ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানকে ১৬ বছর পর হারানোর স্বস্তি

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১৭ এপ্রিল ২০২০

পাকিস্তানকে ১৬ বছর পর হারানোর স্বস্তি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ১৯৯৯ সালের ৩১ মে নর্দাম্পটনে ৬২ রানে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পরস্পরের সপ্তম সাক্ষাতে সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। এরপর টেস্ট মর্যাদা এসেছে, অন্য অনেক পরাশক্তিকেই হারিয়ে দেয়ার স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে টানা ১৬ বছরে সবমিলিয়ে ২৫ ওয়ানডেতে পরাজয়ের গ্লানি সঙ্গী হয়েছে। অবশেষে ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডে জয় পায় বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ছিলেন এক ম্যাচ নিষিদ্ধ। তাই সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেদিন মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ গড়ে অনেক রেকর্ড। জোড়া শতক হাঁকান দু’জন। তামিম ইকবাল ১৩৫ বলে ১৩২ ও মুশফিকুর রহীম ৭৭ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলেন। নিজেদের সর্বোচ্চ ৬ উইকেটে ৩২৯ রানের দলীয় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ সেদিন। জবাবে পাকরা ৪৫.২ ওভারে ২৫০ রানে গুটিয়ে গেলে ৭৯ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। পাকদের বিরুদ্ধে সবমিলিয়ে এ জয়টি ছিল ৪০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে (২৫ ওয়ানডে, ৭ টি২০ ও ৮ টেস্ট) হারের পর। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি বিজয়ের দিন কেনিয়াকে হারানোর পর দেশের ক্রিকেটের চিত্র আমূল বদলে গিয়েছিল। আর প্রথমবার বিশ^কাপ অংশগ্রহণেই ক্রিকেট পরাশক্তি পাকদের হারানোতে ক্রিকেটে কয়েক ধাপ অগ্রসর হয় বাংলাদেশ। এর ভেতরে অস্ট্রেলিয়া (১ বার) ব্যতীত ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পরাশক্তিরা একাধিকবার হেরেছে। কিন্তু পাকদের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই জয়টি ছাড়া শুধুই হতাশা। দু’টি এশিয়া কাপ এবং ওয়ানডে ও টি২০ বিশ^কাপের কারণে দু’দলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজও হয়নি ২০১১ সালের পর। ততদিনে বাংলাদেশ দল টানা ২২ ওয়ানডেতে হেরে গেছে পাকদের কাছে। তবে ২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনালে মাত্র ২ রানের হার কাঁপিয়ে দিয়েছিল দেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরাত্মা। সেই আসরেই গ্রুপ প্রথম রাউন্ডে মাত্র ২১ রানে হারতে হয় পাকদের কাছে। এরপর দু’দলের আবার সাক্ষাত হয় ২০১৪ এশিয়া কাপে। এখানেও আক্ষেপ সঙ্গী হয়, মিরপুরে আগে ব্যাট করে ৩২৬ রানের বিশাল সংগ্রহ নিয়েও শেষ পর্যায়ে শহীদ আফ্রিদির তা-বে মাত্র ৩ উইকেটে হারে বাংলাদেশ ১ বল বাকি থাকতে। সবমিলিয়ে টানা ২৫ ওয়ানডে হার পাকিস্তানের কাছে। তবে ২১০৫ বিশ^কাপে দুর্দান্ত সময় কাটে বাংলাদেশ দলের। সেই আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ মাশরাফির নেতৃত্বে। তবে ম্যাচটিতে স্লো-ওভার রেটের কারণে ১ ওয়ানডের জন্য নিষিদ্ধ জন মাশরাফি। তাই ১৭ এপ্রিল সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাশরাফি খেলতে পারেননি, সাকিব দেন নেতৃত্ব। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ৩২৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তখন সেটিই ছিল দেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড। আজহার আলীর অধিনায়ক হিসেবে এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাদ নাসিমের অভিষেক হয়। তামিম ১৩৫ বলে ১৫ চার, ৩ ছক্কায় ১৩২ রান করার পথে মুশফিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ১৭৮ রানের জুটি গড়েন। তখন সেটিই ছিল দেশের পক্ষে যে কোন উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড। মুশফিক মাত্র ৬৯ বলে সেঞ্চুরি আদায় করেন যা বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় দ্রুততম। শেষ পর্যন্ত ৭৭ বলে ১৩ চার, ২ ছক্কায় ১০৬ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মুশফিকের এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শেষ ১৫ ওভারে ১৪৮ রান ওঠে বাংলাদেশের। প্রথমবার ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তামিম ও মুশফিক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১৩২ রানের রেকর্ডও গড়েন তামিম। ওয়াহাব রিয়াজ ৫৯ রানে ৪ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটি হয়েছে পাকদের। পরে আরাফাত সানির ঘূর্ণি ও তাসকিন আহমেদের পেসে ২৮ বল বাকি থাকতেই তারা ২৫০ রানে গুটিয়ে যায়। সানি ও তাসকিন ৩টি করে উইকেট নেন। আজহার ৭২, রিজওয়ান ৬৭ ও হারিস সোহেল ৫১ রান করেন। ৭৯ রানের বিশাল জয়ে অবশেষে স্বস্তি আসে বাংলাদেশের তাঁবুতে। ১৬ বছর পর আবার পাকদের হারিয়ে দেয়ার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। এই ১৬ বছরে মোট ৮ টেস্ট, ৭ টি২০ ও ২৫ ওয়ানডে পাকদের কাছে হারতে হয়েছে। তাই ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল মিরপুরে পাওয়া সেই জয়টি ছিল টাইগারদের জন্য অনেক বড় ফাঁড়া কাটিয়ে স্বস্তিতে ফেরার।
×