ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি

ইশরাকের প্রচারকালে গুলিবর্ষণকারী তারই পিএস আরিফ

প্রকাশিত: ১১:০০, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

ইশরাকের প্রচারকালে গুলিবর্ষণকারী তারই পিএস আরিফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারে হেলমেট পরা যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছিল তাকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আটক ব্যক্তি আরিফুল, ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে বিএনপি প্রার্থী ইশরাকের ব্যক্তিগত সহকারী পিএস। যদিও ইশরাকের তরফ থেকে আরিফুল ইসলাম তার পিএস নয় বলে দাবি করা হয়েছে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর দোষ চাপিয়ে নির্বাচনে বাড়তি ফায়দা নিতেই এ ঘটনা ঘটানো হতে পারে বলে গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ধারণা। এ বিষয়ে আটক আরিফুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, জানানা হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি টিকাটুলীর কাছে গোপীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাকের প্রচারে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক সাংবাদিকসহ অন্তত দশ জন আহত হন। সংঘর্ষকালে হেলমেটধারী এক ব্যক্তি গুলি চালায়। ঘটনার পর থেকেই বিএনপির তরফ থেকে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মীরা হামলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। সেদিনই রাতেই বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আহমেদ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক জুলফিকার আলী জানান, মামলায় আওয়ামী লীগের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা, নৌকাবিরোধী সেøাগান, মারধর ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলায় ৫০ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই এজাহারনামীয় আসামি। তাদের সিএমএম আদালতে পাঠিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। তবে শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আটক সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পদবিধারী স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন জানান, ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্তে নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে রিমান্ডে থাকা পাঁচ আসামির দেয়া তথ্য এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গুলি বর্ষণকারীকে শনাক্ত করা হয়। বুধবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আরিফুল ইসলাম (৪৭) নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে একটি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড তাজা বুলেট উদ্ধার করা হয়। আটক আরিফের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, আটক ব্যক্তির বাড়ি বরিশালে। তিনি ছাত্রদলের সাবেক নেতা। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের পিএস (একান্ত সচিব)। জিজ্ঞাসাবাদে হেলমেট পরা আরিফ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের গুলিবর্ষণ করার কথা স্বীকার করেন। ঘটনাস্থলে একটি গুলির খোসা পাওয়া যায়। ও গুলির খোসা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আরিফুলের পিস্তলের গুলির খোসা হুবহু মিলে যায়। আর আরিফুল নিজের গুলিবর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। তাকে সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ারী থানায় হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকৃত পিস্তলটি বৈধ বলে দাবি করেছে আরিফুল। এজন্য পিস্তলের বৈধ কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। কাগজপত্র হাতে পেলে অস্ত্রটি বৈধ না অবৈধ তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে অস্ত্রটি বৈধ হলেও আরিফুলের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, হামলাটি ছিল পরিকল্পিত। বিএনপি প্রার্থীর প্রতি ভোটারদের সহমর্মিতা ও সমর্থন সৃষ্টি করতেই কৌশল নেয়া হয়েছিল। ও কৌশলের অংশ হিসেবেই সুযোগ বুঝে গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটানো হয়। এতে সরকারদলীয় লোকজনের ঘাড়ে দোষ চাপানোও সহজ হয়। ইশরাকের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ভোটারদের সহমর্মিতা আদায়ের চেষ্টা করেছিল আরিফ । রিমান্ডে চায় পুলিশ কোর্ট রিপোর্টার জানান, রাজধানীর গোপীবাগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ মামলায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের পিএস আরিফুল ইসলামের অস্ত্র মামলায় সাতদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল হক এ আসামিকে হাতিরঝিল থানার একটি অস্ত্র মামলায় এ রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগেরদিন ঢাকায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ আসামি গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের কথিত পিএস হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করাসহ নির্বাচনপূর্ব মিছিলে অংশগ্রহণ করে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে ওয়ারী থানাধীন ৪৮/৩ এ, আর কে মিশন রোডের রোকনউদ্দিন আহমেদের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে রাস্তায় পৌঁছালে মিছিলটি অবৈধ সমাবেশে রূপ নেয়। এ আসামি প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের লোকজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে পিস্তল দিয়ে ৭ রাউন্ড গুলি করে। এর আগে বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর প্রোজেক্টের ৮নং গেট থেকে আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, দুইটি ম্যাগজিন, ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির লাইসেন্সমূলে মালিক দাবি করলেও এ সংক্রান্ত বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
×