ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম কোয়ালিফায়ারে খুলনা-রাজশাহী, এলিমিনেটরে ঢাকা-চট্টগ্রাম

শান্তর শতকে দুর্দান্ত জয় খুলনার

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১২ জানুয়ারি ২০২০

শান্তর শতকে দুর্দান্ত জয় খুলনার

মোঃ মামুন রশীদ \ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) শনিবার রাতে সর্বাধিক রান তাড়া করে ঢাকা প্লাটুনকে হারিয়ে রেকর্ড গড়েছে খুলনা টাইগার্স। ৮ উইকেটে জিতে শীর্ষস্থান দখল করে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে তারা। চলতি আসরে লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুমিনুল হক (৫৯ বলে ৯১) ও মেহেদি হাসানের (৩৬ বলে ৬৮*) ব্যাটিং তান্ডবে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২০৫ রান করে ঢাকা। জবাবে নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত বিস্ফোরক শতকে (৫৭ বলে ১১৫*) ১৮.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২০৭ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় খুলনা। বিপিএলের ইতিহাসে পঞ্চম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি পান শান্ত, আর চলতি আসরে আন্দ্রে ফ্লেচার ও ডেভিড মালানের পর প্রথম দেশী ক্রিকেটার হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। এর আগে বিপিএলে কোন দলই দুই শ’ রান তাড়া করে জিততে পারেনি। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় বিপিএল আসরে মিরপুরেই রংপুর রাইডার্সের করা ১৯৭ রান টপকে ১৯৮ রান করে জিতেছিল সিলেট রয়্যালস। সেটিই ছিল রেকর্ড। এবার নতুন রেকর্ড গড়ল খুলনা। ফলে সোমবার প্রথম কোয়ালিফায়ারে এখন খুলনা খেলবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাজশাহীর বিপক্ষে আর হেরে চতুর্থ স্থানে নেমে যাওয়া ঢাকা একই দিনে এলিমিনেটর ম্যাচে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ২১তম শতক হাঁকালেন শান্ত। তবে বাংলাদেশীদের মধ্যে তিনি মাত্র পঞ্চম। বাংলাদেশের পক্ষে শাহরিয়ার নাফীস (১০২*, ২০১৩) প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন বিপিএলে। পরে মোহাম্মদ আশরাফুল (১০৩*, ২০১৩), সাব্বির রহমান (১২২, ২০১৬) ও সর্বশেষ গত আসরে তামিম ইকবাল (১৪১*) সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এই আসরে আন্দ্রে ফ্লেচার ও ডেভিড মালান সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেটি করে দেখালেন শান্ত। অথচ এই ম্যাচেই ঢাকার মুমিনুল সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ৯১ রান করে। এর আগে মুশফিকুর রহীম ৯৬ ও ৯৮* রান করে শতকের মুখ দেখেননি। চলতি আসরে ব্যক্তিগত সর্বাধিক ১১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন শান্ত। তিনি মাত্র ৫১ বলে শতক পাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ৫৭ বলে ৮ চার, ৭ ছক্কায় এই রান করেন। তার এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১১ বল আগেই রেকর্ড রান তাড়া করে জিতে ইতিহাস গড়ে খুলনা। এই আসরে আগের ৮ ম্যাচে ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ শান্ত কোন হাফসেঞ্চুরিও হাঁকাতে পারেননি, করেছিলেন সাকুল্যে ১১৫ রান। এবার এক ম্যাচেই করলেন ১১৫! টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে পড়ে ঢাকা। দলীয় ৩৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল (১), এনামুল হক বিজয় (১০) ও জাকের আলী অনিক (৭ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ১৪)। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে মাত্র ৩৬ রান তুলতে পারে তারা। তবে এরপর আরেক ওপেনার মুমিনুল ও মেহেদির জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ঢাকা। ১০ ওভারে তারা দলের স্কোরবোর্ডে উইকেট অক্ষত রেখে এনে দেন ৭৩ রান। ইনিংসের দশম ওভারে মেহেদি দুই ছক্কা হাঁকিয়ে মিরাজের বলে তুলে নেন ১৬ রান। এতেই রানরেট একটি ভাল অবস্থানে যায় ঢাকার। ১৫তম ওভারের প্রথম ৩ বলে শফিউলকে দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে চলতি আসরে মুমিনুল নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন মাত্র ৪১ বল থেকে। ওই ওভারে আসে ২১ রান! ফিফটি পেয়েও থামেননি মুমিনুল। বরং আরও ঝড় তুলেছেন। তার তান্ডবে ১৪তম ওভারে দলীয় সংগ্রহ একশ’ পেরিয়ে যায় ঢাকা। মুমিনুল তার বিধ্বংসী রূপ ধরে রাখেন। টি২০ ক্যারিয়ারে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসও খেলে ফেলেন। অপরপ্রান্তে মেহেদিও আগ্রাসন চালিয়েছেন, তবে মুুমিনুলের ইনিংসটা তাঁকে আড়াল করে দিয়েছে। কিন্তু তিনি ৩১ বলেই চলতি আসরে নিজের তৃতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান মেহেদি। অপরদিকে, সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকেন মুমিনুল। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। ১৯তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ আমিরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফ্রাইলিঙ্কের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ৫৯ বলে ৭ চার, ৪ ছক্কায় ৯১ রান করেন মুমিনুল। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা টি২০ ইনিংস। এর আগে তার সেরা টি২০ ইনিংস ছিল মাত্র ৬৪ রানের। মুমিনুল-মেহেদির ১৫৩ রানের চতুর্থ উইকেটের রেকর্ড জুটির ভাঙ্গন ধরে। চতুর্থ উইকেটে এর আগে বিপিএল ইতিহাসে সেরা জুটি ছিল গত বিপিএলে লরি ইভান্স ও রায়ান টেন ডেসকাটের অবিচ্ছিন্ন ১৪৮ রানের। তারা রাজশাহী কিংসের হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে মিরপুরেই করেছিলেন সেই রেকর্ড। ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করে মুমিনুল হতাশা নিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তবে তার ব্যাটিং তান্ডবে দলীয় সংগ্রহ প্রায় দু’শো ছুঁই ছুঁই হয়ে যায় ঢাকার। মেহেদি সেই স্কোর এনে দিয়েছেন দলকে। তিনিও ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন। চলতি আসরেই কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মেহেদি। এবার তিনি ৩৬ বলে ৩ চার, ৫ ছক্কায় ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন। মুমিনুল-মেহেদি তান্ডবে ঢাকা শেষ ১০ ওভারে ১৩২ রান এবং শেষ ৫ ওভারে ৭৬ রান তোলে ঢাকা। এতেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২০৫ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ঢাকা। খুলনার সফলতম বোলার ফ্রাইলিঙ্ক ৪ ওভারে ৩৫ রানে ২ উইকেট নেন। আর সবচেয়ে বেশি পিটুনি হজম করা শফিউল ৪ ওভারে ১ উইকেট নিয়েছেন ৫০ রান খরচা করে। জবাব দিতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে মিরাজ উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। শান্ত শুরুতে কিছুটা ধীরস্থির থাকলেও মিরাজ বিধ্বংসী ছিলেন। ফলে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই ৬০ রান তুলে ফেলে খুলনা। তাদের মারমুখী জবাবে দুশ্চিন্তায় পড়া ঢাকার তাঁবুতে স্বস্তি আনেন মেহেদি। তিনি সপ্তম ওভারে ২৫ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় ৪৫ রান করা মিরাজকে বোল্ড করে দেন। এরপরও রানের গতি কমেনি খুলনার। শান্ত ও রাইলি রুশোর ব্যাটে ঝড় দেখা যায়। তারা দলকে ৯.৪ ওভারেই শতরান পাইয়ে দিয়েছেন। ২৭ বলে চলতি আসরে নিজের প্রথম অর্ধশতক পেয়ে যান ২৭ বলে। এই জুটি দলীয় সংগ্রহকে ১৫০ পেরিয়ে নিয়ে গেছেন ১৪তম ওভারেই। অবশ্য রুশো কঠিন একটি সুযোগ দিয়েছিলেন ১১তম ওভারে। মেহেদির বলে এক্সট্রা কাভারে লাফিয়ে ক্যাচটি ধরতে গিয়ে ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা হাতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। কিন্তু শান্তু ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দেন ঢাকার বোলিং বিভাগ। এগিয়ে যেতে থাকেন শতকের দিকে। রুশো অবশ্য ১৭ বলে২ ছক্কায় ২৩ রান করেই সাজঘরে ফিরেছেন দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সঙ্গে ৪০ বলেই ৮১ রানের জুটি গড়েন। এতেই জয়ের রাস্তা সুগম হয়েছে খুলনার। রুশো সাজঘরে ফেরার পর আরও দুরন্ত হয়ে ওঠা শান্ত ১৫ ও ১৮তম ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে যথাক্রমে ১৪ ও ২০ রান তুলে নিয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান। তাকে সঙ্গ দিয়ে মুশফিক ১০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকে শান্ত-মুশফিক মাত্র ২৮ বলেই ৫৬ রান তুলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই হাসান মাহমুদকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খুলনাকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেন শান্ত। তার টর্নেডো ইনিংসে তুলোধুনো হওয়া ফাহিম ৩ ওভারে ৪৭, হাসান ৩.১ ওভারে ৪৩ এবং থিসারা পেরেরা ১ ওভারে ২০ রান দিয়েছেন। মেহেদি ৪ ওভারে ৩৯ ও শাদাব খান ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট নেন। স্কোর \ ঢাকা প্লাটুন ইনিংস- ২০৫/৪; ২০ ওভার (মুমিনুল ৯১, মেহেদি ৬৮*, জাকের ১৪; ফ্রাইলিঙ্ক ২/৩৫, আমির ১/৩৫)। খুলনা টাইগার্স ইনিংস- ২০৭/২; ১৮.১ ওভার (শান্ত ১১৫*, মিরাজ ৪৫, রুশো ২৩, মুশফিক ১৮*; শাদাব ১/৩২, মেহেদি ১/৩৯)। ফল \ খুলনা টাইগার্স ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা \ নাজমুল হোসেন শান্ত (খুলনা টাইগার্স)।
×