ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্মারক বক্তৃতা নির্মূল কমিটির

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সব ধর্ম বর্ণের মানুষ ছিল সমান

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সব ধর্ম বর্ণের মানুষ ছিল সমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তিনি মানব মুক্তির জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কথা কোনদিন চিন্তা করেননি। তার আদর্শে সব ধর্ম বর্ণের মানুষ ছিল সমান। এ কারণেই ‘৭২ সালে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান বাঙালী জাতিকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মৃত্যু ঘটায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। ‘৭২ সালের সংবিধানকে তারা ইসলামীকরণ করে সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করেন। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চক্রান্ত চলতে থাকে। জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা-৯ আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, চলচ্চিত্রনির্মাতা ও নাট্যনির্দেশক মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আহ্বায়ক ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেকুলার বাংলাদেশ ফিনল্যান্ডের ড. শুজিবুর দফতরি, অনলাইন এক্টিভিস্ট শাকিল রেজা ইফতি প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন চলচ্চিত্রনির্মাতা ও নাট্যনির্দেশক মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। আলোচনায় প্রধান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মুজিব বর্ষে শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বড়। আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের খুব বেশি কাজ নেই। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করার বিষয়টি তারা করতে পারেন। কারণ তাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু নতুন প্রজম্ম জানার সুযোগ পাবেন। কিছুদিন আগে আমার মন্ত্রণালয়ে মুজিববর্ষ পালনের জন্য ঘটা করে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাজেটও পাস করেছি। হয়তো মুজিব বর্ষ পালনও হবে। কিন্তু আমি সেদিন কারও মধ্যে সেই আন্তরিকতা খুঁজে পাইনি। এটা শুধু আনুষ্ঠনিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। মূল কাজটা করবেন শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিতে পারেন আপনারাই। আপনাদের লেখায় আপনাদের প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু পৌঁছে যাবে মানুষের হৃদয়ে। এখন তো অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনেক ভালবাসেন। আসলে কতজন ভালবাসেন সেটা কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় আছে। মন্ত্রী বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তাই নয়, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও। কারণ আমি ও আমার বাবা একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করতে করতে আজ এই পর্যায়ে এসেছি। মুজিববর্ষে কবি সাহিত্যিকদের ভূমিকা হবে সবচেয়ে বড় শক্তি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে তাদের কাজই টিকে থাকবে। একটা মানবিক মূল্যবোধ তৈরির কাজে আপনাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। আলোচনায় অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, মুজিব বর্ষকে নিয়ে অনেকেই মনে করছেন এত আয়োজন এত কিছু কেন। এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না। আমি বলি এটা কোন বাড়াবাড়ি নয়। এটাই দরকার বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য। যারা বাড়াবাড়ির কথা বলেন, তারা স্বধীনতার চেতনার মানুষ না। আমি শিশুদের নিয়ে কাজ করি। আমার সঙ্গে শিশুদের একটা যোগাযোগ রয়েছে। তারা এক সময় আমাকে প্রশ্ন করত বঙ্গবন্ধু কে। এখন আর তারা সেই প্রশ্ন করে না। কারণ তারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন বঙ্গবন্ধু কে। শিশুরা প্রশ্ন করত স্বাধীনতার ঘোষক কে। এখন আর সেই প্রশ্ন করে না। কারণ তারা বঙ্গবন্ধুকে জানতে শুরু করেছে। ‘৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে যায় তখন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তাজউদ্দীন সাহেব তৈরি হয়ে যান। দেশ স্বাধীন হয়। আবার দেশ অসাম্প্রাদিয়ক শক্তির হাত থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে চলে যায়। সেখান থেকে দেশকে উদ্ধার করতে তৈরি হয়ে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মূলপ্রবন্ধে চলচ্চিত্রনির্মাতা ও নাট্যনির্দেশক মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু শুধু একজন রাজনীতিকই ছিলেন না-তিনি ছিলেন একজন বড় রাজনিতিক কবি। তার ৭ মার্চের ভাষণ একটি কবিতা। রাজনীতির বাইরে কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে ছিল তার নিবির যোগাযোগ। তিনি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ এমন একটি গানকে তিনি দেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছেন। এখান থেকেই বুঝে নিতে হবে তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিও ছিলেন।
×