ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মনোজগতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা

চার দেয়ালে বন্দী শিশু, পাল্টে যাচ্ছে আচরণ!

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ এপ্রিল ২০২০

চার দেয়ালে বন্দী শিশু, পাল্টে যাচ্ছে আচরণ!

মাজহার মান্না ॥ নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে হতে এখন বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই এটি এখন বিশ্ব মহামারীতে রূপ নিয়েছে! স্থান ভেদে প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি মারাও যাচ্ছে। ফলে মানুষের মনে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব বয়সী মানুষেরই মানসিক অবস্থার অবনমন ঘটছে। তেমনই শিশুরও মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। বর্তমানে করোনার আতঙ্কে চার দেয়ালে বন্দী থাকা শিশুর কাছে বাইরের জগত ছোট হয়ে আসছে। এই সময়ে তাদের মেজাজ পরিবর্তন হয়ে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। অনেক শিশুর স্বাভাবিক আচরণই পাল্টে যেতে শুরু করেছে, যা শিশুর জন্য খুবই মারাত্মক। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মহামারী বা দুর্যোগ-দুর্দশার সময়ে শিশুদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তখন তারা বিভিন্নভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। ফলে ওদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ, অতিরিক্ত রাগ, পরিবারের সদস্যদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা, সারাক্ষণ চুপ থাকা ইত্যাদি অদ্ভুত কিছু প্রবণতা দেখা যায়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের শিশুর মনোদৈহিক প্রতিক্রিয়াকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। এই সময়ে শিশুর যে কোন চাহিদার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে এবং শিশুকে যথাসম্ভব বেশি আদর করতে হবে। শিশুর প্রতি খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যাতে সহজেই সে পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, যেহেতু করোনাভাইরাস কোথাও কোথাও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বড়রা তো বটে, শিশুকেও নিয়ে বাইরে বের হওয়া যাবে না। তাই সবাইকে অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতন থাকতে হবে। মহামারীর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অভিভাবকগণ শিশুর নানা বায়না পূরণ ও আকুতি মিনতিতে অস্থির সময় পার করছেন। যে শিশুর মনোজগতে প্রতিনিয়ত খেলা করে বৈচিত্র্যময় নতুন পৃথিবী! সে তার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে চায় এই পৃথিবীকে। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। নির্বাক আকাশ দেখতে দেখতে শিশুর মনে হাজারো প্রশ্ন জাগে রঙিন দুনিয়া নিয়ে। প্রতিনিয়ত এমন প্রশ্নবাণে জর্জরিত বাবা-মা পাগলপ্রায়। উচ্চশিক্ষিত গৃহবধূ জারিন তানজিম জানান, একান্নবর্তী পরিবারে থেকে স্বামী-সন্তানকে ঘিরেই তার জগত সংসার। বর্তমানে তিন বছরের মাশরুফা মুনতাহার আবেগের কাছে যেন তিনি নতজানু। খুব কষ্টে একমাত্র শিশু কন্যাকে ঘরে আটকে রাখতে গিয়ে মানসিকভাবে একটা কঠিন সময় পার করছেন বলে জানান। স্কুল শিক্ষিকা নূরুন্নাহার জানান, বর্তমান পরিস্থিতি একদমই ভিন্ন! অনেক সময় কাজে বাইরে বের হতে হয়। যখন বাড়ি ফিরি তখন পাঁচ বছরের সামিহা তাবাসুম দৌড়ে কোলে উঠবার জন্য ব্যাকুল হয়। কিন্তু কাপড়-চোপড় বদলে, গোসল করে, স্যানিটাইজার মেখে পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওকে ছুঁতে পারি না। আর বাবা গাজী মহিবুর রহমানকে মেয়ে প্রায়ই বলে, বাইরে বের হতে। তাকে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে আসতে। কিন্তু মেয়ের আবদার বাবা-মা কিছুতেই রাখতে পারছি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে শিশু ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে একঘেঁয়ে হয়ে ওঠে। এমনিতেই তারা খুব চঞ্চল প্রকৃতির। তাকে এখন চার দেয়ালের পরিবেশেই থাকতে হয়। বড়জোর সে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় বা বাসার রেলিং-ছাদে সময় কাটাতে হচ্ছে। এতে শিশুর চরিত্র পাল্টে গিয়ে তার আচরণে এক ধরনের পরিবর্তন আসা খুবই স্বাভাবিক। তাই চলমান করোনা আতঙ্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে শিশুদের মনোজগতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
×