ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীবিতের চেয়ে শক্তিশালী মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  জীবিতের চেয়ে শক্তিশালী মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে উপলক্ষ করে ২০২০ ও ২০২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসাবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতির পিতা এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তারই দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীনতা। তাই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর দিন ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত মুজিববর্ষ হিসাবে পালন করা হবে। ২০২০ সালে পূর্ণ হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শত বছর। আর ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছর। এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না। এ কথা তো ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বোধ করি অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকণ্ঠে যে ভাষণ দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা হয়ে আছে এক চিরঅম্লান মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তিনি এবং কেবল তিনিই তাঁর বলিষ্ঠ সুযোগ্য সুদৃঢ় অনমনীয় অকুতোভয়, সর্বোপরি দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাধীনতার সুবর্ণ তোরণে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা এবং তা বিশ্ববাসীরও অজানা নয়। ভাষণটি ইতোমধ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। কেবল একটি ভাষণ ‘ওয়ার্ল্ডস ডুকমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির গৌরব বহির্বিশ্বে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশকে অভিহিত করেছেন ‘বিশ্ব নেতা’ হিসেবে, যা অনুসরণীয় হতে পারে অন্যান্য দেশের। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্তত ১০টি মেগাপ্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ ঘিরে। এসবই মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। এও ইতিহাসের এক অমোঘ সত্য যে, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ তথা মুজিববর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে তাঁরই কন্যার হাত ধরে। প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতির নেত্রী হিসেবে যথার্থই বলেছেন, ‘জাতির পিতা রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন। তাঁর রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের কথা তো রয়েছেই। তার সঙ্গে সেই অফুরন্ত সম্পদ, যা লুকায়িত আছে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শনের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, যার সবকিছুই একবিংশ শতাব্দীতেও পরিপূর্ণ প্রাসঙ্গিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী। সারা বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত, বৈষম্যের শিকার মানুষের মুক্তির জন্য এ কাজ যদি আমরা করতে পারি তাহলেই কেবল আমরা নিজেদের কৃতার্থ ভাবতে পারব। শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি সারা বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর। তার অমর বাণী, মরতে যখন শিখেছি কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবা না। ৩০ লাখ মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায়নি বলেই এবং তিনি নিজে একাধিকবার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য অকুতোভয় চিত্তে প্রস্তুত হয়েছিলেন বলেই বাঙালী জাতি হিসেবে আজ আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি, স্বাধীন-সার্বভোম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হয়েছি। তাই এসবের মর্মার্থ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ২০২০-২০২১ মুজিববর্ষ পালন হবে একটা উপযুক্ত উপলক্ষ, যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শন নতুন প্রজন্ম আরও বেশি করে জানতে পারবে। রাজনীতির ক্রান্তিলগ্নে, এই সময়ে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজন অপরিসীম। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক একটা বিষয়ে একমত, ওই সময়ে বাঙালী জাতির নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান না এলে এবং তাঁর নির্দেশিত পথ ধরে ১৯৭১ সালে স্বাধীন না হলে কোন দিন আদৌ বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কি না তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। এখন মুজিব বললেই সারা বিশ্বের মানুষ চেনে স্বাধীন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ মানেই মুজিব। মুজিব মানেই বাংলাদেশ। তিনি হচ্ছেন ইতিহাস ¯্রষ্টা মহামানব । তাইতো একটি বর্ষ তাঁর নামে পরিচিত হবে। টুঙ্গিপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে তাঁর রাজনীতির দীক্ষাগুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন শেখ মুজিব। ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ওই সময় থেকেই নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন, যোগ দেন আওয়ামী মুসলিম লীগে, যা পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নাম নেয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত তিনি বার বার কারারুদ্ধ হন।১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব। বাঙালীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শেখ মুজিবকে বার বার কারাগারে যেতে হতে হয়েছে। আর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ তাঁকে নিয়ে যায় বাঙালীর নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগপ্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন তিনি, যার ফলে ১৯৬৮ সালে তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হতে হয়। ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালী বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ দেন। ’৭১-এর মার্চে শুরু“করেন অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে তাঁর ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাঙালীকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে ধাবিত করে। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর আক্রমণ শুরু“করার পর সে রাতেই বন্দী হন বঙ্গবন্ধু। তবে তার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকলেও তার নামেই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে বাঙালী। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। অন্যদিকে স্বাধীনতা ঘোষণা ও বিদ্রোহের অভিযোগ এনে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে গোপন বিচারের নামে প্রহসন শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসে। এরপর পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি পা রাখেন স্বাধীন ভূমিতে। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের দায়ভার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, যদিও ওই সময়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেন, গঠন করেন বাকশাল; তার কিছু দিনের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক দল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। এই বছরেই তাকে হত্যা করে তার রচিত ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল। দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করা যেত না। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য রাজপথ কিংবা কারাগারে যার জীবন কেটেছে, সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অবসান ঘটে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কের এবং তা বাঙালীরই হাতে। ইতিহাসের সেই মলিন অধ্যায় আজ আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কালো মেঘের আড়াল থেকে সত্যের সাহসী সূর্য বেরিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতার মহা আসনে অধিষ্ঠিত। গোটা বছরটি পালিত হচ্ছে মুজিববর্ষ হিসেবে। ইতিহাসে মুজিব যুগের একটি শাশ্বত অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। তা আর কেউ কোনদিন মুছে ফেলতে পারবে না। গত শতকের ষাট দশকের মধ্যভাগ থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন, এ সময়ের ঘটনাবলী, যেগুলো আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মূল ও প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে তার সবগুলোর উদ্ভাবক এবং তার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পথে একেকটি মাইলফলক স্থাপনের একক কৃতিত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ষাট দশকে স্বাধীনতার পথকে এগিয়ে নেয়ার একেকটি আন্দোলন ও সংগ্রামে অন্যসব বাঙালী নেতা যখন পিছিয়ে গেছেন, দেশদ্রোহিতার অভিযোগের ভয় পেয়েছেন, তখন শেখ মুজিব একাই ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে লক্ষ্যে অটুট থেকে এগিয়ে গেছেন। তাকে অনুসরণ করেছেন লক্ষ-কোটি কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা। ১৯৭৫ সালের পর পুনরুত্থিত একাত্তরের পরাজিত গোষ্ঠী ও নতুন করে আবির্ভূত অপশক্তি চিরতরে মুজিবের নাম মুছে ফেলার জন্য মৃত মুজিবের ওপর অনবরত একের পর এক আঘাত করেছেন। এখনও তাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু তাতে ফল হয়েছে উল্টো। সোনার ওপর যত বেশি আঘাত করা হয় তত বেশি সেটি উজ্জ্বল ও খাঁটি হয়। তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আঘাতের পর আঘাতে আরও উজ্জ্বল হয়ে খাঁটি সোনার মতো প্রস্ফুটিত হয়ে মানুষের সামনে প্রতিভাত হয়েছেন। জীবিত মুজিবের চেয়ে মৃত মুজিব আজ আরও বহুগুণ শক্তিশালী এবং অপ্রতিরোধ্য। এখন আর কেউ সেটা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ নতুন প্রজন্মের কাছে মিথ্যাচারীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন না হলে আর কখনও আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না, যে কথা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। আজ নিঃসন্দেহে বলা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওই সময়ে আবির্ভাব, বাঙালী জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ এবং তার দূরদৃষ্টি না থাকলে হয়ত আজও আমরা পাকিস্তানীদের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতাম। সুতরাং বাঙালী এবং বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, আন্দোলন ও সংস্কৃতি, যা কিছু নিয়ে যে কেউ কথা বলতে গেলে সর্বাগ্রে যে নামটি আসবে সেটি হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাত্র ৫৫ বছরের স্বল্পতম জীবনকালে একজন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে একেবারে রাষ্ট্রনায়কে উন্নীত হওয়ার ঘটনা সমসাময়িক ইতিহাসে বিরল। কিন্তু বাঙালী জাতির দুর্ভাগ্য স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশী-বিদেশী পরাজিত শত্রুরা নির্মমভাবে হত্যা করল এমনই একজন মহান নেতাকে, যিনি কিনা তাদের একটা স্বাধীন দেশ দিল, নিজস্ব পরিচয়ের বাহন বাঙালীত্বকে বিশ্বদরবারে মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করল। আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন জীবিত শেখ মুজিব। আর এখন আরেকটি বিপ্লব, অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তির বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবেন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব, যিনি জীবিত মুজিবের চেয়েও বহুগুণে শক্তিশালী। সুতরাং ২০২০-২০২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেিব পালন করার গুরুত্ব অপরিসীম। লেখক : সাংবাদিক
×