ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকায় গারো কিশোরী ও দুই তরুণীকে ধর্ষণ, এক বাবুর্চি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১২ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকায় গারো কিশোরী ও দুই তরুণীকে ধর্ষণ, এক বাবুর্চি গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ধর্ষণ নিয়ে সারাদেশে রীতিমতো তোলপাড় হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ঢাকায় মাত্র বারো বছর বয়সী এক গারো কিশোরী গণধর্ষণ ও দুই তরুণী এক বাবুর্চির ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তিনজনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন। গারো কিশোরীকে ধর্ষণের পর প্রচ- শীতের মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় নরপিশাচরা রাস্তার ধারে ফেলে যায়। পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় জনতা রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে প্রাণে বেঁচে যায় কিশোরী। কিশোরী গত দুই দিন ধরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই কিশোরী স্বাভাবিক হতে পারেনি। তার ডিএনএ টেস্ট করার আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় চার জনকে অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে চিরুণী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। যদিও শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বাবুর্চি ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার ভাটারা থানা এলাকায় পৈশাচিক এই ঘটনাটি ঘটে। মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ওই কিশোরী পরিবারের সঙ্গে ভাটারা এলাকায় বসবাস করে। পারিবারিক কাজে বাসার বাইরে যায়। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাত ১০টার দিকে সে নিখোঁজ হয়। রাতভর তাকে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরিবারের সব সদস্য সম্ভাব্য সব আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতেও খবর নেয়। কিন্তু কোথাও তার কোন হদিস মিলছিল না। শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে ভাটারা এলাকার একটি রাস্তার মোড়ে ওই কিশোরীকে রক্তাক্ত ও মারাত্মক জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা। তার শরীরের কাপড় চোপড় ছেঁড়া। পরে জনতা কাপড় এনে কিশোরীকে ঢেকে দেন। প্রচ- শীতে কিশোরীর হাত পাসহ পুরো শরীর কুঁচকে পড়েছিল। তার কোন জ্ঞান ছিল না। রাস্তার ধারে মেয়ে পড়ে থাকার খবর পেয়ে কিশোরীর বাড়ির লোকজন সেখানে যায়। তারা গিয়ে কিশোরীকে শনাক্ত করে। পরে তারা জনতার সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। ওসিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার ভাটারা থেকে আনা ওই কিশোরীকে শুক্রবার ভোরে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে ভাটারা থানা পুলিশ হাসপাতালে হাজির হয়। তারা রাতভর কিশোরীর খোঁজখবর নেয়। ওষুধপত্র আনা থেকে শুরু করে অনেক সহায়তা করে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোরী স্বাভাবিক হতে পারেনি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের পর কিশোরীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে। রাস্তার মোড় থেকে এ ব্যাপারে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে ভাটারা থানায় ওই কিশোরীর বড় বোন বাদী হয়ে চারজনকে অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগ মোতাবেক বাড়ির সামনে থেকে ওই কিশোরীকে আচমকা তুলে নিয়ে যায় ধর্ষকরা। পরে তাকে একটি বাসায় নিয়ে হাত, পা, মুখ বেঁধে চারজন ধর্ষণ করে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটার থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) গোলাম ফারুক জনকণ্ঠকে এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ব্যাপারে কিশোরীর বড় বোন সম্ভাব্য ধর্ষকদের বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন। সেই ধারণা মোতাবেক এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য চার ধর্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিরুণী অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই অভিযুক্তরা গ্রেফতার হবে। রাজধানীর রামপুরায় মুশফিক আলম (৩৮) নামে এক বাবুর্চির বিরুদ্ধে দুই কর্মজীবী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই বাবুর্চিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবুর্চিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। শুক্রবার রাতে ওই বাবুর্চির বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই দুই তরুণী। মামলা দায়েরের পর পরই বাবুর্চিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রামপুরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আক্ততারুজ্জামান মুন্সী জানান, ওই দুই তরুণী রামপুরার এক বাড়ির পাঁচতলার একটি মেসে থাকেন। তাদের একজন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ও অন্যজন একটি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। ওই বাড়ির পাশেই একটি বাসায় রান্নাবান্না করে মেসের লোকজনকে খাওয়ানোর কাজ করত ওই বাবুর্চি। দুই তরুণীও ওই বাসায় গিয়ে বাবুর্চির কাছে খাওয়া দাওয়া করতেন। গত ১ তারিখে এক তরুণী ওই বাবুর্চির বাসায় খেতে যায়। এ সময় জোরপূর্বক ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে বাবুর্চি। এর আগেও তরুণীকে একাধিকবার জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ওই বাবুর্চি। লজ্জায় ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে ওই তরণী বিষয়টি কাউকে জানায়নি। গত ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে অপর তরুণী যথারীতি ওই বাসায় খেতে যান। এ সময় জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে বাবুর্চি। বিষয়টি নিয়ে দুই তরুণীর মধ্যে আলোচনা হয়। এরপর তারা বৃহস্পতিবার রাতেই রামপুরা থানায় বাবুর্চির বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারের পরপরই গ্রেফতার করা হয় বাবুর্চিকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই বাবুর্চি দুই তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত বাবুর্চিকে কারাগারে পাঠায়। দুই তরুণী বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন।
×