ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার ক্রাইম গ্যাং গুজব ছড়াতে তৎপর

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

সাইবার ক্রাইম গ্যাং গুজব ছড়াতে তৎপর

শংকর কুমার দে ॥ ঢাকার দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক- কেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা বাড়ার কারণে হিমশিম খাচ্ছে তারা। নির্বাচন এলেই গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে সহিংস সন্ত্রাসের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে সাইবার ক্রাইম গ্যাং। এই গ্যাং এর পেছনে থাকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক অপশক্তি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট, ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো ঠেকাতে কঠোর সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন বাহিনীর বিরুদ্ধে গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট অশুভ শক্তি। বিভিন্ন বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার নামে ‘ভুয়া ওয়েবসাইট, ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেল’ খুলে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে তখন গ্রেফতার হয়েছিল ছাত্র শিবিরের কর্মী-ক্যাডার। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তার ধারাবাহিকতায় প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই তৎপর হয় সাইবার ক্রাইম গ্যাং। নির্বাচন বিতর্কিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ও প্রোপাগান্ডা অশুভ শক্তি। সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বেকায়দায় চালায় ফেলার ষড়যন্ত্র অতীতে যেভাবে ঠেকানো হয়েছে এবারে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও সেভাবেই মোকাবেলা করা হবে। জাতীয় বা স্থানীয় যে কোন নির্বাচন সামনে এলেই অশুভ শক্তি যে ষড়যন্ত্র শুরু করে তার একটি মাধ্যমে হিসেবে সাইবার ক্রাইমকে বেছে নেয় ওই চক্র। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করেছিল জামায়াত-শিবির। তাদের সহায়তা করেছে বিএনপির মধ্যে থাকা উগ্রপন্থীরা। সিটি নির্বাচন বানচাল করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য ভুয়া ওয়েব সাইট খুলছে জামায়াত-শিবির। গুজব ও ভুয়া খবর ছড়ানোর দায়ে ছাত্র শিবিরের দুই জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে কামাল হোসেন (২৩) ও গাজীপুরের টঙ্গী থেকে মোঃ আল আমিনকে (৩০) গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আল আমিন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) ছাত্র। কামাল কুমিল্লা নওয়াব ফয়জুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ (ব্যবস্থাপনা বিভাগ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে অনলাইনে ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে সরকারের সুনাম ক্ষুণœ করার চেষ্টা করছিল। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার আদলে অন্তত ২২টি ওয়েবসাইট নকল করে দেশ-বিদেশে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চেষ্টা করছিল তারা। ওয়েবসাইট চালিয়ে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ ছাত্র শিবিরের ফান্ডে দিত। নকল এতটাই সূক্ষ্মভাবে করা হতো যে, কারও বোঝার কোন উপায় নেই। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার হুবহু কপি তৈরি করে ডোমেইন নিত। সেখানে এমন সব ভুয়া খবর দেয়া হতো, যাতে ‘বিএনপি, জামায়াত বা সরকারবিরোধী সমর্থকরা’ বেশি লাইক শেয়ার দেয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রচার ও ভুয়া সংবাদ প্রচারের আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ছড়ানোর অভিযোগে খালিদ বিন আহমেদ (৩০) ও মোঃ হিজবুল্লাহ (২১) নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খালিদ বিন আহমেদ অনলাইন ইউটিউব চ্যানেল ‘এসকে টিভি’র এ্যাডমিন বলে জানা গেছে। র‌্যাব-১ এর একটি ইউনিট রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে শনিবার তাদের গ্রেফতার করে। সেখান থেকে ২টি মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি ট্যাব এবং দুইটি ভয়েস রেকর্ডারও জব্দ করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত খালিদকে ছাত্র শিবিরের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন। তার বাবা নূর আহম্মেদও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদে খালিদ জানায়, ২০১৬ সালে তার ভাই গোলাম মাওলা নাহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসকে টিভি নামে একটি চ্যানেল চালু করেন। তখন থেকে খালিদ তার চ্যানেল থেকে উস্কানিমূলক ভিডিও আপলোড করেছে, আর তাকে এই কাজে সহযোগিতা করত হিজবুল্লাহ। এর মধ্যে খালিদ ভিডিওগুলোতে কণ্ঠ প্রদান করত এবং হিজবুল্লাহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে বিতর্কিত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে আপলোড করত।
×