ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সর্দি জ্বর, শ্বাসকষ্টে আরও ৮ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৭ এপ্রিল ২০২০

 সর্দি জ্বর, শ্বাসকষ্টে আরও ৮  জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্দি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে ভোলার চরফ্যাশনে এক নারী, কুড়িগ্রামে দুই শিশু, নওগাঁয় তরুণী, লক্ষ্মীপুরে এক শিশু ও এক ব্যবসায়ী, রাজশাহীতে এক বৃদ্ধ এবং ফরিদপুরে এক প্রতিবন্ধী কিশোরী। -খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও স্টাফ রিপোর্টারের। চরফ্যাশন ॥ ভোলার চরফ্যাশনের আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামে রবিবার সকালে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ জ্বর সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মাহমুদা বেগম (৫০) নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। মাহমুদা বেগম উপজেলার হালিমা বাদ গ্রামের সুলতান আহমেদের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি ওই বাড়িতে ঢাকা থেকে এক ব্যক্তি আসেন। তার সংস্পর্শে এসে এই মহিলা অসুস্থ হন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন বসাকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই মহিলা সর্দি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে নাগেশ্বরী এবং ভূরুঙ্গামারীতে উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃতু দুই শিশু এবং তাদের পরিবারের সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। রবিবার ভোরে নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটি নাওডাঙ্গা গ্রামের মোবারক আলীর ৬ মাসের ছেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যায়। নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য,পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, জন্মের পর থেকে ওই শিশু অসুস্থ ছিল। সম্প্রতি তাকে নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার পরিবার। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই শিশুটি ও তার পিতার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অপরদিকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের শাহী বাজার গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের ৬ বছরের কন্যা নাফিজা তীব্র জ্বরসহ খিচুনি ছিল। এ অবস্থায় মেয়েটি রবিবার ভোরে মারা যায়। রিয়াজুল ইসলাম প্রায় কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেছেন। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসএম সায়েম জানান, শিশুটির পিতা ঢাকা ফেরত এবং মেয়েটি তীব্র জ্বর নিয়ে যেহেতু মারা গেছে। সেজন্য অধিকতর শতর্কতার জন্য শিশুটির এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নওগাঁ ॥ নওগাঁয় করোনা উপসর্গ নিয়ে রাহা চৌধুরী (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী মারা গেছে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জেলা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই তরুণী মারা যায়। সে শহরের ঘোষপাড়া মহল্লার রান্টু চৌধুরীর মেয়ে। স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরী নওগাঁ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করত এবং আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিগত সাতদিন যাবত মেয়েটি অসুস্থ ছিল। শ্বাসকষ্ট এবং জ্বর বেড়ে যাওয়ায় মেয়েটি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাৎক্ষণিক তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দেড়টায় মারা যায় ওই তরুণী। লক্ষ্মীপুর ॥ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে রবিবার সকালে জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছে সাথী আক্তার (৬) নামে এক শিশু ও ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন (৩২)। রবিবার সকালে ৯টার দিকে কমলনগরে চরপাগলা নিজ বাড়িতে মারা যায় শিশু সাথী। তার পিতার নাম কামাল হোসেন। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সাথীর পিতার বাড়িটি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে একইদিন ভোরে একই উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বালুরচর এলাকার নিজ বাড়িতে মারা যান ব্যবসায়ী জসিম। তার নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। মৃত ওই ব্যবসায়ীর বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ কামনাশিস মজুমদার ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু তাহের। রাজশাহী ॥ করোনা শনাক্তের পর থেকে চিকিৎসায় নির্মম দুর্ভোগের মধ্যেই রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে আব্দুস সোবহান নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস। তার বাড়ি জেলার বাঘা উপজেলার দক্ষিণগাঁওপাড়া গ্রামে। রাজশাহীতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু হলো তার। গত ১৭ এপ্রিল জ্বর ও প্রসাবে জ্বালাপোড়া নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন আব্দুস সোবহান। সেখানে তিনদিন থাকার পর চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে তার করোনা টেস্ট করা হয়। এরপর তার করোনা ধরা পড়ে। পরে তাকে রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসায় দুর্ভোগের বর্ণনা দিলেন ছেলে ॥ রাজশাহীতে করোনা আক্রান্ত হওয়া প্রথম মৃত্যু বৃদ্ধ সোবহানের চিকিৎসা নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে মনি। বাবার মৃত্যুর পর রবিবার সকালে ছেলে মনি জানান, তার পিতার ১৯ দিন থেকে খাওয়া বন্ধ ছিল। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পায়নি। তার বাবার কখনও শ্বাসকষ্ট ছিল না। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তার বাবার প্রচ- শ্বাসকষ্ট হতো, জোরে জোরে নিশ্বাস নিতেন। শেষ কটা দিন মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন। কথা বলতে পারতেন না। ইশারা ইঙ্গিতে তার চাহিদা বোঝানোর চেষ্টা করতেন। মনি বলেন, ‘তার বাবাকে আইসিইউতে নেয়ার কথা বললেও বিভিন্ন অজুহাতে নেয়া হয়নি। দুর্ভোগের ভয় দেখিয়ে আইসিইউ সুবিধা পাননি তিনি।’ তিনি বলেন, ‘আইসিইউ’র কথা বলা হলে নিজেকে গাড়িতে করে আইসিইউতে নিয়ে যেতে হবে বলে জানানো হয়। রোগের কারণে কেউ গাড়ি নিয়েও আসবে না বলে জানানো হয়। তিনি বলেন, আইসিইউতে থাকা খাওয়ার সমস্যা হবে। যেখানে অনেক দুর্ভোগ। তাই যেখানে (আইডি হাসপাতাল) তোমার বাবা আছে সেখানেই ভাল আছে বলে আমাকে জানানো হয়েছিল।’ মনি আরও বলেন, আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানালা থেকে একজন চিকিৎসক তার বাবাকে দিনে একবার মাত্র পর্যবেক্ষণ করতেন। কেউ কাছে না আসায় বাবার শরীরে স্যালাইন আমাকেই পুশ করতে হয়েছে। নাকে পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেনও তিনি নিজে দিয়েছেন বলে জানান মনি। তিনি বলেন, কোন চিকিৎসক কোন চিকিৎসা দেয়নি। চিকিৎসায় নির্মম অবহেলা করা হয়েছে। ফরিদপুর ॥ ফরিদপুরের সদরপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার দুপুর ১টার দিকে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথে মারা যায় ওই কিশোরী। ওই কিশোরীর শরীর থেকে বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখার জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ওই কিশোরীর বয়স ১৪। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। গত আটদিন ধরে সে জ্বরে ভুগছিল। তার বাড়ি সদরপুরের সদর ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামে। সদরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার বলেন, আমরা জেনেছি ওই কিশোরী দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে ভুগছিল। গত কয়েকদিন ধরে তার জ্বর, কাশি ও মাথা ব্যথা ছিল।
×