ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদা কম দেয়ায় ছাত্রীর পাঠ্যপুস্তক কেড়ে নেন প্রধান শিক্ষক!

প্রকাশিত: ১১:১১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চাঁদা কম দেয়ায় ছাত্রীর পাঠ্যপুস্তক কেড়ে নেন প্রধান শিক্ষক!

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন প্রধানের বিভিন্ন অনিয়ম ও অমানবিক ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) ভাইরাল হয়ে পড়ায় জেলার সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠেছে। এ ছাড়া, দেশে-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও ফেসবুকে এসব কর্মকা-ের বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি করেছে! বনভোজনের চাঁদায় ৫০ টাকা কম দেয়ার ‘অপরাধে’ নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গাবরোল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শেণীর ছাত্রী কাজলী রানীর পাঠ্যপুস্তক কেড়ে নেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল রাজ্জাক। একই উপজেলার কৈমারী স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ খানের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাটির ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে আন্দোলন চলছে। আলোচ্য তিনটি ঘটনাই প্রমাণ করে জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল! অপরদিকে ডোমার উপজেলার মাহিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ভুল সংশোধন করে না দেয়ায় দুঃখ-ক্ষোভে সম্প্রতি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে পরীক্ষার্থী তৃষ্ণা রায়। এ সকল ঘটনা নিয়ে এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে মঙ্গলবার জানা যায়, গাবরোল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক বনভোজন ছিল। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ৮০ শিক্ষার্থীদের চাঁদা নির্ধারণ করা হয় আড়াই শ’ টাকা। এলাকার দিন মজুর কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর কাজলী রানী রায় বনভোজনে যাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে দুই শ’ টাকা প্রদান করে। ৫০ টাকা কম দেয়ায় প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে দুই শ’ টাকা ছুড়ে ফেলে দেন। এমনকি কাজলী রানীর হাতে থাকা পাঠ্য পুস্তকের নতুন বইগুলো কেড়ে নেন তিনি! এ সময় লজ্জা আর অপমানে বুকফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মেয়েটি! এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মাদ জানান, কিছু ভুল হয়েছে। আমরা ওই শিক্ষার্থীকে পুনরায় নতুন বই দিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। এদিকে ডোমার উপজেলার মাহিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য শাখা হতে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দোদিপাড়া গ্রামের দিনমজুর দুলাল রায়ের মেয়ে তৃষ্ণা রায়ের (১৫)। দিনমজুর বাবা কষ্ট করে ফরম পূরণের টাকা দিয়েছিল মেয়েকে। নিয়মানুযায়ী পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র প্রদানের তারিখ ছিল ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম প্রবেশপত্র বিতরণ করেন ২ ফেব্রুয়ারি। এসএসসি পরীক্ষার একদিন আগে দুপুরে প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে তৃষ্ণা রায় দেখতে পায় তার প্রবেশপত্রে বাণিজ্য শাখার পরিবর্তে ‘মানবিক শাখা’ এসেছে। ওই পরীক্ষার্থী ঘটনাটি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে ভুল সংশোধনের জন্য গেলে প্রধান শিক্ষক তাকে ফিরিয়ে দেয়। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে বিকেল ৪টায় ঘরের ভেতরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থরে যান ইউএনও শাহিনা শবনম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরিনা বেগম ও থানা পুলিশ। তারা এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত টিম গঠন করেন। এ ঘটনায় তৃষ্ণা রায়ের বাবা বাদী হয়ে ডোমার থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তৃষ্ণা রায়ের মা কবিতা রায়ের বাধার কারণে মেয়ের মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে কিছু প্রভাবশালী প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেয়ায় তারা তৃষ্ণার মাকে ম্যানেজ করে লাশের ময়নাতদন্তে বাধা দেয় এবং রাতারাতি লাশ দাহ করে ফেলে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার এসএসসি পরীক্ষা শেষে দুপুরে ডোমার চিলাহাটি সড়ক অবরোধ করে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাবাসী। তারা প্রধান শিক্ষককের বিচার ও গ্রেফতার দাবি করে স্লোগান দেয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডোমার থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তে টিমের তদন্ত প্রতিবেদন দুদিনের মধ্যে পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে দুই ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাও ভাইরাল হয়ে পড়ে ফেসবুকে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে জলঢাকা উপজেলার কৈমারী স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ খান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাদের প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। অভিভাবকরা অধ্যক্ষের অপসারণ ও অর্থ আত্মসাতের বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে উক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
×