ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উজানের জোয়ারে ভাসছে তিস্তা ॥ সেচের জন্য প্রস্তুত কমান্ড এলাকা

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

উজানের জোয়ারে ভাসছে তিস্তা ॥ সেচের জন্য প্রস্তুত কমান্ড এলাকা

তাহমিন হক ববী, তিস্তার ডালিয়া থেকে ॥ দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে সেচ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। প্রতিটি ক্যানেলে পানি ভরে রাখা হয়েছে। সেচনির্ভর বোরো আবাদে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সেচ দেয়া হবে। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, উজান হতে পানির প্রবাহ নদীজুড়ে বয়ে চলেছে। গত ১৫ দিন ধরে নদীর পানিপ্রবাহ চলছে ৬ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিউসেক। নদীর প্রবাহ ছাড়াও সেচ ক্যানেলগুলোতে ৫ হাজার কিউসেক পানিও ভরে রয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। সেচ কার্যক্রমের কমান্ড এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদের প্রস্তুতি হিসেবে বীজতলা তৈরি করছে। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী আসছে ২৫ জানুয়ারি হতে বোরো আবাদে তারা নিয়মিত সেচ পাবে। তিস্তা ব্যারাজের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিকুল বারী জানান, ২০২০ সালে তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকা, নীলফামারীর ডালিয়া, জলঢাকা, নীলফামারী, কিশোরীগঞ্জ, রংপুরের তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুরের খানসামা চিরিরবন্দর উপজেলায় চলতি খরিপ-১ মৌসুমি ৩৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বোরো আবাদে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী আগামী ২৫ জানুয়ারি হতে সেচ প্রদান শুরু করা হবে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের খরিপ-১ (জানুয়ারি টু মার্চ) মৌসুমে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টরে। তবে ওই বছরে সেচ প্রদান করা হয় ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর বেশি। আশা করা হচ্ছে, আসছে খরিপ-১ মৌসুমে গতবারের মতোই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সেচ প্রদান সম্ভব হবে। সূত্রমতে গেল খরিপ-২ মৌসুমে (আমন) তিস্তা কমান্ড এলাকায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পেয়েছিল। তিস্তা কমান্ড এলাকার সেচ সুবিধাভোগী কৃষক নজির উদ্দিন (৪০) বলেন, তিস্তা নদীতে উজানের পানির জোয়ার বিগত বছরের চেয়ে এবার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ভাষায় তিনি বলেন, তিস্তা নদীত পানি নাই কাহো কাহো (কেউ কেউ) হাকাউ চিৎকার পারে। উজান হইতে তিস্তা নদীর পানি আইতাছে। তিনি হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে বলেন, ওই দ্যাখেন নদীত এখন যে জোয়ার আইছে এই জোয়ারে কত স্রোত বইয়া যায়। দেখা যায় নদীতে অসংখ্য নৌকা চলছে। জাল দিয়ে তিস্তায় এখন প্রচুর বৈরালী মাছ ধরছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারগুলো। ডালিয়ার জেলে রফিক মিয়া (৫০) বললেন গত ৫ বছর ধরে শুকনো মৌসুমে নদীর পানি উজান হতে ভালই প্রবাহ হয়ে আসছে। এতে তিস্তাপাড়ের জেলেরা নদীর মাছ পাচ্ছে ভালই। অপর দিকে দেখা যায়, নদীর চর গ্রামের মানুষজন তাদের উৎপাদিত ফসল নৌকায় ভরে নদীপথে হাটবাজারে বিকিকিনি করতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে। এ সময় কথা হয় চরখড়িবাড়ির কৃষক আবদুল আজিজের সঙ্গে। তিনি বলেন নদীতে গত কয়েক বছর ধরে শুকনো সময় অনেক পানি থাকছে। ফলে উৎপাদিত ফসল নৌকা করে হাটবাজারে নিয়ে গিয়ে বেচা কেনা করা সহজ হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, তিস্তা নদী হলো উত্তরাঞ্চলের জীবনরেখা। তিস্তা তার জলদুগ্ধে উত্তরের মানুষজনের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষে। সেচনির্ভর বোরো আবাদে তিস্তার পানির ব্যাপক চাহিদা। অন্যদিকে উজানের পানিপ্রবাহের ওপর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য সেচের ওপর নির্ভরশীল।
×