ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা দুর্যোগে মানবিক শিল্পী লিজার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০০:২২, ২৬ এপ্রিল ২০২০

করোনা দুর্যোগে মানবিক শিল্পী লিজার উদ্যোগ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ করোনায় সৃষ্ট মহামারী দুর্যোগে পৃথিবী যেন অনেকটাই ওলটপালট হয়েছে। ভয়ানক এই ভাইরাসে প্রতি মুহূর্তে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। বিশ্বের নানাপ্রান্তে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিশ্বব্যাপী মহামারীর ফলে তৈরি হয়েছে নানাবিধ শঙ্কা। চরম আর্থিক এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন মানুষ। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থাতেও চরম সঙ্কটকালীন মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। তেমনি একজন মানবিক শিল্পী, আসমা আক্তার লিজা। শিল্প সংস্কৃতি চর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ এ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি তার এহেন সামাজিক এবং মানবিক কর্মকা-ের প্রশংসা করে তাকে উৎসাহ দিয়েছেন সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ, নাট্য ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, মাসুম আজিজ, কামাল বায়েজিদ, নাদের চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিজান, এইচআর অনিকসহ অনেকেই। ব্যক্তিগতভাবে আসমা আক্তার লিজা একজন সুঅভিনেত্রী, নাট্যকার, মেধাবী পরিচালক এবং দক্ষ সংগঠক। তবে সব কিছু ছাপিয়ে তিনি একজন মানবিক ও সামাজিক মানুষ। করোনা দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষের জন্য তিনি এগিয়ে এসেছেন। নিজের সামর্থ্য অনুয়ায়ী রাস্তায় ত্রাণ নিয়ে ঘুরছেন, নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে ছুটে চলেছেন মানুষের সেবায়। কাছের মানুষের পাশাপাশি যখন যার সমস্যার কথা শুনছেন তার পাশে থাকার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তুখোড় মঞ্চঅভিনেত্রী লিজা একজন মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিতি পান রানা প্লাজা ধ্বসের সময়। চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে রানা প্লাজায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে ভূমিকা রাখেন। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। কিন্তু তাতে কি আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবসময় তিনি সোচ্চার। সম্প্রতি করোনায় সঙ্কটে থাকা কাছের এবং দূরের মানুষের সেবার আবার পথে নেমেছেন। করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে এই মানবিক মানুষটি নিজের সামর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে নিজের চেষ্টা নিজের দুর্যোগকালীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ত্রাণ বিতরণে সুবিধার জন্য চুল বিসর্জন দিয়েছেন আসমা আক্তার লিজা। তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে তার জীবন সঙ্গী জ্যোতি। অসহায় বঞ্চিত ক্ষুধার্ত গৃহবন্দী মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, অসুস্থদের চিকিৎসার অর্থ। অনেকেই তাকে এই সামাজিক কর্মকা-ে উৎসাহ দিচ্ছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই লিজার। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অবহেলিত পথ শিশুদের নিয়েও কাজ করছেন। অসহায় ও দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাম্প্রতিককালে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন। বিশেষ করে ঢাকা মেডিক্যালসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ মানুষের সেবায় রাতের পর রাত দিনের পর দিন তিনি হাসপাতালে পরে থাকেন। কোন রোগীর সন্ধ্যান পেলে সেসব হাসপাতালে ছুটে যান এবং অসহায় রোগীর পাশে থেকে সেবা শুশ্রƒষা করে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। ফেসবুকভিত্তিক দাতব্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহযোগিতার জন্য কাজ করছেন তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের শিশুদের চিকিৎসায় কাজ করেন। এছাড়া তিনি ‘শিশুদের জন্য আমরা’, ‘স্ক্যানার’ প্রবৃত্তি দাতব্য সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি লালমাটিয়াতে পথ শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। আপাদমস্তক একজন শিল্পী আসমা আক্তার লিজা। সুঅভিনেত্রী, নাট্যকার, নির্দেশক এবং সংগঠক হিসেবে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের (সিএটি) প্রধান কামালুদ্দিন নীলুর পরিচালনায় তার নাটকের পথচলা শুরু। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নাটকে অভিনয়, নাটক রচনা ও নাটক পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। ২০১২ সালে তার প্রতিষ্ঠিত ‘নাটনন্দন’ নাট্যদলের বিভিন্ন প্রযোজনা নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনয় করেন। লিজা চলচ্চিত্র পরিচালক অভিনেত্রী তিনি বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ‘অনুরাধা’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। ‘বৃষ্টি নারী’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। নিজের ক্যারিয়ারের নানাবিধ কর্মকা-ের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সম্মাননা, ঢাকা পদাতিকের ৪০ বছর পূর্তিতে ‘গাজী জাকির হোসেন’ সম্মাননা, ‘মৌলিক কমিউনিকেশন বিশেষ সম্মাননা’ পেয়েছেন। একটি জাতীয় দৈনিক তাকে ‘বাংলার মাদার তেরেসা’ নামে অভিষিক্ত করেছে। আসমা আক্তার লিজা অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো ‘চন্দ্রাবতী’, ‘নারী ও রাক্ষসী’, ‘কৃষ্ণ সারথী’, ‘হরিণ ভাঙ্গার মাঠ’, ‘আবারো বাংলাদেশ’, ‘দ্য মেটাফরমেসিস’। এছাড়াও তিনি অসংখ্য নাটক রচনা ও নিদের্শনা দিয়েছেন।
×