ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসহনীয় দুর্ভোগ

নড়াইলে সড়ক কালভার্ট নির্মাণে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

নড়াইলে সড়ক কালভার্ট  নির্মাণে ধীরগতি

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ নড়াইল-গোবরা-ফুলতলা (খুলনা) সড়কের ২৮ কিলোমিটার রাস্তা, ১টি ব্রিজ ১৯টি কালভার্টের কার্যাদেশ ৭ মাস অতিবাহিত হলেও কাজ নামমাত্র শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে বালু দেয়া, মিশ্রিত বালু ও খোয়া দেয়া এবং কয়েকটি পয়েন্টে রাস্তার পাশের মাটি দেয়ার কাজ চলছে। এখানে রাস্তার পাশে শক্ত মাটি দেয়ার কথা থাকলেও নরম কাদা দেয়া হচ্ছে। ১টি ব্রিজ ও ১৯টি কালভার্টের কাজ খোঁড়াখুঁড়ি পর্যায়ে রয়েছে। ১ কিলোমিটার বেশি সংযোগ সড়কের জমি এখনও অধিগ্রহণ করা হয়নি। এসব জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ৬ মাস আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ এস্টিমেট পাওয়া যায়নি। রাস্তা চওড়া করার জন্য নড়াইল-থেকে গোবরা প্রায় ৬ কিলোমিটার জায়গায় জেলা পরিষদের লাগানো প্রায় ৫শ’ গাছ এবং রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিও অপসারণ করা হয়নি। এদিকে এ সড়কের ২০ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্ত, ধুলো-বালি, অসহনীয় ঝাঁকি এখন যাত্রীদের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার সময় সীমা রয়েছে ২০২০ সালের জুন মাস। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় গত মে মাসের ৭ তারিখ এ সড়কে ২৭ কিলোমিটার ২ লেন বিশিষ্ট রাস্তা, ১ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক, ১টি ব্রিজ এবং ১৯টি কালভার্টের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় মোঃ মইনুদ্দীন বাঁশি জেভি ফার্ম। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ১শ’ ১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনভিজ্ঞ সিঙ্গাশোলপুর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জল শেখ সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে গোবরা, বড়কুলা, আড়পাড়া, চাকই এলাকার রাস্তা খুঁড়ে বালু দেয়া এবং কয়েকটি পয়েন্টে রাস্তার পাশের মাটি দেয়ার কাজ করছে। রাস্তার পাশে শক্ত মাটি না দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পাশের জলাশয় থেকে নরম কাদা-মাটি এনে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দু’একটি রাস্তায় মিশ্রিত বালু ও খোয়া দেয়ার কাজ শুরু করেছে। গোবরা খালের ওপর ব্রিজের কাজ শুরু হলেও নির্মাণ সামগ্রী রাখার কোন জায়গা নেই। এছাড়া এ সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য সদরের গোয়াইলবাড়ি, কলোরা এবং গোবরা বাজারে ১ কিলোমিটারের বেশি ৫.০৮ একর জমি এখনও অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এসব জায়গায় আনুমানিক ৫১টি পাকা ও আধা পাকা বাড়ি, দোকান সরাতে এবং অনেক গাছ-গাছালি কাটতে হবে। এসব জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ৬ মাস পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ এস্টিমেট পাওয়া যায়নি। এদিকে এ সড়ক দিয়ে এখন চলাচল করাই দায় হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেহাল অবস্থা কাড়ার বিল, বড়েন্দার, কলোরা, গোবরা, মির্জাপুর, রুখালি এবং চাকই। এতটাই বেহাল অবস্থা যে হেঁটে চলাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মইনুদ্দীন বাঁশি জেভি ফার্মের প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ ইমতিয়াজ হোসেন রতন বলেন, নানাবিধ কারণে এ কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্য। নরম কাদা-মাটি দেয়ার ব্যাপারে বলেন, রাস্তা ঠেকাতে কিছু জায়গায় বাধ্য হয়ে প্রথম লেয়ারে নরম মাটি দেয়া হচ্ছে। পরে শক্ত মাটি দেয়া হবে। এছাড়া ব্রিজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কাজের দু’পাশে এখনও জায়গা অধিগ্রহণ না করায় মালামাল রাখতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৗশলী মোঃ ওমর আলী বলেন, রাস্তা চওড়া করার জন্য নড়াইল থেকে গোবরা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার জেলা পরিষদের প্রায় ৫শ’ বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ এবং রাস্তার পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ সম্ভব হয়নি। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট অফিসকে জানানো হয়েছে। পটিয়া নিজস্ব সংবাদদাতা পটিয়া থেকে জানান, দেশে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। তবে উন্নয়নের এই ছোঁয়া পৌঁছেনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের জগৎ ভট্টচার্য সড়কে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি অবহেলিত। ফলে বর্ষা মৌসুম ছাড়াও শীত মৌসুমে এলাকার লোকজনকে নানাভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এমনকি এলাকার লোকজন হেঁটে পর্যন্ত চলাচল করতে পারছেন না। উপজেলার ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশ ঘেঁষে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি যেন অকেজো হতে চলেছে। সড়কের দুই পাশে রয়েছে হিন্দু অধ্যুষিত বেশকিছু পরিবার। ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ দৌলতী দুইজনেই বিএনপির নেতা। তবে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সামশুল হক চৌধুরী তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। অথচ হিন্দু অধ্যুষিত ছনহরা ইউনিয়নের জগৎ ভট্টচার্য্য সড়কটি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অবহেলিত। যা খুবই দুঃখজনক। এই সড়ক দিয়ে ছনহরা ছাড়াও আশিয়া, ভাটিখাইন ও পটিয়া পৌরসদরে যাওয়ার পথ রয়ছে। বর্তমানে চলাচল করা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও একটি এলাকায় দুই হাজার কোটি টাকার অধিক উন্নয়ন কাজ হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। এতে রাস্তাঘাট-ব্রিজ, কালভার্টের কাজ করা হয়েছে। উপজেলার ছনহরা, হাইদগাঁও, হাবিলাসদ্বীপ, দক্ষিণ ভূর্ষি, ধলঘাট, জঙ্গলখাইন, আশিয়া, কচুয়াই ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামীণ সড়ক বেহাল হয়েছে। ছনহরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ষোড়শী বালা উচ্চ বিদ্যালয়, ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও আশপাশে মসজিদ, মন্দির রয়েছে। প্রতিদিন স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও এলাকার লোকজন ছনহরা জগৎ ভট্টচার্য্য সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকেন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ছনহরা ইউপির বাসিন্দা রনজিত কুমার মিত্র জানিয়েছেন, দেশে উন্নয়ন কাজ চলছে ঠিক, কিন্তু তাদের এলাকায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জগৎ ভট্টচার্য্য সড়কে কোন ধরনের উন্নয়ন কাজ হয়নি। ফলে সড়কটি অকেজো হতে চলেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এলাকার লোকজনকে বর্তমানে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছনহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুর রশিদ দৌলতী নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ছনহরা এলাকায় তেমন কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। জগৎ ভট্টচার্য্য সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়ে ভাটিখাইন, ছনহরা, পৌর সদর ও পার্শ্ববর্তী আশিয়া ইউনিয়নে যাওয়া যায়। তিনি (চেয়ারম্যান) বিএনপির নেতা হওয়ার কারণে এলাকায় বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। যার কারণে গ্রামীণ সড়কের কাজও করা যাচ্ছে না। গ্রামীণ সড়কের দৃশ্যমান কাজ দেখতে হলে পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে ছনহরার প্রতি আন্তরিক হতে হবে। তুলনামূলক ছনহরা ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়নি এবং কাজও কম হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ঈশ্বরদী স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, পৌরসভা হাজারো সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভার রাস্তাঘাটের অবস্থা বর্তমানে শোচনীয়। ৪৫ বছর বয়সী এ পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা এখন চলাচলের অযোগ্য। অলিগলি ভাঙ্গাচোরা। প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে ঈশ্বরদী লোকোশেড রোড, চাঁদ আলীর মোড় ছাড়া কলেজ রোডের কিছু অংশ, রেলগেট থেকে শহরের প্রধান সড়ক বাজার রোড ও পাবনা রোডের আলহাজ মোড় পর্যন্ত, বিমানবন্দর রোডের কিছু অংশ, পোস্ট অফিস মোড় থেকে উমিরপুর রোড ও সাড়া গোপালপুর মতি মোল্লার মোড় থেকে মহননবী পাড়া রোড, ঈশ্বরদী ইপিজেড যাওয়ার ঈশ্বরদী-পাকশী সড়কের কিছু অংশ। ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া মহাসড়ক, অরণকোলা সড়কের কৃষি ফার্ম থেকে গরুর হাট পর্যন্ত, কুষ্টিয়া সড়কের ভেলুপাড়া থেকে ইস্তা গ্রাম হয়ে পাকশী ইপিজেড পর্যন্ত, পিয়ারাখালী থেকে স্কুলপাড়া সড়ক, উপজেলা রোড থেকে হরিজনকলোনি হয়ে কাচারীপাড়া সড়কের অবস্থা এতই নাজুক যে, এসব সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানো তো দূরের কথা সুস্থ মানুষও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে বিব্রত বোধ করে। সড়কের বেশির ভাগ স্থানে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেশিরভাগ সময় পানি জমে থাকে। যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষের চলাচলেও মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ঈশ্বরদী বাজারের সঙ্কীর্ণ ও ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেনবিহীন এসব রাস্তা বা সড়ক সংস্কার করা হয় না। বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা একহাঁটু পানিতে বর্জ্য আবর্জনা পচা দুর্গন্ধ ও কাদামিশ্রিত নোংরা পরিবেশের মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব রোড ও অলিগলিতে জমে কাদামিশ্রিত পানি। ড্রেনেজ সমস্যা এ পৌরসভার একটি অন্যতম সমস্যা। চাহিদা অনুযায়ী এখনও ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। নানা কারণে চাহিদা অনুযায়ী ড্রেনেজ ব্যবস্থা পৌর কৃর্তপক্ষ এখনও করতে পারেনি। কোন কোন এলাকায় সামান্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও তা বেশিরভাগ সময় ময়লা পানি ও আবর্জনায় ভর্তি থাকে। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক এলাকায় অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি, দোকানপাট, গড়ে তোলায় ড্রেনের অধিকাংশ বেদখল হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেন উপচে নোংরা পানি রাস্তাকে প্লাবিত করে। বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
×