ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আকবরদের কাছে শেখা উচিত আমাদের ॥ মুমিনুল

প্রকাশিত: ১১:১১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আকবরদের কাছে শেখা উচিত আমাদের ॥ মুমিনুল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ছোটরা রবিবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জিতে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বয়ে এনেছেন অবিস্মরণীয় গৌরব। আর রাত পেরোতেই সকালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে এসেছে আরেকটি লজ্জা। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে স্বাগতিক পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ও ৪৪ রানের পরাজয়ের কলঙ্ক ললাটে এঁকেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে যখন আকবর আলীর নেতৃত্বে যুবা ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলেছেন তখন জাতীয় দলের এমন হার লজ্জা দিয়েছে মুমিনুলদের। তাই পিন্ডি টেস্টের পর অধিনায়ক মুমিনুল বলেন, ‘তারা (আকবররা) যেভাবে লড়াই করেছে, যে ধৈর্য দেখিয়েছে সেটা আমাদের শেখা উচিত।’ ২০ বছর ধরে টেস্ট খেলা দল এখন পর্যন্ত শেখেনি কিছুই, টানা ৩ টেস্টেই ইনিংস হারের লজ্জাবরণ করেছে। আগেরদিন ৬ উইকেটে ১২৬ রানে শেষ করা বাংলাদেশ চতুর্থদিন মাত্র দেড় ঘণ্টায় দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৬৮ রানে। ইনিংস হার এড়াতে ৮৬ রান প্রয়োজন থাকলেও চতুর্থদিন আর মাত্র ১৭ ওভার ২ বল খেলে ৪২ রান যোগ করতেই ৪ উইকেট শেষ। ২ টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে পাকরা। ৫ এপ্রিল করাচীতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ফেবারিট হিসেবেই খেলেছে বাংলাদেশের যুবারা। কিন্তু ফাইনালে বারবার হারের হতাশা দেয়া হট ফেবারিট ভারত যুব ক্রিকেট দল প্রতিপক্ষ। লো স্কোরিং ম্যাচে ভারততে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়েও হারের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশের যুবারা ১৪৩ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু অধিনায়ক আকবর একাই লড়েছেন। অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে ৩ উইকেটের জয় এবং ট্রফি এনে দিয়েছেন তিনি। আইসিসির বৈশ্বিক কোন আসরে প্রথম শিরোপা জিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বাংলাদেশের যুবা ক্রিকেটাররা। কিন্তু টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে সেটি কি করতে পেরেছেন মুমিনুল? গত বছর নবেম্বরে ভারত সফরে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের। সেই সিরিজ থেকেই টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল। কিন্তু ২ ম্যাচেই মাত্র ৩ দিনে ইনিংস ব্যবধানে হারের কলঙ্ক নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে স্বীকৃত হয়ে ব্যাট হাতেও চরমভাবে ব্যর্থ ছিলেন ভারতে গিয়ে। এবার পাক সফরে তার ওপরই আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ দল। ম্যাচের তৃতীয়দিন শেষেই বোঝা যাচ্ছিল রাওয়ালপিন্ডিতে পরাজয় ছাড়া আর কোন পথ নেই সফরকারীদের। কারণ দিনশেষে নাসিম শাহর ইতিহাস গড়া হ্যাটট্রিকে ৬ উইকেটে ১২৬ রান নিয়ে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। শুধু ইনিংস পরাজয় ঠেকাকেই ৮৬ রান প্রয়োজন ছিল। সবার মনে আশা জেগেছিল যেহেতু মুমিনুল আছেন এবং স্বীকৃত ব্যাটসম্যান লিটন দাসও আছেনÑ হয়তো সেই কলঙ্ক এড়াতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তৃতীয়দিনের খেলা শেষে সবাই টিভির সামনে বসে দেখেছিলেন আকবরদের গৌরবান্বিত ইতিহাস। মুমিনুলরা দেখেছেন আকবর আর পারভেজ হোসেন ইমনদের বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে দৃঢ়চেতা লড়াই। সেই গৌরবে উজ্জীবিত হয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে জাতীয় দলের হয়ে মুমিনুল সোমবার সকালে দারুণ লড়াই করবেন এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। নাসিরের পেস তোপের মুখে আগেরদিন ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মুমিনুল। চতুর্থদিন পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি প্রথম ওভার শুরু করেন। তার পঞ্চম বলে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার হাঁকিয়ে সমর্থকদের উল্লাসধ্বনি শোনেন মুমিনুল। কিন্তু পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। অধিনায়ক নিজে যেখানে বিদায় নিয়েছেন, লড়াইটা আর কে করবেন? শাহ নাসিম, ইয়াসির ও শাহীনের কাছেই পর্যুদস্ত হয়েছে বাংলাদেশ দল। আগেরদিন পাকদের জয়ের রাস্তা গড়ে দিয়েছেন নাসিম ৪টি ও ইয়াসির ২টি উইকেট নিয়ে। আর চতুর্থদিন শুরু করেন শাহীন, শেষ করেন ইয়াসির। কিছুক্ষণ লড়াই করেছেন লিটন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। ৫৯ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রান করার পর ইয়াসিরের লেগস্পিনে এলবিডব্লিউ হয়ে গেছেন। ১৬৮ রানেই থেমে গেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ইনিংস ও ৪৪ রানের জয় পেয়েছে পাকরা নাসিম ও ইয়াসির ৪টি করে উইকেট তুলে নেয়াতে। নিজেদের ১১৮তম টেস্ট খেলতে নেমে ৮৯তম হার এটি বাংলাদেশের। জয় মাত্র ১৩টি আর ড্র ১৬টি। মুমিনুলের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেও আলোর দেখা পায়নি বাংলাদেশ দল। এখন পর্যন্ত ৬১টি টেস্ট সিরিজ খেলে মাত্র ৪টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ দল, ৯টি সিরিজ ড্র করলেও হেরেছে ৪৮টি।
×