ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফোনালাপ ফাঁস

অসুস্থ রিগ্যান হাসপাতালে, নতুন ডিসি কুড়িগ্রামে যোগ দেননি

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৮ মার্চ ২০২০

অসুস্থ রিগ্যান হাসপাতালে, নতুন ডিসি কুড়িগ্রামে যোগ দেননি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম, ১৭ মার্চ ॥ কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ও নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান এখনও কুড়িগ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রিগ্যান জানিয়েছেন, তার ডান হাতে ফাটল ধরা পড়েছে। এছাড়া সারা শরীরে ব্যথা ও মানসিকভাবে আতঙ্কে দিন কাটছে তার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আরিফুলকে পরীক্ষা- নিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এদিকে ঘটনায় প্রত্যাহারকৃত জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের স্থলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এখনও যোগদান করেননি। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি যোগদান করতে পারেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফুল ইসলাম রিগ্যান জানান, সোমবার এক্সরে রিপোর্টে তার ডান হাতে ফাটল ধরা পড়ছে। চিকিৎসকরা ওষুধ ও ব্যান্ডেজ দিয়েছে। দু’সপ্তাহ চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া হাত, পা ও বুকে মারের ক্ষত রয়েছে। এখনও সারা শরীরে ব্যথা ঠিকমত হাঁটতে পারছেন না। সাংবাদিক আরিফুলকে নির্যাতনের হোতা সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন জামিনপ্রাপ্ত এক আসামিকে ভোরবেলায় জেল থেকে অফিসে এনে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেন। মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিশ^নাথ অভিযোগ করে বলেছেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আরডিসি নাজিম উদ্দিন নাগেশ^রী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামে এক অভিযান চালিয়ে সরকারী বিলে মাছ চাষের অভিযোগে বিশ^নাথ ও বৃদ্ধ মজনু মিয়াকে ধরে এনে ২ বছরের সশ্রম কারাদ- দেন। এ সময় বিশ^নাথকে মারধর করলে তার কাকা বাবলু নম দাস প্রতিবাদ জানান। এ কারণে তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি দেন কমিশনার নাজিম উদ্দিন। পরদিন মজনু মিয়া আদালত থেকে জামিন নিলেও বিশ^নাথের মামলার নথি নিতে গেলে গালিগালাজ করে ফিরিয়ে দিয়েছেন তার স্বজনদের। সোমবার বিশ^নাথের স্বজনরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুজাউদ্দৌলার কাছে অভিযোগ করে নথি তোলেন এবং জামিন আবেদন করেন। তিনি জামিন মঞ্জুর করলেও সন্ধ্যা হওয়ায় জেল থেকে মুক্ত হননি। সোমবার ভোর ৬টায় আরডিসি নাজিম উদ্দিনের ড্রাইভার বিশ^নাথকে জেল থেকে বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দোতলায় একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে আরডিসি তাকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়নি মর্মে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করে রেকর্ড করে নেন। পরে র‌্যাবের ভয় দেখিয়ে বাসযোগে রংপুরে পাঠাতে চান। কিন্তু বিশ^নাথ বেঁকে বসায় তা সম্ভব হয়নি। পরে শহরের খলিলগঞ্জ এলাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকার যোগাযোগ করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় চলছে। কথোপকথনে রিগ্যান জানতে চান তিনি এনকাউন্টারের মতো অপরাধ করেছেন কী না? জেলা প্রশাসক জবাবে বলেন, ‘এনকাউন্টারের মনোভাব আমাদের আসলেই ছিলনা।’ রিগ্যান তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, ‘তোমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ভাল থাকবে ইনশ্আাল্লাহ। চারটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে রিগ্যান সেগুলো ফেরত চান।’ জবাবে জেলা প্রশাসক কাগজ ফেরত দেয়ার আশ^াস দেন এবং বলেন, ‘তোমার মামলা প্রত্যাহার করে দিব। একটু সময় দিবা। একটা দুইটা শুনানি লাগবে। তোমার চাকরির বিষয়ে টেনশন করিও না।’
×