ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে

আজই সিরিজ নিশ্চিত করতে চান মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ১২:৩১, ৩ মার্চ ২০২০

আজই সিরিজ নিশ্চিত করতে চান মাশরাফিরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাত্র ১৪ মাস আগেই ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে ২০১৯ সালে দুটি ওয়ানডে সিরিজ খেলে দুটিতেই ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। তবে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সফরে সেই দুটি হারের মাঝে আছে অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপে মাত্র ৩ জয়ের বিপরীতে ৫টিতে হেরে বাজে ফলাফল নিয়ে ফেরে। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফর থেকে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরে আর কোন ওয়ানডেই খেলার সুযোগ হয়নি। এবার নতুন বছরে প্রথম ওয়ানডে সিরিজই জেতার সুযোগ মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী জিম্বাবুইয়েকে সহজেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের সুযোগ। আজ প্রথম ম্যাচের ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। দিবারাত্রির ম্যাচটি দুপুর ১টায় শুরু হবে। সিরিজ হার ঠেকাতে এই ম্যাচ জিতে সমতা আনতে বদ্ধপরিকর জিম্বাবুইয়েও। সেজন্য ব্যাটিংয়ে মনোযোগী তারা। ওয়ানডে ক্রিকেটে অন্য দুই ফরমেটের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন দল বাংলাদেশ। গত ৭ মাস ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তেমন খেলতে পারেনি দল। এই সময়ের মধ্যে কয়েকটি টেস্ট খেলে চরম ভরাডুবি হয়েছে। টি২০ ক্রিকেটেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। সে কারণে দলগতভাবে চরম ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর পেরিয়ে গেছে ১৪ মাস। এর মধ্যে গত বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জাটা বরণ করতে হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে মাশরাফিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন আয়ারল্যান্ডে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে। আইরিশদের ও ক্যারিবীয়দের হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সেটাই প্রথম কোন শিরোপার স্বাদ পাওয়া। বিশ্বকাপের আগে এমন পারফর্মেন্সের পর বাংলাদেশ দলটিকে নিয়ে বিশ্বব্যাপিই ছিল আগ্রহ। সেই শুরুটাও হয়েছিল স্বপ্নের মতো, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষেও জয় তুলে নেয়। কিন্তু আর কোন ম্যাচে সেভাবে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি মাশরাফিদের। সবমিলিয়ে ব্যর্থ বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরে সুযোগ ছিল নিজেদের ফিরে পাওয়ার। কিন্তু সেই সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি ছাড়াও অনেকেই খেলেননি। বিশ্বকাপের সুপার পারফর্মার সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ছিলেন অনুপস্থিত। সে কারণে ফলাফল হয়েছে যাচ্ছেতাই রকমের বাজে। ৭ মাস আগের সেই স্মৃতি নিয়ে রবিবার পুনরায় ওয়ানডে খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাটিতে বরাবরই দুরন্ত বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড গড়ে। ১৬৯ রানে জিম্বাবুইয়েকে পরাজিত করার পর এখন সিরিজ জয়ের পালা। পিঠের ইনজুরিতে দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে অনুপস্থিত থাকা সাইফউদ্দিনও ফিরেছেন দারুণভাবে। ব্যাট হাতে ঝলক দেখানোর পর করেছেন দুর্দান্ত বোলিং। অধিনায়ক মাশরাফিও নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। ৫ ম্যাচ পর উইকেটের দেখা পেয়েছেন। দীর্ঘ সময় পর ওপেনিংয়ে ফিরেই ক্যারিয়ারসেরা ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন লিটন কুমার দাস। রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন অপরিহার্য বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবালও। তার এখন স্বরূপে ফেরার অপেক্ষা। দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে খেলতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তও বেশ সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও মিতব্যয়ী বোলিং করে নিজেদের ফিরে পাওয়ার ছাপ রেখেছেন। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে দলগতভাবে তারা আবার জ্বলে উঠলেই ১৪ মাস পর আরেকটি সিরিজ জয় পাওয়া সম্ভব হবে। ২০১৮ সালে ৩টি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলে সবই জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একটি সিরিজ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। আর গত বছর দুটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই হেরেছে। সে দুটিই ছিল দেশের বাইরে। জিম্বাবুইয়েকে আজ হারিয়ে সিরিজ জেতার মধ্য দিয়ে মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে খারাপ সময় গেছে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ বাংলাদেশ দলের। একমাত্র টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় এবং প্রথম ওয়ানডেতে রেকর্ড ব্যবধানের জয়ে এখন নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে স্বাগতিকরা। সাকিব নেই এবার নিষেধাজ্ঞার কারণে। তাই ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে জিম্বাবুইয়ে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী ছিল জয় তুলে নেয়ার জন্য। এমনকি সিরিজ জয়ের আশাই করছিল তারা। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে তারা। অবশ্য দুই অপরিহার্য ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই নামতে হয়েছে তাদের প্রথম ম্যাচে। আরভিন-উইলিয়ামস খেলতে পারেননি। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে নামবেন তারা। এতে ব্যাটিং শক্তিটা বাড়বে নিঃসন্দেহে। প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে তাদের। এ কারণেই দ্বিতীয় ওয়ানডে জিততে ব্যাটিংয়ে উন্নতির দিকে মনোযোগী তারা। সোমবার দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনে এসে উইলিয়ামস বলেন, ‘আমাদের রান করতে হবে। আমরা উইকেটে থিতু হচ্ছি আর আউট হচ্ছি। আমাদের অনেকেই ৫০-৬০ করছে, এরপর আউট হচ্ছে। আমাদের সেঞ্চুরি করা খুবই দরকার। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা সেঞ্চুরি করছে আমাদের বিপক্ষে। সেঞ্চুরি করা মানেই কফিনে পেরেক ঢুকে দেয়া। আমাদের এটাই করতে হবে, বেশি বেশি সেঞ্চুরি করতে হবে এবং সেটা করতে হবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশী বোলিং খুবই শক্তিশালী। কিন্তু আমরা ওদের বিপক্ষে এর আগে খেলিনি, এমন তো না। ওরা বিশ্বমানের বোলার। আমরা যদি ছোট ছোট ব্যাপারগুলো ঠিকমতো করি, তাহলে ভাল করতে পারব।’ সফরকারী দলের সবার মধ্যেই এমন চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে। রেগিস চাকাবভাও ব্যাটিংয়ে উন্নতির কথা জোর দিয়ে বলেছেন। সিরিজ হার ঠেকাতে আজ জিততেই হবে সেজন্য প্রথম ম্যাচে লিটন যেভাবে খেলেছেন সেখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে আজ জ্বলে উঠতে চায় সফরকারী ব্যাটসম্যানরা।
×