ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বোর্ড গঠন দাবি

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

 উপকূলে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে  বোর্ড গঠন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ এবং বিদ্যমান বাঁধগুলো মেরামতের জন্য উপকূলীয় বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছে সুশীল সমাজ। সেই সঙ্গে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য বাজেট বরাদ্দ ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। রবিবার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ দাবি জানান। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনার সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং একই সংগঠনের আরিফ দেওয়ান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদউদ্দিন ছোটন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমরি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, জলবায়ু ফোরামের সভাপতি আশিক ইলাহী, হাতিয়ার রফিকুল ইসলাম এবং সন্দ্বীপের শামসুল ইসলাম। এতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দসহ উপকূলীয় এলাকা থেকে আগত অনেকে বক্তৃতা রাখেন। ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, সীমিত সম্পদ নিয়েও আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছি, তবে এটা এখন স্বল্পমেয়াদে এবং অল্প অল্প করে বাস্তবায়ন করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি স্থানীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি হয় তাহলে তা জনঅংশগ্রহণ, সঠিক সম্পদ ব্যবহার ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত হবে। তিনি উপকূলে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে কার্যকর সমন্বয়ের জন্য উপকূলীয় বোর্ড গঠনের প্রস্তাবও সমর্থন করেন। আশিক এলাহী বলেন, পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় বাঁধের নষ্ট হয়ে যাওয়ার ধরন এবং কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। সেটা বিবেচনা করেই বাঁধগুলো মেরামতের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বাঁধ নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর কার্যকর করতে উপকূল উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠার পাশপাশি বাঁধ ব্যবস্থানায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান। শহীদউদ্দিন ছোটন বড়ঘোপ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, বাঁধ নির্মাণের নক্সা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু পানি প্রবাহের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যার সঙ্গে স্থানীয় জনগণের চাহিদার সঙ্গে খুবই কম সম্পর্ক থাকে। তিনি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পলনার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণ করার পরামর্শ দেন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে আলাদা তহবিল বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে এবং স্থানীয় লাগসই প্রযুক্তিতে বাঁধ নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় খরচ কম এবং কম সময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব। ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি যে, বাঁধ ব্যবস্থাপনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ ও দরপত্র প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়। আর তাই বাঁধ মেরামতের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে না রেখে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে দিতে হবে। রফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ব্যবস্থাপনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বলতার কারণে বাঁধসমূহের উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে এবং জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে তা সাধারণ মানুষের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করে অংশগ্রহণভিত্তিক এবং সঠিক উচ্চতার বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে আরিফ দেওয়ান বলেন, প্রয়োজনীয় বাঁধের অভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকার সুযোগ হারাচ্ছেন এবং বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন যেটা এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমালোচনা করে বলেন, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য একটি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকূলীয় জনগণের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনার ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব আছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের দাবি জানান।
×