ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশ করানোর দাবি বিজিএমইএর নিষেধ সত্ত্বেও দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন অনেক শ্রমিক

গার্মেন্টস খুলল ॥ অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের চেষ্টায় সীমিত পরিসরে

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ২৭ এপ্রিল ২০২০

গার্মেন্টস খুলল ॥ অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের চেষ্টায় সীমিত পরিসরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অদৃশ্য প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি রক্ষায় আতঙ্কের মধ্যেই দীর্ঘ লকডাউনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা হলেও শিথিল হচ্ছে। করোনার মহামারীর মধ্যেও স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতে বিশ্বের বড় বড় দেশের মতো বাংলাদেশও সে পথেই হাঁটতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে দীর্ঘ একমাস পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করেছে তৈরি পোশাক শিল্পের দুই খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। করোনা মোকাবেলায় শুধু কারখানায় নয়, ছুটির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীন দফতরসহ ১৮টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের দফতরসমূহ সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থনীতির আধার বলে খ্যাত বেশকিছু পাটকল, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পসহ কিছু কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও সচল রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। করোনার কারণে গোটা বিশ্বই এখন স্থবির, ঘরবন্দী। সারাবিশ্বে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত এক মাস ধরেই বিশ্বের মতো বাংলাদেশও কার্যত স্থবির হয়ে রয়েছে। গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারী ছুটি ঘোষণার পর থেকে কয়েক দফায় আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকারী ছুটির পাশাপাশি গণপরিবহন, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, দোকান-পাট, শপিংমলসহ সবকিছুই দীর্ঘ একমাস ধরে রয়েছে বন্ধ। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও কার্যত গোটা দেশেই চলছে অনানুষ্ঠানিক লকডাউন। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থাসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা করোনার কারণে গোটা বিশ্বেই মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই আশঙ্কা থেকেই দেশের অর্থনীতি ও মানুষকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফায় প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। বৈশ্বিক এই বাস্তবতায় বড় বড় দেশগুলোও নিজেদের স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি কিছুটা হলেও সচল করতে ইতোমধ্যে কঠোর লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে অর্থনৈতিক খাতগুলোকে স্বল্প পরিসরে চালু করা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে করোনাভাইরাসের মহামারীতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করেছে তৈরি পোশাক শিল্পের দুই খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এরমধ্যে ঢাকা ও আশপাশের বেশ কিছু কারখানা চালু করেছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ। এসব কারখানায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে শ্রমিকদের প্রবেশ করানো হয়েছে। জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ২৬ মার্চ থেকে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে পোশাক কারখানাগুলো। তার এক মাসের মাথায় জরুরী রফতানি আদেশ পালন করতে কীভাবে স্বল্প পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কারখানা চালু করা যায় সেই আলোচনা শুরু হয়। মালিকপক্ষের পাশাপাশি খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবে সায় দেয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার এই সময়ে সতর্কতার সঙ্গে কীভাবে কারখানা চালু করা যায় তার একটি প্রটোকল তৈরি করে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ৮টি অঞ্চলভিত্তিক পোশাক কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ সিদ্ধান্তের পর রবিবার মিরপুরসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা খুলতে দেখা গেছে। এসব কারখানায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে শ্রমিকদের প্রবেশ করানো হয়েছে। গাজীপুরের ন্যাচারাল ডেনিমস কর্মী সুমি আক্তার বলেন, বিকেলে আমাকে ফোন করে বলছে, রবিবার গার্মেন্টস খোলা। তাই, নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসছি অটো দিয়ে। এখানে এসে পড়েছি পুলিশের বাধায়। তবে, যেভাবেই হোক সকাল ৭টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে। না হলে চাকরি থাকবে না। টঙ্গীর জাবেদ জোবেদ ডাইং ফ্যাক্টরির কর্মী রুহুল আমিন বলেন, গার্মেন্টস থেকে ফোন করে বলছে রবিবার থেকে গার্মেন্টস খুলবে। এ খবর পেয়ে ইফতারের পর মেয়েকে নিয়ে গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী গ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি অটোতে করে। জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, সকাল থেকে আমরা গাজীপুর ও আশুলিয়ায় শ্রমিকদের কাছ থেকে খবর পাচ্ছি। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা সদস্যদের বলেছি, উপস্থিতি কম রাখার সুবিধার্থে নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন খোলার জন্য। পুরো গার্মেন্টস রবিবারই খুলবে না। এর পরে ২ মে থেকে কারখানাগুলো পুরোপুরি খুলবে। শনিবার সদস্যদের কাছে পাঠানো বিজিএমইএর এক নির্দেশনায় বলা হয়, বিজিএমইএ প্রাথমিকভাবে কারখানার কাছাকাছি বসবাসকারী শ্রমিকদের কাজে নিয়োগের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত সম্প্রতি গ্রাম থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশের অনুমতি না দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। এদিকে শনিবার রাতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক কারখানা খোলার বিষয়টি অবহিত করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে। শুরুতে রবিবার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কিছু কারখানা, ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা, ৩০ এপ্রিল রূপগঞ্জ, নরসিংদী, কাঁচপুর এলাকা, ২ ও ৩ মে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার কারখানা চালু করা হবে। কারখানা খোলার ক্ষেত্রে শুরুতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। এই চিঠি পাওয়ার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিক একটি চিটি ইস্যু করেছে। এতে সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে কারখানা চালু করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ এদিকে রাজধানীর মালিবাগে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। রবিববার সকাল ৮টা থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেলের সামনে তাহসিন ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা এ সড়ক অবরোধ করে। রাস্তা অবরোধ করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষোভ করায় রাস্তার একপাশ বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
×