ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁ হাতে ১৪ সেলাই নিয়েও খেলা প্রসঙ্গে বললেন মাশরাফি, অবসরের প্রশ্নবাণে বিচলিত নন ওয়ানডে অধিনায়ক

ক্রিকেট আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ক্রিকেট আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাঁ হাতের তালুতে ১৪ সেলাই, ভারি ব্যান্ডেজ নিয়ে তবু সোমবার খেলতে নেমেছিলেন ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১০ নম্বরে ব্যাট হাতেও নামেন এবং ২ বল মোকাবেলা করে কোন রান না করেই অপরাজিত থাকেন। পরে পুরো ৪ ওভার বোলিং করে ৩৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকেছেন মাশরাফি। তবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংসের ১৬ ওভার পর্যন্ত ফাইন লেগে ফিল্ডিং করার সময় ক্রিস গেইলের ক্যাচ শুধুমাত্র এক হাতে (ডান হাত) ক্যাচ লুফেছেন। অথচ চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, অন্তত ৩ দিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) সোমবার গুরুত্বপূর্ণ এলিমিনেটর ম্যাচে মাশরাফি এমন ইনজুরি নিয়ে খেলেও নিজ দল ঢাকার পরাজয় রুখতে পারেননি। ম্যাচশেষে তাই সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির দিকে প্রশ্ন ছুটে গিয়েছিল জীবনের চেয়ে ক্রিকেটটাই বড় কিনা? এর উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘জীবনের থেকে ক্রিকেট অবশ্যই বেশি না। তবে ক্রিকেট জীবনের বড় একটা অংশ।’ ৩৬ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে থাকা মাশরাফির দিকে এখন বারবারই প্রশ্ন ছুটে যাচ্ছে অবসর নেয়ার বিষয়ে। কিন্তু তিনি এদিন জানালেন, এমন প্রশ্নবাণে বিচলিত হন না তিনি বরং যতদিন সম্ভব সামনে আসা খেলাগুলো উপভোগ করতে চান। গত শনিবার রাতের ম্যাচে রাইলি রুশোর শটকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচে পরিণত করতে গিয়ে বাঁ হাতের তালু ফেটে গিয়েছিল মাশরাফির। পরে ১৪ সেলাই দিতে হয়, চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন ৩ দিন আগে এই হাত নিয়ে কিছুই করতে পারবেন না তিনি। কিন্তু মাশরাফি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন এলিমিনেটর ম্যাচ খেলবেন। সত্যি সত্যি হাতে ভারি ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে তিনি টস করতে নামেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে, আর তা দেখে পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক উল্লাসধ্বনি দিয়েছেন। লড়াকু মাশরাফি দলের জন্য আরেকটি আত্মনিবেদনের দারুণ নিদর্শন রাখলেন। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে ৩ দিন অন্তত পূর্ণ বিশ্রামেই থাকতে বলেছিলেন। এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘খেলার সিদ্ধান্ত যখন হাত ফেটেছে, তখনই নিয়েছি। ক্যাচের কথা আসলে ... চলে আসছে, অপশন ছিল না দুই হাত দেয়ার। বলটা একটু আস্তে ছিল, এজন্য আমি সময় পেয়েছি এক হাত দিয়ে ধরার জন্য। খুব দ্রুত এলে কি হতো জানি না।’ ফাইন লেগে ১৬ ওভার পর্যন্ত ফিল্ডিং করেছেন, পুরো ৪ ওভার বোলিং করেছেন আবার শুধু ডান হাত লাগিয়ে ক্যাচ লুফেছেন মাশরাফি। এমন ইনজুরি নিয়েও খেলা প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘জীবনের থেকে ক্রিকেট অবশ্যই বেশি না। তবে ক্রিকেট জীবনের বড় একটা অংশ।’ দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে দুই পায়ে ৮টি জটিল অস্ত্রোপচার ও নানাবিধ ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে খেলা চালিয়ে গেছেন মাশরাফি। এখনও অব্যাহত রেখেছেন খেলা। অথচ ইনজুরির কারণে ২০০৯ সালেই শেষ হয়ে গেছে টেস্ট ক্যারিয়ার, ২০১৭ সালে টি২০ থেকেও নিয়েছেন অবসর। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি ওয়ানডে ক্যারিয়ারেও তেমন সুবিধা করতে পারছেন না, এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলেও ১৩ ম্যাচে মাত্র ৮ উইকেট নিতে পেরেছেন। ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাওয়ায় বারবারই তাই প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট থেকে কবে অবসরে যাবেন মাশরাফি? তাকে এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিদায় দিতে চাইছে। সর্বশেষ রবিবার জানা গেছে, কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মাশরাফি। তবে কি এবার অবসর নিয়েই নেবেন নড়াইল এক্সপ্রেস? ক্রমাগত অবসর নিয়ে প্রশ্ন হতে থাকা প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘আমি তো আগের দিন পরিষ্কার বার্তা দিয়েছি যে নির্বাচকরা যা ভাববে তাই করবে। অধিনায়কত্ব (ওয়ানডের) যদি বিসিবি থেকে এখনই বলে ছেড়ে দিতে, ছেড়ে দেব কোন সমস্যা নেই। আমার সিদ্ধান্ত আমার কাছেই থাকুক। আমি খেলতে চাই কোথায় বলেছি। আমি তো আগের দিনও পরিষ্কার বার্তা দিয়েছিলাম যে আমি ঢাকা লীগ খেলছি, খেলব। বিপিএল আছে, সেখানে খেলব, আমি উপভোগ করছি। এখানে আমি উপভোগ করব। আমার তো মনে হয় না জাতীয় দলের কথা আপনাদের বলেছি। এখানে যারা ৭০-৮০ জন স্থানীয় ক্রিকেটাররা খেলছে তারা কি সবাই জাতীয় দলের আশা করে খেলছে? অবশ্যই না। আমার খেলাটি খেলে যাচ্ছি। জাতীয় দলের কথা যারা এই কেন্দ্রিক যারা আছে তারা ভাববে। এটি (অবসর নিয়ে কথা) তো সবার ক্ষেত্রেই হবে, আজকে যারা সুপারস্টার, আজ থেকে পাঁচ বছর পর তাদেরও এই পরিস্থিতিতে আসতে হবে। এটাই তো জীবন। এখন কথা হচ্ছে যে কেউ হয়তো খুব ভাল অবস্থায় চলে যেতে চায়, চলে যায় আবার কেউ আছে যে খেলাটিকে উপভোগ করছি, খেলতে থাকি। এখন জাতীয় দল না অন্যান্য জায়গায় সেটা একটা বিষয় কাজ করে। আর আমি যেটা আশা করেছিলাম সেটাই হচ্ছে। ক্রিকেট বোর্ডকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ যে তারা চেয়েছে আমাকে অবসর করানোর জন্য। তবে আমি তো আগের দিনও বলেছি যে (মাঠ থেকে অবসর) তেমন ইচ্ছা আমার নেই। যদি আল্লাহতায়ালা তেমন সুযোগ রাখে বা আসে তখন দেখা যাবে। আমার তেমন কোন ইচ্ছা নেই।’
×