ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনন্দন ও প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

অভিনন্দন ও প্রত্যাশা

গত ২০ এবং ২১ ডিসেম্বরে দুই দিনব্যাপী ছিল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। প্রায় দুই মাসের দীর্ঘ প্রস্তুতির পর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর এবং ভেলিগেটের প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতিতে টানা নবমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা- বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষতায় অধিষ্ঠিত থাকা নারী প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে অবস্থানকারী বরেণ্য রাজনীতিক, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী, দেশরত্ন, ডটার অব আর্থ, মাদার অব হিউম্যানিটি, বিশ^ রাজনীতির ম্যাজিক ওম্যান জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোপূর্বে তিনি প্রথমবারের মতো ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পূর্ব মুহূর্তে তথা ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর একাধারে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে চতুর্দশ, ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে পঞ্চদশ, ১৯৯৭ সালের মে মাসে ষোড়শ, ২০০২ সালের ডিসেম্বরে সপ্তদশ, ২০০৯ সালের জুলাইয়ে অষ্টাদশ, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ঊনবিংশ এবং ২০১৬ সালের বিংশতম সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবার ২০-২১ ডিসেম্বর হয়ে গেল একবিংশতম জাতীয় সম্মেলন। এবারের দলের লাখ-লাখ নেতাকর্মী এবং কোটি কোটি সমর্থকের প্রত্যাশা অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনাই দলের কাণ্ডারি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন এমন আকাক্সক্ষা বুকে ধারণ করে ক্ষণগণনা শুরু করেছিলেন। সকলের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দলের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন কাউন্সিলরদের স্বতঃস্ফূর্ত নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে। টানা নবমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতির মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করায় তাঁকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। নবমবারের মতো সকলের দাবি এবং অনুরোধে যেমন তিনি দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, পাশাপাশি দীর্ঘ আটত্রিশ বছরও পূর্ণ হলো তাঁর রাজনৈতিক গৌরবময় অধ্যায়ের। দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে কখনও বিরোধী দলে, কখনও রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে তিনি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এসে আজও থিতু হয়ে বসে থাকেননি। নিরন্তর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন, বিশ^দরবারে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, আধুনিক ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া, ক্ষুধামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠাসহ নানা রূপে রূপায়িত করার এক জাদুকরী দক্ষতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায় । উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশের মহীয়সী রূপকার আগামীতে বাংলাদেশকে তাঁর গতিশীল, সংগ্রামী নেতৃত্বগুণে আরও সুচারুরূপে সৌন্দর্যের উপমায় রূপায়িত করবেন এমনটাই মনেপ্রাণে প্রত্যাশা করছেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর, ডেলিগেট এবং সমর্থক নেতাকর্মীরা। এবারের জাতীয় কাউন্সিল শুরুর ঠিক আগ মুহূর্ত থেকে হঠাৎ করেই সারাদেশে হিমঠাণ্ডা শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। প্রবল শীতার্ত এ পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে সমবেত হন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলন স্থলে। এ এক বিরল দৃশ্য। পশ্চিমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরে শাহবাগ এবং পূর্বে রমনা পার্কের সামনের সড়ক পর্যন্ত মাঠ ছাড়িয়ে বিপুলসংখ্যাক নেতাকর্মীর সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আমার নিজেরও এ সম্মেলন স্থলে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতায় বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এবারের সম্মেলন অতীতের সকল সম্মেলনকে ছাড়িয়ে গিয়ে এক অনবদ্য আনন্দ-উদ্বেলতায় পর্যবসিত হতে দেখেছি। ভাললাগায়, ভালবাসায় তখন বুকটা আনন্দে ভরে উঠেছে। এত সুন্দর, সুশৃঙ্খল, আনন্দঘন পরিবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমিয় আন্তরিকতায়। তরুণ, বৃদ্ধ, নারী থেকে কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শতবর্ষী ইসহাক মাস্টার থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের তরুণ মুজিবপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এবারের জাতীয় সম্মেলন। যাঁকে ঘিরে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের আবেগ আবেদন একাকার হয়ে গিয়েছিল। তিনি হলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। প্রসঙ্গক্রমে বলব যা- তা আমার একান্ত অনুভূতির কথা। এ সম্মেলনে যেমন আমি ছিলাম তেমনি বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিল আমার ছাত্র জীবনের বন্ধুরা। যাদের সঙ্গে রাজপথে ছাত্র আন্দোলন করেছি। সেই তাদের সঙ্গে ২ যুগ, ৩ যুগ পরে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুকের মধ্যে অন্য এক স্পন্দন অনুভব যেমন করেছি, তেমনি শিহরিত হয়েছি। পুরনো দিনের অনেক স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। বর্ণিল এবং বর্ণাঢ্য আয়োজনের এ জাতীয় সম্মেলন সকল অনাকাক্সিক্ষত ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ার পর সবাই যে যার মতো নিরাপদে স্ব-স্ব স্থানে ফিরে গেছেন, মহান সৃষ্টিকর্তার এও এক অপরিসীম কৃপা। এমন সফল সম্মেলনে আবারও আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী হাসি মুখে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশকে এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত যার কোন তুলনাই নেই। লেখক : আইনজীবী
×