ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবারের আসর স্মরণীয় করতে চান জামালরা

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

এবারের আসর স্মরণীয় করতে চান জামালরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমাদের প্রস্তুতি ভাল। গত কয়েকদিন অনুশীলনে ছেলেরা ভাল করেছে। তবে জীবন ও বাদশা অসুস্থতার কারণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে। আগামীকাল এই দু’জনের পরিবর্তে অন্যদের খেলানো হবে। আশাকরি যারা আছে তারা ভাল করবে। আমরা প্রতিযোগিতার দিকে তাকিয়ে। আমরা জানি টুর্নামেন্টটা অনেক কঠিন। তারপরও সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী। আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে সবাই ইতিবাচক।’ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সম্মেলন কক্ষে কোচ জেমি ডে কথাগুলো বলছিলেন, তখন আসলেই তাকে দৃঢ়প্রত্যয়ী দেখাচ্ছিল। আজ বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আগে এই ব্রিটিশ কোচের এমন কথায় অনুপ্রাণিত হতেই পারেন জামাল ভুঁইয়ারা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় উদ্বোধনী দিনের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ গত আসরের শিরোপাধারী ফিলিস্তিন। গ্রুপের অপর দল সাফ অঞ্চলের দেশ শ্রীলঙ্কা। গ্রুপের অন্য দল এবং নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে কোচ জেমি বলেন, ‘গ্রুপে আমাদের দুটি দলই শক্তিশালী। আগামীকাল ফিলিস্তিন এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচে অনেক দর্শক খেলা দেখবে আমাদের। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি ম্যাচেই ভাল হবে। আর দর্শকরা আমাদের সমর্থন দেবে, যেটা খেলোয়াড়দের জন্য ভাল হবে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে আমরা সেরাটা মেলে ধরতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো সেমিফাইনাল। আশাকরি সেটা পূরণ করতে পারব।’ এই আসরে অংশ নেয়া ছয়দলের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার ওপরে আছে ফিস্তিন। তারা রয়েছে ১০৬-এ। সে তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে, তাদের অবস্থান ১৮৭তম। ২০১৮ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিতে ফিলিস্তিনের কাছে বাংলাদেশ ২-০ গোলে হেরেছিল। তাদের হারাতে পারলে সেমিতে খেলাটা অনেকটাই নিশ্চিত, কিন্তু কাজটি খুবই কঠিন। তবে জেমি এ নিয়ে ইতিবাচক, ‘আসলে প্রতিটি ম্যাচই আমরা জিততে চাই। ফিলিস্তিন ভাল দল। তবে এটা ঠিক, গত বছর যারা খেলেছে তাদের অনেকেই এবার নেই। তবে তাদের অনেক ভালমানের খেলোয়াড় আছে। বাহরাইনে তাদের অনুর্ধ-২৩ দলের বিপক্ষে আমরা খেলেছি। হোমগ্রাউন্ডের সুবিধা পাব আমরা; কিন্তু আমার কাছে কালকের ম্যাচে ফেবারিট ফিলিস্তিনই। তবে আমরাও ছেড়ে কথা বলব না। আমরা জয়ের জন্যই খেলব। জিততে না পারলেও তাদের থামানোর চেষ্টা করব। আমি মনে করি ফিলিস্তিনকে আটকানোর সাামর্থ্য আমাদের আছে।’ জেমি আরও যোগ করেন, ‘গত বছর চারটি দল শক্তিশালী ছিল। এবার আমি মনে করি ফিলিস্তিন সবার চেয়ে ভাল। দলগুলো কোথা থেকে আসছে বা তারা কি অবস্থায় আছে, এটা নিয়ে ভাবছি না। আমার ভাবনায় এখন শুধুই আগামীকালের ম্যাচ।’ ফরোয়ার্ড নাবীব নেওয়াজ জীবন এবং ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা অসুস্থতার জন্য দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেমির ভাষ্য, ‘জীবন এবং বাদশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের হারানোটা অনেক বড় ক্ষতি। তবে আমি মনে করি যারা আছেন, তারা এদের অভাব পূরণ করতে পারবেন।’ শেষ মুহূর্তে গোল হজম করা এবং গোল করতে না পারা ... এ দুটোই বাংলাদেশ দলের বহু বছরের পুরনো রোগ। এ নিয়ে জেমির অভিমত, ‘গোল স্কোরিং নিয়ে দুশ্চিন্তা অবশ্যই আছে। গোল করতে হলে আপনাকে অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করতে হবে। আসলে বাংলাদেশের গোলস্কোরিংয়ের সমস্যার বড় কারণ হলো লীগে ফরোয়ার্ডরা খেলার সুযোগ পান না। এই পজিশনে বিদেশীরা খেলে। একটা ক্লাব পাঁচজন বিদেশী খেলোয়াড় নিচ্ছে। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে যে দেশীরা সুযোগ পাচ্ছে না, খেলছে বিদেশীরা। অথচ এই জায়গায় জাতীয় দলের ফরোয়ার্ডদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে সেটা হচ্ছে না। তাই আমি মনে করি এই নিয়মের পরিবর্তন করা দরকার।’ সবশেষে জেমি বলেন, ‘যদি আমরা ভাল খেলতে পারি এবং সুযোগ তৈরি করতে পারি, তাহলে আশাকরি ফিলিস্তিনের সঙ্গে ড্র কিংবা জিততেও পারি।’ বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমাদের প্রস্তুতি ভাল। অবশ্যই আমরা জিততে চাই। কারণ এই টুর্নামেন্টটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে। আমরা ইতিহাস গড়তে চাই। আমার নিজের জন্যই জিততে চাই শিরোপা।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে সদ্য বিয়ে করা জামাল বলেন, ‘যারা এসএ গেমসে খেলেছেন তারা নিজেরা জানেন যে তারা ভাল পারফর্ম করতে পারেননি। তাই সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ একটা ভাল মঞ্চ। এসএ গেমসে ভুল হয়েছে। আশাকরি এবার ভাল করব।’ ফিলিস্তিন কোচ মাকরাম দাবুব বলেন, ‘গত আসরে আমরা এখানে শিরোপা জিতেছিলাম। এবারও চ্যাম্পিয়ন হতে এসেছি। বাংলাদেশের এই দলটা গত দুই বছর ধরে খুবই ভাল খেলছে। তাদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও দারুণ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের এই আসরে ফিলিস্তিন, বুরুন্ডি এবং স্বাগতিক বাংলাদেশকে ফেবারিট মনে করছি আমি।’ মাকরাম জানান, ফিলিস্তিনের এই দলে অলিম্পিক দলের ৬ ফুটবলার এবং জাতীয় দলের সিনিয়র ৬ ফুটবলার আছেন। বাকিরা স্থানীয় ঘরোয়া লীগে খেলে থাকেন। ফিলিস্তিন দলের মিডফিল্ডার মোহাম্মদ দারউইশ জার্মানিতে বেড়ে ওঠেছেন। সেখানকার ক্লাব হ্যানেভারোতে খেলছেন। এই প্রথম জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। নিজেকে মেলে ধরতে তৈরি তিনি, ‘এই প্রথম আমি বাংলাদেশে এসেছি। ফিলিস্তিনের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছি। এবারই প্রথম সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে খেলব। এ নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আর জার্মানিতে থাকলেও আমার হƒদয় জুড়ে শুধুই ফিলিস্তিন।’ শ্রীলঙ্কার কোচ পাকির আলী। দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে ক্লান্ত থাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। তার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন দলটির ম্যানেজার কর্নেল পাথমানাথান। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ নেপালে এসএ গেমসে খেলেছিলাম আমরা। আমাদের এই দলটি অভিজ্ঞ এবং তারুণ্যের সংমিশ্রণে গড়া। আমরা এখানে সেরা দুইয়ের একটি হতে এসেছি। প্রথম লক্ষ্য হলো সেমিফাইনাল।’ আফ্রিকার দল মরিশাসের কোচ জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো বলেন, ‘আমাদের দলটি তারুণ্যনির্ভর। এই আসরে নিজেদের সেরাটা দিয়েই খেলার চেষ্টা করব। এ নিয়ে আমরা কোন চাপ নিচ্ছি না।’ ফিলহো আরও জানান, এই দলের ছয় ফুটবলারের বয়স মাত্র ১৭। এছাড়া বাকিরা ২০, ২২ ও ২৪ বছর বয়সী। দলটির অধিনায়কই সবচেয়ে সিনিয়র, তার বয়স ২৪। নাম পাস্কেল ড্যামিয়েন বালিসন। ফিলহো স্বীকার করেন, ‘বাংলাদেশ দল সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। আর সব প্রতিপক্ষই আমাদের চেয়ে শক্তিশালী। পেশাগত কাজের জন্য আমাদের অনেক ফুটবলারই বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেননি। ফিলহো আরেকটি অবাক করা তথ্য দিলেন, ‘মরিশাসে কোন পেশাদার ফুটবল হয় না।’ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেশাদার ফুটবল খেলেও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে মরিশাসের (১৭২) চেয়ে অনেক পিছিয়ে, এটা তো দ্বিগুণ অবাক করা তথ্য? তাই নয় কী? ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। বিশ্বব্যাপী ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে দেশটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের এবারের আসরে বি-গ্রুপে অংশ নিচ্ছে দলটি। গ্রুপে অপর প্রতিপক্ষ বুরু-ি ও সেশেলস। আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত তিনটি দলের ফুটবলই বাংলাদেশের কাছে বেশ অপরিচিত। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে মরিশাসের অবস্থান ১৭২। দেশটিতে দীর্ঘদিন শাসন করেছে হল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। স্থানীয় ফুটবলারদের পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ বংশোদ্ভূতরাও রয়েছেন জাতীয় দলে। স্থানীয় বিভিন্ন দল ছাড়াও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, গ্রিস ও রোমানিয়ার বিভিন্ন ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে দলটির খেলোয়াড়দের। সংবাদ সম্মেলনে আসেনি বুরুন্ডি দলের কোচ-অধিনায়ক। কারণ তারা তখনও বিমানে।
×