ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলে ফুলে সেজেছে গদখালি-পানিসারা

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ফুলে ফুলে সেজেছে গদখালি-পানিসারা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মাঘের মিষ্টি রৌদ্দুর উত্তাপ গায়ে মেখে রক্তিম ফুলে ফুলে সেজেছে ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের গদখালি-পানিসারা। টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ ফুলের সংমিশ্রণে নতুন রূপে প্রকৃতি হয়েছে একাকার। গোটা এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন দোল খাচ্ছে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকাসহ হরেক রকমের ফুল। বাতাসে ফুটন্ত ফুলের দোলে রং লেগেছে ফুলচাষীদের মনেও! ফুলের হাসি তাই তাদের চোখে মুখে। আর এই হাসি নিয়েই ফুলের রঙে রঙিন স্বপ্ন দেখতে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত এ অঞ্চলের ফুলচাষীরা। ঝিকরগাছা গদখালী-পানিসারার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা বসন্ত, পরদিন বিশ্ব ভালবাসা দিবস। কিছুদিন পরেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। তাই যশোরের গদখালির চাষীরা এসব দিবসের বাজার ধরতে এখন দিনরাত ফুলের বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গোলাপের ফুল দেরিতে ফোটাতে গোলাপের কুঁড়িতে পরিয়ে রাখছেন ‘ক্যাপ’। ফুলের বাগানের পরিচর্যা, জমিতে সেচ কাজ, সার প্রয়োগসহ ফুলের উৎপাদন বাড়াতে গাছের নানা রকম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের ফুল চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার আট উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্র ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। সারাবছর ফুল উৎপাদন করলেও বসন্তবরণ, ভালবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিবসকে ঘিরেই মূল লক্ষ্য থাকে চাষীদের। আর এ তিনটি দিবসে ফুল বিক্রি করেই মূলত সারাবছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব মেলান এ অঞ্চলের ফুল চাষীরা। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার কৃষক সালাম হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে গোলাপ ও ১৫ কাটা জমিতে জারবেরা ফুলের আবাদ করেছি। ফেব্রুয়ারি মাসের ফুলের চাহিদা মেটাতে এখন জমিতে ওষুধ স্প্রে করছি। কিছু দিন পরই বাজার ভাল পাওয়ার আশা করছি। একই এলাকার ফুল চাষী সাজেদা বেগম জানান, তিনি এবার এক বিঘা জমিতে গাঁদা, এক বিঘা জমিতে জারবেরা ও ১৫ কাটা জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছেন। সামনে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ভাষা দিবসে বাজারে বেশি দামে বিক্রয় করার আশায় সকাল থেকে রাত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। দিবসগুলোতে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। পানিসারা এলাকার কৃষক সেলিম গাজী জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে জমিতে সেচ ও সার দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ২ থেকে ৪ টাকা দরে গোলাপ, ৫ টাকা জারবেরা, ৩ টাকা গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে। ভালবাসা দিবসে এই সব ফুল দুই থেকে তিনগুণ দাম বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, ফুল চাষাবাদ খুবই লাভজনক চাষ। এই মাসে আরও ভাল দাম পাওয়ার আশায় নিয়মিত পরিচর্যা করছি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ফুলের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমাদের যশোর জেলার ফুলের গুণগতমান ভাল থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে পরিবহন ব্যবস্থা ভাল না থাকায় অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলচাষ করে। এবারের বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে গদখালী এলাকার কৃষকরা ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহ করবে বলে তিনি আশাবাদী। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, এই জেলায় সবচেয়ে ফুলের চাষ হয় ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা এলাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফুল চাষ বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে ফুল চাষীদের ফলন ভাল পেতে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, পরিমিত সারের ব্যবহার, সময়মতো সেচ প্রদানের পরামর্শসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ফুল চাষে আধিক মুনাফা ও দেশজুড়ে চাহিদা থাকায় এ এলাকার কৃষকরা দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
×