ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের শুরুতেই সব হাসপাতালে সেবার মান নিশ্চিতের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বছরের শুরুতেই সব  হাসপাতালে সেবার  মান নিশ্চিতের নির্দেশ

নিখিল মানখিন ॥ বছরের শুরুতেই সকল সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবার মান সুনিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারী হাসপাতালে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতেই এ নির্দেশ। এতে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের জন্য দেয়া সরকারী চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। কয়েক স্তরে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হবে। দায়িত্বপালনে অবহেলাকারীদের ছাড় দেয়া যাবে না। মেডিক্যাল উপকরণসমূহের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আগত রোগীদের হয়রানি ও দুর্ভোগ কমাতে হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি জনগণের অধিকার। সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সিটিজেন চার্টার দৃশ্যমান প্রদর্শন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত সেবা, সরবরাহকৃত ওষুধ এবং ও রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষাসহ সেবার মূল্য সংক্রান্ত তথ্যাদি রোগীদের জন্য স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরতে হবে। তাদের পরিচয়ত্র প্রদান ও দৃশ্যমান ব্যবহারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বহির্বিভাগ ও জরুরী বিভাগে ওয়ার্ডবয়/বুয়াসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দায়িত্ব আকস্মিক ও নিয়মিত পুনর্বণ্টন করতে হবে। একই দায়িত্বে দীর্ঘকাল কোন কর্মচারী অবস্থান করে যেন কোন অসাধুচক্রের অংশে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। দালালচক্রের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশের তথ্যাদি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তাদের তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত দৃশ্যমান মনিটর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে দালাল প্রতিরোধে নিজস্ব কর্মপন্থা ও কৌশল প্রণয়ন করবেন। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোগীদের হাসপাতালের নির্ধারিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বহিরাগত/দালালের সঙ্গে যোগাযোগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সব সময় পরামর্শ সেবা দিতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে এ বিষয়ে মাইকিং করা যেতে পারে। রোগী ও সেবাপ্রত্যাশী সঙ্গে বহিরাগত ব্যক্তির যোগাযোগকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লিখিত নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান স্থানে অনেক জায়গায় স্থাপন করতে হবে। এছাড়া জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিনা রশিদে অর্থের কোন লেনদেন করা যাবে না মর্মেও নির্দেশ বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করতে হবে। সেবা গ্রহণে অভিযোগের ক্ষেত্রে এসএমএস করার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন দৃশ্যমান করতে হবে। হাসপাতালসমূহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দালাল প্রতিরোধে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে। আর হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তত্ত্বাবধায়ক/ব্যবস্থাপক কর্মকর্তারা তাঁদের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে দালাল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি হাসপাতালগুলোতে অসাধু দালালচক্রের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনকভাবে হার বেড়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ন্যূনতম খরচে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য এমআরআই, সিটিস্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরেসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু সাধারণ রোগীরা এর সুফল পাচ্ছেন না। সরকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার আন্তরিক চেষ্টা চালালেও দালালচক্রের অপতৎপরতায় কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে হাসপাতালে এসে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে। দালালচক্রের কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করছেন। ইউনিফর্ম না পরায় মানুষ কারও পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি দীর্ঘ বছর ধরে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকারও এ সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির হার আবার বেড়েছে। তাদের কেউ কেউ কর্মস্থলে গিয়ে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই চলে যান। অনেকে আসেন দিনের শেষবেলায়। থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসকদের দেখা পায় না রোগীরা। তবে নিজেদের আবাসিক কক্ষে গড়ে তোলা অবৈধ চেম্বারে অফিস সময়ে চড়া ফি নিয়ে রোগী দেখতে ভোলেন না চিকিৎসকরা। কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত পরিদর্শন টিমের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। থানা পর্যায়ে টিমের সদস্যরা যান না। শুধু তাই নয়, থানা পর্যায়ে সকল রোগীকে বিনা টাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনুকম্প ছাড়া ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। চিকিৎসকরা যে রোগীকে নির্বাচন করেন, তাকেই ওই সুবিধা দেয়া হয়। এ কারণে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীকে সাধারণ ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হয়। আর হাসপাতালে কী কী ওষুধ বিনা টাকায় দেয়া হয়ে থাকে, তা রোগী ও তাদের অভিভাবকদের জানার সুযোগ দেয়া হয় না। এতে রোগী বাঁচানোর তাগিদে নিরুপায় হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনেন রোগীর লোকজন। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, জনবল ও চিকিৎসা উপকরণের সঙ্কট নেই সরকারী হাসপাতালে। রয়েছে মজবুত অবকাঠামো। নামমাত্র খরচে পাওয়া যায় উন্নত চিকিৎসাসেবা। কিন্তু অনেকেই জানেন না সরকারী হাসপাতালে কিভাবে, কী ধরনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। এ নিয়ে অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, ঘটে যায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী চিকিৎসা সুবিধার বিষয়ে ধারণা না থাকায় প্রাপ্য চিকিৎসাসেবা আদায় করে নিতে পারেন না অনেক রোগী। এ সুযোগে অনভিজ্ঞ রোগীদের কাছ থেকে বিনা টাকার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অর্থ আদায় করেন হাসপাতালের অসাধু চক্র। এতে বিনা টাকার সরকারী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ, যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। অথচ দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সারাদেশে বিস্তারলাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা।
×