ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে টস করতে নেমে জানান, সেটিই তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি২০

মাশরাফির প্রথম বিদায়

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৭ এপ্রিল ২০২০

মাশরাফির প্রথম বিদায়

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইনজুরির কারণে টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়নি ২০০৯ সালের পর। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিতে হয়নি, কারণ আশা ও চেষ্টায় ছিলেন আবার ফেরার। কিন্তু বিদায় না নিলেও শেষ হয়ে গেছে টেস্ট ক্যারিয়ার। তবে ৩ বছর আগে ৬ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে হুট করেই প্রথমবার কোন ফরমেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে টস করতে নেমে জানান সেটিই তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি২০। হঠাৎ করে তার দেয়া সেই ঘোষণায় পুরো ক্রিকেট বিশ্বই বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ দারুণ ধাক্কা খেয়েছিল। তবে বিদায়ী সেই ম্যাচে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ৪৫ রানে জয় তুলে নেয়। কলম্বোয় হওয়া সেই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে সফরকারী বাংলাদেশ। ফলে মাশরাফির হঠাৎ করে অবসরের ঘোষণাটাও রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ৩৬ বছর বয়সী মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার পুরোপুরিই সমালোচনার তীর্যক বাণে বিদ্ধ। একমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে গত বিশ্বকাপ থেকেই ব্যক্তিগত ফর্মটা পড়তির দিকে রয়েছে তার। এ কারণে সমালোচিত হয়েছেন এবং অধিনায়ক হিসেবে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন কটাক্ষও শুনতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এবার ঘরের মাটিতে গত ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ শেষে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মাশরাফি। সেই সিরিজের শেষ ম্যাচেও জিম্বাবুইয়েকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। ফলে দেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে দলকে ৫০ জয় এনে দেয়ার অবিস্মরণীয় মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। এরপর ওয়ানডে খেলা চালিয়ে গেলেও এখন সামর্থ্য প্রমাণ করেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে হবে মাশরাফিকে। সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা শেষের পথেই তার। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে খেলতে পারেন না ২০০৯ সাল থেকে। ইনজুরির কারণে ফিটনেস দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলার জন্য যথেষ্ট না থাকায় চিকিৎসকরা তাকে নিষেধ করে দিয়েছেন। তবু কয়েকবার লঙ্গার ভার্সন জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) খেলে নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। বিদায় না বলেও টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে মাশরাফির। আর প্রথমবার বিদায় বলে ছাড়তে পেরেছেন শুধু টি২০ ক্রিকেটই। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল, কলম্বো, শ্রীলঙ্কা। সেদিন ছিল স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টি২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে হেরে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। গুঞ্জন ওঠে অধিনায়ক মাশরাফির পছন্দ অনুসারে একাদশ সাজানো হয়নি। আর সে কারণে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে তার। এমন পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল একই ভেন্যুতে টস করতে নেমেই ‘বোমা’ ফাটিয়ে দেন মাশরাফি অবসরের ঘোষণা দিয়ে। আন্তর্জাতিক টি২০-তে বল হাতে তেমন ভাল সময় যাচ্ছিল না তার। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর আবার নেতৃত্ব করতে গিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বনিবনাও হচ্ছিল না। সবমিলিয়ে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। হয়তো সতীর্থরা বিষয়টি আগেই জানতে পেরেছিলেন। তাই জানপ্রাণ উজাড় করে খেলেছেন তারা ‘প্রিয় ক্যাপ্টেনের’ বিদায়ী টি২০ ম্যাচে। বিদায়ী ম্যাচে টস জেতেন মাশরাফি। সাকিব আল হাসানের ৩১ বলে ৩৮, ইমরুল কায়েসের ২৫ বলে ৩৬ আর সৌম্য সরকারের ১৭ বলে ৩৪ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৬ রানের দারুণ পুঁজি পায় বাংলাদেশ। মাশরাফি ব্যাট হাতে নেমে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন লাসিথ মালিঙ্গার বোলিংয়ে। জবাবে মুস্তাফিজুর রহমানের ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট ও সাকিবের ৪ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেটের সুবাদে লঙ্কানদের ১৩১ রানেই গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। মাশরাফি ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে সিকুগে প্রসন্নকে শুধু বোল্ড করতে পেরেছিলেন। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ভাল না হলেও মাশরাফি দলকে জয় এনে দিয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ টি২০ ম্যাচে। প্রথমবার কোন বড় দলের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে টি২০ সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ দল ১-১ সমতায়। এর আগে হল্যান্ড (২০১২) ও জিম্বাবুইয়ে সফলে (২০১৩) ১-১ সমতায় টি২০ সিরিজ শেষ করেছিল বাংলাদেশ। আর ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে একমাত্র টি২০ ম্যাচটি না হওয়ায় সিরিজ ড্র হয়। প্রথম বিদায়ের ৩ বছর পর মাশরাফির সেই দিন পেরিয়ে গেল সোমবার।
×