ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পিন্ডিতে ইনিংস হারের লজ্জা মুমিনুলদের

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পিন্ডিতে ইনিংস হারের লজ্জা মুমিনুলদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রবিবার রাতে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দল দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ জিতে গৌরব বয়ে আনেন, আর সোমবার সকালেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকটি হতাশার খবর দিয়েছেন পাকিস্তান সফরে থাকা বড়রা। স্বাগতিক পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ও ৪৪ রানের লজ্জাজনক হার দেখেছে মুমিনুল হকের দল। সোমবার রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থদিন লাঞ্চের অনেক আগেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১৬৮ রানে। তৃতীয়দিন নাসিম শাহর রেকর্ড গড়া হ্যাটট্রিকে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল চতুর্থদিন লেগস্পিনার ইয়াসির শাহের স্পিনে নাজেহাল হয়েছে। উভয়ে ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন। এর মাধ্যমে দুই টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকল পাকরা। আর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু করে ৩ টেস্ট খেলে সবগুলোতেই ইনিংস পরাজয়ের কলঙ্ক ললাটে গেঁথে নিল বাংলাদেশ দল। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হবে করাচীতে আগামী ৫ এপ্রিল। গত বছর ৫ টেস্টের ৪টিতেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। এবার পাকিস্তান সফরে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দলে নেই ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম এবং আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে অনুপস্থিত বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এর সঙ্গে পাকিস্তানের মাটিতে ১৭ বছর পর প্রথমবার টেস্ট খেলতে নামা। এতসব ঘাটতির জন্য ফলাফল যেমনটা অনুমেয় ছিল তাই হয়েছে। ইনিংস হারের লজ্জা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সফরকারী বাংলাদেশ। টেস্টের প্রথমদিন ছিল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য পরীক্ষা। সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। ২৩৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। দ্বিতীয়দিন ছিল বোলারদের জন্য পরীক্ষা, স্বাগতিক পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা তাদের তুলোধুনো করেছেন। তৃতীয়দিন বাংলাদেশী বোলাররা দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ালেও পাকদের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৪৪৫ রানের বিশাল সংগ্রহে। তাতেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কারণ ২১২ রানের বড় লিড পেয়ে গেছে পাকরা। সেই লিডের চাপে তৃতীয়দিন মাত্র ৪৫ ওভার ব্যাট করেই ধসে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করে টেস্টের নতুন ইতিহাস গড়েন ১৬ বছর বয়সী নাসিম। দারুণ শুরুর পরও দিনশেষে ৬ উইকেটে ১২৬ রান নিয়ে ইনিংস পরাজয়ের জোরালো শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। তবে আশার আলো হয়ে তখনও টিকে ছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল ৩৭ রানে এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাস সবেমাত্র যোগ দিয়েছিলেন। চতুর্থদিন ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা এড়াতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৮৬ রানের। টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল দীর্ঘ সময় লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। আর মারকুটে লিটন দ্রুত রান তুলতে ওস্তাদ। তাই সব সুযোগই ছিল চতুর্থদিন ইনিংস পরাজয় এড়ানোর। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তৃতীয়দিন শেষে রাওয়ালপিন্ডিতে খেলতে যাওয়া ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফ্রিকায় ছোটদের বিশ্বকাপ জয়ের গর্বে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। সেই উচ্ছ্বাসকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে চতুর্থদিন উজ্জীবত হয়ে নামতে পারেননি মুমিনুলরা। দিনের প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলেই লড়াইয়ের সব আশার আলো অস্তমিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৩৭ রান নিয়ে অপরাজিত মুমিনুল একটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পরই সাজঘরে ফেরেন। পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদিকে আগের বলেই দারুণ কাভার ড্রাইভে চার হাঁকান এবং পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৯৩ বলে ৫ চারে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দলীয় রান তখন ৭ উইকেটে মাত্র ১৩০। তখন শুধু পরাজয় নিশ্চিত হওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শাহীনের পর বাকি কাজটা লেগস্পিনার ইয়াসিরই সহজ করে দিয়েছেন পাকিস্তানের জন্য। লিটন একাই অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রুবেল হোসেন (২৬ বলে ৫) দ্রুতই ফিরে গেলে লিটনের লড়াইটাও বেশিক্ষণ দীর্ঘ হয়নি। তিনিও ইয়াসিরের ফ্লাইটে এলবিডব্লিউ হয়ে গেছেন। ৫৯ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রান করেছিলেন তিনি। পরে আবু জায়েদ রাহীকেও (৯ বলে ৩) ইয়াসির শিকার করলে ১৬৮ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। আগেরদিনের সঙ্গে মাত্র ৪২ রান যোগ করে ৪টি উইকেট হারিয়ে ইনিংস ও ৪৪ রানের লজ্জাজনক হার দেখে বাংলাদেশ দল। আগেরদিন নাসিম হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়েছিলেন, ইয়াসির পেয়েছিলেন দু’টি। চতুর্থদিন আরও দুই উইকেট নেন ইয়াসির। শাহীন ও মোহাম্মদ আব্বাস বাকি উইকেট দু’টি ভাগাভাগি করেছেন। সর্বশেষ ৬ টেস্টের ৫টিতেই এই নিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে সর্বশেষ ৮ টেস্টের ৭ টিতেই হারল ইনিংসে। আর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে গত নবেম্বরে ভারতের মাটিতে প্রথম খেলেছিল বাংলাদেশ দল। সেই দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে ৩ দিনে হেরে গিয়েছিল। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেও সেই ইনিংস হারের লজ্জা এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। আর এই ৩টি পরাজয়ই আসল মুমিনুলের নেতৃত্বে।
×