয় ও দ্রুততর করতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সে বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বিস্তারিত আলোচনা করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত কি সহযোগিতা প্রয়োজন সে বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ হতে জানতে চাওয়া হয়। বৈঠকে জানানো হয় ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় করতে সরকারী এবং বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। এই কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি ও জাতীয় তথ্য সেবা হেল্প লাইন ৩৩৩-এর সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয় এটুআই প্রোগ্রাম সারাদেশে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপকারভোগীদের একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরির জন্য সফটওয়ার তৈরি করা হবে। উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে নির্ভুল ডেটাবেজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। উপকারভোগীদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যেক উপকারভেীগর একটি কিউ আর কার্ড তৈরি করা হবে। মাঠ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপকারভোগীদের তালিকা অনুযায়ী এই কার্ড প্রিন্ট করে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ত্রাণ বিতরণের সময় বিতরণকারী এই কার্ড তার মোবাইল ফোনের এ্যাপসের মাধ্যমে স্ক্যান করবেন। ফলে উপকারভোগীর তথ্য কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে হালনাগাদ হয়ে যাবে এবং সব ধরনের দ্বৈততা ও অনিয়ম পরিহার করা সম্ভব হবে। এছাড়া ডেটাবেজটি তৈরি হলে সরকারী ও বেসরকারী ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় আরও জোরদার হবে বলে জানানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে কেউ যেন খাদ্যসঙ্কটে না ভোগে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারী সেবা সম্পর্কিত হেল্পলাইন ৩৩৩-এর মাধ্যমে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার আবেদন করতে পারবেন। এই আবেদন তালিকা যথাযথ যাচাই-বাছাই করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করবে। এই সেবা প্রদানের জন্য ৩৩৩-এর কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই দুর্যোগকালীন সময়ে জনগণের বৃহত্তর কল্যাণার্থে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এছাড়া এই সময়ে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য-সবজি ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিবহন ও বিতরণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটুআইয়ের একশপ প্লাটফরম ব্যবহারের জন্য তিনি দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি ও উপকারভোগীদের ডেটাবেজ তৈরির করার কাজ শুরু করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ত্রাণ নিয়ে কেউ নয় ছয় করতে পারবেন না। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ চুরির ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ থাকলে এ ধরনের কাজ কেউ করতে পারত না। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
×