ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থমকে গেছে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া

আলো ঝলমলে শহুরে রূপ নিয়েছে ভাসানচর

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 আলো ঝলমলে শহুরে  রূপ নিয়েছে ভাসানচর

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাগরবক্ষে জেগে ওঠা সেই চরটি এখন রীতিমতো শহুরে রূপ নিয়েছে। দেশের কোন দ্বীপ বা বিদ্যমান চরের ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রম ও রীতিমতো বিস্ময়কর। নোয়াখালীর হাতিয়ার সেই ঠেঙ্গারচরের নতুন নাম হয়েছে ভাসানচর। গুগলে এটিকে ভাসানচর হিসেবেই প্রদর্শন করা হচ্ছে। সরকারী অর্থায়নে ১ লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী বসবাসের জন্য প্রতিষ্ঠিত এ প্রকল্প। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এ প্রকল্পে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া থমকে গেছে। এর পাশাপাশি অত্যাধুনিক রূপে জনবসতির জন্য উপযোগী এ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত কাদের ব্যবহারের জন্য দেয়া হবে তা সরকারী নীতি নির্ধারক মহলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৩ হাজার একরেরও বেশি ভূমি নিয়ে থাকা এ চরের ১৭২১ একর এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চরটি এখন অপরূপা। গ্রাউন্ড লেভেল থেকে ৯ ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ দিয়ে এটিকে জলোচ্ছ্বাসের আগ্রাসনমুক্ত করা হয়েছে অতীতের ১৭৬ বছরের ডাটা পর্যালোচনা করে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর অধীনে এই প্রকল্পটির ৯৯ ভাগ সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। নৌবাহিনীর ১৫০ কর্মকর্তা ও সদস্য নিয়োজিত করে কয়েক হাজার শ্রমিকের ঘামে নির্মিত হয়েছে এ প্রকল্প। মূলত দেশে আশ্রিত ১২ লক্ষাধিকের মধ্যে ১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের উখিয়া টেকনাফ থেকে স্থানান্তরের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু একদিকে অধিকাংশ রোহিঙ্গার অনিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থার আপত্তির কারণে সরকারের আসল লক্ষ্যটি বর্তমানে থমকে গেছে। মূলত নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রদানের ঘটনা এবং এর সঙ্গে বিশে^র বিভিন্ন দেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ায় আপাতত তৎপর নয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানানো হয়েছে। এর ফলে এত বিপুল অর্থব্যয়ে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধায় শহুরে রূপ নিয়ে গড়ে ওঠা এ চর আগামীতে কাদের ব্যবহারের সুবিধায় নেয়া হবে তা এখন দেখার বিষয়। চোখে না দেখলে বিশ^াস করা যাবে না, অতীতে জনবসতিহীন একটি এলাকা মানুষের বসবাসের জন্য আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী বজায় রেখে কিভাবে গড়ে উঠেছে-তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশী-বিদেশী কনসাল্টিং ফার্মের সহায়তায় সাইক্লোনিক ডাটার পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে এর ৯৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যৎসামান্য কাজ যা বাকি রয়েছে তাও সম্পন্ন হওয়ার পথে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আশ্রিতদের মধ্য থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী করে ৪৫০টি ক্লাস্টার হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। ৯শ’ একর জমি বনায়নের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া ১২০টি চারতলা বিশিষ্ট সাইক্লোন শেল্টার এবং ভূমি থেকে চার ফুট উপরে একতলা বিশিষ্ট ক্লাস্টার হাউস নির্মাণ করা হয়েছে।
×