ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার একমাত্র পানি জাদুঘর

একটি কক্ষে দাঁড়িয়ে ৮৭ নদ-নদীর পানি অবলোকন

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

একটি কক্ষে দাঁড়িয়ে ৮৭ নদ-নদীর পানি অবলোকন

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ এশিয়া মহাদেশের একমাত্র পানি জাদুঘরের একটি কক্ষে দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায় আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের ৮৭টি নদ-নদীর পানি। স্বচ্ছ কাচের জারে সংরক্ষণ করা হয়েছে এসব পানি। শুধু ৮৭ নদ-নদীর পানি দেখাই নয়; ওইসব নদ-নদীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণা পাওয়া যাবে পানি জাদুঘর পরিদর্শন করে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সহায়তায় ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর স্থাপিত হয়েছে এ ‘পানি জাদুঘর’। এরপর যতই সময় গড়িয়েছে ততই এ জাদুঘরে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ব্যাপ্তি বেড়েছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আভাসের সহযোগিতায় কলাপাড়া উপকূলীয় জনকল্যাণ সমিতি বর্তমানে পানি জাদুঘরটি পরিচালনা করছে। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে নির্মিত পানি জাদুঘরের সামনে বালুর ওপর স্থাপন করা রয়েছে একটি নৌকা। এতে মানবসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীতে নৌকা আটকে থাকার বাস্তব ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া বাঁধ তৈরির ফলে শুকিয়ে যাওয়া নদী, প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য নৌকা শুকিয়ে যাওয়া নদীতে পড়ে আছে, অর্ধ বালিতে ডুবন্ত নৌকার বুকে বিঁধে আছে দুটি গজাল মাছ। এর মাধ্যমে নদী ও নদীমাতৃক বাংলাদেশকে খুনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় ৫০০ বর্গফুটের দোতলা টিনের ‘পানি জাদুঘর’র দোতলায় সারি সারি করে সাজানো রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ও নদীকেন্দ্রিক দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জীবিকা অর্জনের নানা উপকরণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ মাছ শিকারের ঝাঁকি জাল, খুচনি জাল, নৌকা, চাঁই, পাল্লা, কাঁকড়া শিকারের চাঁই ইত্যাদি। এছাড়া আহবমান গ্রামবাংলার একসময়ের তাঁত বোনার মেশিন ও কৃষিজমির উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের জন্য মাটির তৈরি হাঁড়ি, বাঁশের তৈরি ডোলা, মুড়ি ভাজার তলছা এবং ঝাড়রা মাটির তৈরি খাদ্য রান্নার হাঁড়ি, পাতিল, খাবারের থালা, বাসন, পিতলের তৈরি থালা, বাটি, বদনা, মগিসহ নানা উপকরণ। জাদুঘরের দেয়ালে শোভা পেয়েছে দেশীয় খাল ও নদ-নদীর ছবি, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জেলে এবং কুমার, তাঁতিসহ সর্বস্তরের মানুষের জীবনধারণ ও জীবিকা অর্জনের নানা দৃশ্য। পানি জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের সাতশ’ নদীর ইতিহাস, বিভিন্ন নদীর পানি, নদীর ছবি, নদীর পানির ইতিহাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশে ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার চিত্রসহ বিভিন্ন তথ্য। রয়েছে গ্রামবাংলার মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ, নদী নিয়ে গান, পল্লী শিল্প, কাঁসা ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ৫৭টি আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীর ইতিহাস। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃত নদীর চিত্র ও তথ্য খুঁজে পেতে পানি জাদুঘরে প্রতিদিন জ্ঞানপিপাসু মানুষের ভিড় থাকে লক্ষণীয়। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে পানি জাদুঘর। কুয়াকাটার যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে পর্যটকরা দেখে যান পানি জাদুঘর। সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে পানি জাদুঘর। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০টাকা। পানি জাদুঘর দেখভালের দায়িত্বে থাকা এনজিও আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, পরিবেশগত বিপর্যয়সহ নানা কারণে নদী মরে গেছে ও মরে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে দিনকে দিন। ফলে নদী পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আমরা চাই নদীকে নদীর মতো বাঁচতে দিতে। পানি সম্পদ রক্ষায় তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেজন্য আমাদেরই সচেতন হতে হবে। সে কারণেই এই পানি জাদুঘর। তিনি আরও বলেন, পানি জাদুঘরে মূলত এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। নদীর কথা, পানির কথাকে উপজীব্য করে এই পানি জাদুঘর।
×