ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১ জুলাই থেকে পরীক্ষা ছাড়া বাজারজাত নিষিদ্ধ

কীটনাশকেও ভেজাল, ভারি ধাতুর উপস্থিতি

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 কীটনাশকেও ভেজাল, ভারি ধাতুর উপস্থিতি

ওয়াজেদ হীরা ॥ দীর্ঘদিন ধরে আমদানি হওয়া বিভিন্ন কীটনাশকে ভারি ধাতু ও দূষণ পাওয়া গেছে। কীটনাশকে দূষণ পাওয়ায় এবার আমদানিতে লাগাম টানা হচ্ছে। পরীক্ষা -নিরীক্ষা ছাড়া কোন কীটনাশক দেশের বাজারে যাতে আসতে না পারে সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সারও পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে সারের মান তুলনামূলক ভাল। ফলে যে সব প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানির সঙ্গে জড়িত তাদের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ক্ষতিকর পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে, ফসলের ভাল গ্রোথ পেতে এবং মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় যে সব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যেই ধরা পড়েছে দূষণ। যে কারণে উৎপাদিত ফসলও দূষিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আর সেই দূষণ কাটাতেই নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। জানা গেছে, বাজার থেকে বিভিন্ন কীটনাশক ও সারের পরীক্ষা করা হলেও দূষণের মাত্রা বেশি পাওয়া যায় কীটনাশকেই। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সম্প্রতি বাজার থেকে ৪৭টি কীটনাশক ও সারের নমুনা সংগ্রহ করে তা একাধিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে। পরীক্ষায় এসব কীটনাশকের মধ্যে লিড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারি ধাতুর উপস্থিতি ধরা পড়ে। যদিও কীটনাশক ও সারের মধ্যে কোন ধরনের ভারি ধাতু থাকার সুযোগ নেই। পরীক্ষায় সারের গুণগত মান ভাল পেলেও কীটনাশক নিয়েই আপত্তি জানায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারি ধাতুগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাটি, পানি ও ফসলে প্রবেশ করে খাদ্য শৃঙ্খলকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে তুলছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলাসহ সকল মানুষের মস্তিকজনিত রোগ ও ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। ভারি ধাতুর উপস্থিতি পাওয়ার পর যেনতেন ভাবে সার বা কীটনাশক আমদানি বন্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে কীটনাশক আমদানি করার পর এটোমিক এনার্জি বা বিসিএসআইআরএর যে কোন ল্যাবে পরীক্ষা করতে হবে। কোন দূষণ পাওয়া গেলে সেগুলো যাতে বন্দর থেকে ছাড় করা না হয়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমদানিকারকরা একাধিক মিটিংয়ের মাধ্যমে আগামী জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। জুলাই ১ তারিখ থেকে পরীক্ষা ছাড়া এ জাতীয় কিছু প্রবেশ করবে না বলেও জানা গেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের পরীক্ষায় সারের মান কিছুটা ভাল পেলেও কীটনাশকে ভারি ধাতু পেয়েছি। যা আমরা চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থায় অবহিত করি। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা ছাড়া দেশে এসব প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে আমদানিকারকরা একটু সময় চেয়েছেন। কেননা ইতোমধ্যেই অনেকেই এলসি খুলেছে কারও চলে এসেছে কারও দেশের পথে রয়েছে কীটনাশক। সার্বিক বিবেচনায় জুলাই ১ তারিখ থেকে এটি কার্যকর হচ্ছে। সার ও কীটনাশকের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুট্টা চাষের সময় ব্যবহার করা একটি কীটনাশকের নাম ইউনিজুম ৫০ ডব্লিউপি (Unizoom 50 wp)। ইউনাইটেড ফসফরাস (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি এর নিবন্ধন নিয়েছে, যারা এটি বাজারজাত করে। তাদের এই পণ্যটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতি কেজিতে ১২.৭০ মিলিগ্রাম সীসা (লিড) ও ৩.৬৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম রয়েছে। যেখানে কোন প্রকার ভারি ধাতু থাকার কথা নয়। ব্রিফার ৫ জি (Brifur 5 g) নামের একটি কীটনাশক বাজারে বিক্রি করে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। তাদের এই পণ্যের নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি কেজিতে ২.৯০ মিলিগ্রাম সীসা ও ৮.৭০ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম রয়েছে। ফানা ৫ জি (FANA- 5 g) নামের অপর এক কীটনাশক বাজারে বিক্রি করে একটি প্রতিষ্ঠান। যাদের এই পণ্যের মধ্যে ২ মিলিগ্রাম সীসা ও ৪.১৪ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায় বলেও জানা গেছে।
×