ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোদাগাড়ীতে গরু চুরির হিড়িক

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২০ জানুয়ারি ২০২০

 গোদাগাড়ীতে গরু চুরির হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ী উপজেলায় গভীর রাতে গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। উপজেলার দেওপাড়া ও গোগ্রাম ইউনিয়নে গত দুই সপ্তাহে অনেকেরই গরু চুরি হয়েছে। এতে কৃষকরা আতঙ্কিত। তাই চুরি ঠেকাতে অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ রাত জেগে নিজেদের গরু পাহারা দিচ্ছেন। উপজেলার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া ও নিমতলা গ্রামের মানুষ এখন রাতের বেলা টর্চ লাইট আর লাঠি নিয়ে সারারাত গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া বিয়ানাবোনা, কানাইডাঙ্গা, নীলবোনা, ছয়ঘাঁটি, চাঁপাল, পালপুর, বিড়ইল, দমদমা, আগলপুর, শ্রীরামপুর, মালিগাছা, ধরমপুর ও কমলাপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ রাত জেগে থাকছেন।উপজেলার নিমতলা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাক হোসেনের সম্বল ছিল দুটি বলদ গরু। কিন্তু ছেলে অসুস্থ বলে তিনি এই বলদ দুটিই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দর দাম চলছিল। একজন ক্রেতা দুটি বলদের দাম এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু মোস্তাক বিক্রি করতে পারেননি। তার আগেই চোরে নিয়ে গেছে বলদ দুটি। গত ১২ জানুয়ারি রাতে তার বলদ দুটি গোয়াল থেকে চুরি হয়েছে। মোস্তাক বলেন, হাল চাষ করেই তার সংসার চলে। কিন্তু হালের বলদ বিক্রি করেই চিকিৎসার জন্য ছেলেকে ভারতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই চোর গোয়াল ফাঁকা করে দিয়েছে। এখন তিনি নিঃস্ব। ছেলের জীবন নিয়েই তিনি এখন শঙ্কায়। শুধু মোস্তাক নন। গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ও গোগ্রাম ইউনিয়নের অনেকেরই গরু চুরি হয়েছে সম্প্রতি। তাই চুরি ঠেকাতে অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ রাত জেগে নিজেদের গরু পাহারা দিচ্ছেন। এলাকাবাসী জানান, শীতের শুরু থেকে এসব এলাকায় গরু চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। তারা একজন চোরকেও ধরতে পারেননি। থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গরুও উদ্ধার হয়নি। ফলে তারা নিজেরাই এখন রাত জাগতে শুরু করেছেন। নিমতলা ও খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামের মানুষ পালা করে দল বেঁধে লাঠি ও টর্চ লাইট নিয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি রাতে নাজিরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা লাল মোহাম্মদের বাড়ি থেকে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। এর আগে ৩ জানুয়ারি একই গ্রামের বাসিন্দা দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য রওশন আরা বেগমের বাড়ি থেকে একটি গাভী চুরি হয়েছে। এছাড়া ১ জানুয়ারি দমদমা গ্রামের নাজিম উদ্দিনের চারটি, ২৬ ডিসেম্বর কামিরপাড়া গ্রামের শাহজাহান আলীর দুটি, ১৫ ডিসেম্বর ছয়ঘাঁটি গ্রামের রায়হান আলীর একটি, ৫ সেপ্টেম্বর কানাইডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিনের দুটি, একই রাতে ওই গ্রামের মোস্তাক আলীর দুটি এবং ২৮ আগস্ট মানিক মিয়ার একটি গরু চুরি হয়েছে। একের পর এক গরু চুরিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন গ্রামের মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে চোর ধরতে তাই রাত জেগে তারা পাহারা দিতে শুরু করেছেন। শনিবার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে ঢুকতেই একটি অটোরিক্সায় করে দুই যুবককে মাইকিং করতে দেখা যায়। এর আগে গরু চুরি বন্ধে করণীয় ঠিক করতে শনিবার গ্রামে সভা করা হয়। খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে বসে ছিলেন ৮-১০ জন ব্যক্তি। তাদের কাছে টর্চ লাইট আর লাঠি। তারা জানালেন, গরু চুরি ঠেকাতে পালা করে তারা গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। এখন রাত গভীর হয়নি বলে দোকানে বসে আছেন। রাত গভীর হলে তারা লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াবেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের এমন পাহারা চলছে বলেও জানান তারা। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুলের বাড়ি খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে। তিনিই গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে পালা করে গরু পাহারা দেয়াচ্ছেন। পিয়ারুল বলেন, আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি, অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। এ কারণে সামাজিকভাবে বসে আমরা গরু পাহারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুযায়ী পাহারা চলছে। এরপর থেকে গ্রামে অবশ্য গরু চুরি হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম আলী বলেন, এলাকাটি প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আওতায়। গরু চুরির বিষয়ে তদন্ত কেন্দ্র এবং থানায় গেলে অভিযোগ নেয়া হয় না। পুলিশ বলে, তদন্ত কেন্দ্রে একটামাত্র গাড়ি। সেটা দিয়ে দুটি ইউনিয়নে টহল দেয়া সম্ভব না। তাই তারা নিজেরাই পাহারা দিচ্ছেন। আরেক বাসিন্দা সুমন হোসেন বলেন, পুলিশ একটা চোরকেও ধরতে পারেনি। সমাবেশে পুলিশ এলে বলব- আমাদের গরু তো চোরেই নিয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে বরং আপনারাই নিয়ে যান। গোদাগাড়ী থানার ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, নিমতলা ও খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে প্রচুর গরু আছে। অনেকের গরু গোয়ালে রাখার জায়গা না থাকার কারণে বাড়ির সামনেই খোলা জায়গায় রাখেন। তাই চুরি হয়।
×