ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

কবীর চৌধুরী তন্ময়

উনিশেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

উনিশেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়

বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মানবতার দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘...সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবা না...।’ জাতির পিতার ওই উদ্যমী বক্তব্য শুধু সাত কোটি মানুষকেই মন্ত্রমুগ্ধ করেনি, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে সহায়তা করেছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পাকিস্তানের বর্বরতা আর শোষণ, নির্যাতন ও শত্রুমুক্ত করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম দিতে ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ তাদের বুকের লাল রক্ত এদেশের সবুজ জমিনে ঢেলে দিয়েছে। দুই লাখেরও বেশি নারী সম্ভ্রম বিনাশের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানীদের পাশবিক অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ ভূমিষ্ঠ করেছে। পিতা মুজিব তাঁর জীবনের ২৩ বছর জেল-জুলুম আর অত্যাচার সহ্য করে আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, একটি স্বাধীন জাতিগোষ্ঠীর নাম-পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তলাবিহীন রাষ্ট্রকে প্রথমে মাথা তুলে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন, নিজেদের ভেতরে ‘আমিই বাংলাদেশ’ গর্বিত করার ‘মনমন্ত্র’ দিয়ে আমাদের করেছেন উদ্যমী। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এক বারুদ। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ থেকে অলরাউন্ডার সাকিব- সবই বাংলাদেশ। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিংয়ে ছিল আগুন, ফিল্ডিংয়ে রীতিমতো বারুদ। লক্ষ্যটাও ছিল স্থির। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ছিল দারুণ। খেলার মাঠে নানা নাটকীয়তার মাঝে টাইগারদের একেবারে খাদের কিনারা থেকে যেন আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা- এক কথায় অসাধারণ। এই লড়াকু মনসিকতার সঙ্গে পেরে ওঠেনি ভারত অনুর্ধ-১৯ দল। তাদের হারিয়ে অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ৯ ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য সত্যিই স্মরণীয় দিন। এমন দিন কখনও আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ, গৌরবান্বিত হওয়ার কৃতিত্ব। ক্রিকেট উন্মাদনার এই রেকর্ড অর্জন আমাদের করতেই হবে, আমরা বাঙালী, আমরাই পারিÑ এই বিষয়গুলো প্রচ-ভাবে কাজ করেছে। চারবারের রেকর্ড ট্রফিজয়ী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অভূতপূর্ব সাফল্যের দিন-আমাদের পারার দিন, আমাদের বাঙালীর দিন। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষের প্রাক্কালে এই জয়ে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দল, কোচ, ম্যানেজার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই খেলোয়াড়ি মনোভাব ধরে রেখে এভাবেই ভবিষ্যতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ এখানে আমার লেখাও আমাদের পারার ‘মনোবল’ নিয়ে। ‘আমরাও পারি’- এই সাহস আর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও তাঁর অভিনন্দন বার্তায় ‘মনোভাবে’র কথা বলেছেন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদেরও সেই সাহস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বাঙালী ও বাংলাদেশের এ পারার, এ জয়ের অভিনন্দন বার্তায় সয়লাভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও। বিশ্ব ক্রিকেট তারকারাও বাংলাদেশ ও উদ্যমী ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি। সাবেক ভারতীয় স্পিনার হরভজন এ আকর্ষণীয় ফাইনাল দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেছেন, ‘অনুর্ধ-১৯ দলের দুর্দান্ত একটা ফাইনাল ছিল এটা। অভিনন্দন বিসিবি টাইগার্স বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। টিম ইন্ডিয়ার চিন্তার কোন কারণ নেই, তোমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই খেলেছ।’ অন্যদিকে এ ট্রফি আকবরদের প্রাপ্য বললেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। ভুলে যায়নি ভারত ক্রিকেট বোর্ডও। বিসিসিআই অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশকেÑ ‘ভাল লড়াই করেছো টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপের ফাইনালে দারুণ সমাপ্তি, অভিনন্দন বাংলাদেশ।’ আবার পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শোয়েব মালিকও প্রশংসা করেছেন। ‘অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে বিজয়ী হওয়ার জন্য অনেক অভিনন্দন। আমি টুর্নামেন্টটি খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বের অনেক তরুণ প্রতিভা এখান থেকে উঠে আসছে। তাদের অগ্রগতি দেখতে আমি উন্মুখ হয়ে আছি। তবে আপাতত ছেলেরা উদযাপন করুক’- বলে তিনি তার টুইট বার্তায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছেন পাকিস্তানের নারী দলের ক্রিকেটার সানা মীরও। বাংলাদেশের প্রশংসায় অভিনন্দন বার্তায় তুলে ধরেন, ‘বিশ্বকে শক্তিশালী বার্তা দিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল।’ ‘বিশ্বকাপ জেতার জন্য বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলকে অভিনন্দন। ক্রিকেটের জন্য অবশ্যই দুর্দান্ত কিছু করা উচিত’ -বলে মন্তব্য করে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠানও তার অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশী ক্রিকেট তারকা থেকে আরম্ভ করে ক্রিকেটভক্তকুল বাঙালীর ক্রিকেট এই জয়ের আনন্দ নিয়ে ভাসছে। সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, গবেষক ও সকল শ্রেণীপেশার মানুষসহ সেই দূরের গ্রামের ছোট্ট কিশোররাও বাংলাদেশের এই জয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস আটকে রাখতে পারেনি। আমাদের আটকে রাখা সম্ভব নয়। আমরা দুর্দান্ত। আমরা উদ্যমী। আমরা উড়ে যাব দেশ থেকে দেশান্তরে। আমরা জয় করব আমাদের স্বপ্নকে। আমাদের পূর্বের নারী-পুরুষের সর্বস্ব ত্যাগে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। পিতা মুজিব আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, বাঙালীরা বীরের জাতি। বাঙালীরা একত্রিত হয়ে সকল কিছু জয় করতে পারে। যে বাঙালী তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে সমবেত হয়ে অধিকার অর্জন করতে পারে, যে জাতি সকল অন্ধকারের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারে- এ জাতিকে কে দাবায়ে রাখার ক্ষমতা রাখে? বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ যুব বিশ্বকাপ জয়ের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বাঙালীর ‘জয় বাংলা’র জয় হয়েছে, জয় হয়েছে আমাদের আত্মপ্রত্যয় ও সাহসের। এই প্রাপ্তি বাঙালী জাতিকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব বিজয়ের গৌরব। অভিনন্দন টাইগারস। অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)
×